সোমালিয়ার গারাকাদ উপকূলের ২০ মাইল দূরে সাগরে নোঙ্গর ফেলেছে এমভি আবদুল্লাহ।
Published : 14 Mar 2024, 12:50 PM
ভারত মহাসগরে জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশি পাতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ এবং জিম্মি ২৩ নাবিককে উদ্ধারে বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তৎপরতা শুরু করেছে মালিকপক্ষ।
এমভি আবদুল্লাহর মালিক এস আর শিপিং লাইনের মূল কোম্পানি কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পার্সন মিজানুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে জাহাজটি উদ্ধারে যোগাযোগ স্থাপনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। বিষয়টি এখন সরকারিভাবেও দেখা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় জাহাজটি উদ্ধারের জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে।”
মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাত যাওয়ার পথে মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরের সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিকের সবাইকে জিম্মি করে।
জিম্মি হওয়ার আগেই জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান এবং নাবিকরা জাহাজের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে মালিকপক্ষকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বার্তা এবং ভয়েস মেইল পাঠান। তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করেন।
তবে জলদস্যুরা নাবিকদের মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নতুন করে জাহাজের কারো সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
মিজানুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল (বুধবার) রাত ১১টার দিকে সর্বশেষ এক নাবিকের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, তারা সবাই সুস্থ আছেন। জলদস্যুরা তাদের সাথে কোনো খারাপ আচরণ করছে না এবং খাবার ও পানি দিচ্ছে।”
মঙ্গলবার একজন নাবিকের পাঠানো অডিও বার্তায় বলা হয়, মুক্তিপণ না দিলে জলদস্যুরা তাদের একে একে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। কয়েকটি সংবাদমাধ্যম মুক্তিপণের অর্থের একটি পরিমাণও বলেছে তাদের সংবাদমাধ্যমে।
তবে কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল মিজানুল ইসলাম বলেছেন, জলদস্যুদের সঙ্গে তাদের এখনও সরাসরি যোগাযোগ হয়নি। ফলে মুক্তিপণের যে অংক বলা হচ্ছে, তার কোনো ভিত্তি নেই।
জলদস্যুরা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সেটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সেটি সোমালিয়ার গারাকাদ উপকূলের ২০ মাইল দূরে সাগরে নোঙ্গর ফেলেছে বলে বাংলাদেশ মারচেন্ট মেরিন অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
কবির গ্রুপের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাহাজের বীমাকারী বিদেশি কোম্পানি তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে জলদস্যুদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছে।
“আগেরবার আমাদের যে জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়েছিল, সেটিও যোগাযোগের মাধ্যমে ছাড়িয়ে আনা হয়েছিল। এটা নিয়ে দর কষাকষি করতে হয়। সাধারণত তারা (জলদস্যুরা) কোন জাহাজ ছিনতাই করলে কিছুদিন ঘোরায়। এরপর তারা যোগাযোগ করে।”
এক দশক আগে একইভাবে জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ অপর একটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মনি’। সেই জাহাজটির মালিকও কবির গ্রুপ। নানাভাবে দর কষাকষি করে তিন মাস পর সেই জাহাজ ও জিম্মি নাবিকদের দেশে ফেরানো হয়েছিল সে সময়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বুধবার দুপুরে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিককে উদ্ধারে সোমালি জলদস্যুদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করা যায়নি, তবে চেষ্টা চলছে।
“আমরা সেকেন্ড পার্টির মাধ্যমে চেষ্টা করছি এবং যেখানে জানানো প্রয়োজন, আমরা সেখানে জানিয়েছি।”
জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে বৃহস্পতিবার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।