বোয়ালখালীর পর চট্টগ্রামে ‘ছাত্রলীগের হামলা’

শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে নগরীর নিউ মার্কেট মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2022, 03:31 PM
Updated : 13 August 2022, 03:31 PM

বোয়ালখালীতে ছাত্র ইউনিয়নের মানববন্ধনে ‘ছাত্রলীগের হামলার’ প্রতিবাদে চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট মোড়ে করা সমাবেশে আবারও হামলার অভিযোগ উঠেছে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনটির বিরুদ্ধে।

শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে নগরীর নিউ মার্কেট মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নগরীর শাহ আমানত মার্কেট এলাকা থেকে ছাত্র ও যুব ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের একটি মিছিল নিউ মার্কেট মোড়ে গিয়ে সমাবেশ শুরু করে। এ সময় সিটি কলেজ সড়কের দিক থেকে ২০/২৫ জনের একদল যুবক লাঠিসোটা নিয়ে সমাবেশে হামলা চালায়।

এতে এক সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।

হামলার ঘটনায় আহত দৈনিক ভোরের কাগজের স্টাফ রিপোর্টার প্রীতম দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “সমাবেশ চলাকালীন এক দল যুবক এসে সমাবেশে হামলা শুরু করে। এ সময় মোবাইলে ছবি তুললে হামলাকারীরা আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়।

Also Read: বোয়ালখালীতে ছাত্র ইউনিয়নের মানববন্ধনে ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ

“হামলাকারীদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আমার পরিচয়পত্র দেখানোর পরও তারা সেটি নিয়ে ভেঙে ফেলে এবং মাটিতে ফেলে মারধর করে।”

এ সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না বলে অভিযোগ করেন সাংবাদিক প্রীতম।

ছাত্র ও যুব ইউনিয়নের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে হামলাকারীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম জেলা যুব ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পদক জাবেদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, “সকালে বোয়ালখালীতে ছাত্র ইউনিয়নের মানববন্ধনে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ছাত্র ও যুব ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগ আমরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দিয়েছিলাম।

“বেলা সাড়ে পাঁচটার দিকে শাহ আমানত মার্কেট থেকে মিছিল নিয়ে নিউ মার্কেট মোড়ে গিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। এ সময় সিটি কলেজের দিক থেকে ২৫/৩০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে সমাবেশ পণ্ড করে দেয়।”

জাভেদের ভাষ্য, ‘ছাত্রলীগের হামলায়’ তিনিসহ কেন্দ্রীয় যুব নেতা সাকারাত হোসেন সেবক, চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এনি সেন, সাংগঠনিক সম্পাদক টিকলু দাশসহ ১০ নেতা-কর্মী আহত হন।

কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ছাত্র ইউনিয়নের ছেলেরা বিকালে মিছিল করে সরকার ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য ও স্লোগান দেওয়া শুরু করে।

“এ সময় ছাত্রলীগের একদল কর্মী গিয়ে সেটার প্রতিবাদ করলে দুই পক্ষ হাতাহাতিতে জড়িয়ে যায়। এ সময় ছাত্র ইউনিয়নের চারজন আহত হয়েছে।”

হামলার সময় পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “ঘটনার সময় পুলিশ উপস্থিত ছিল না। হাতাহাতির খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে গাড়িতে করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়।”

আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নিজেদের মত করে চলে গেছেন জানিয়ে পরিদর্শক আতিক বলেন, “তারা যদি মামলা করে, তাহলে মামলা নেওয়া হবে।”

চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের রাজনীতি মূলত সিটি কলেজ ও এমইএস কলেজ বলয়ের মধ্যে। সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু সিটি কলেজ বলয়ের রাজনীতি করেন।

হামলার পর তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরবর্তীতে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন।

নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাত্র ইউনিয়ন ও আমাদের সাথে আদর্শিক কোনো বিরোধ নেই। নিউ মার্কেট মোড়ে তো অনেক দলেই সমাবেশ করে। তাদের ওপর কেন হামলা হবে? বিষয়টি নিয়ে আমি জ্ঞাত নই।”

আহতদের চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এর আগে সকালে বোয়ালখালী উপজেলার কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের শিক্ষক, শ্রেণি কক্ষ সংকটসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে করা মানববন্ধনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে।

এ সময় ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীরা আহত হন। তাদেরকে হামলাকারীদের কাছ থেকে ছাড়াতে গিয়ে আহত হন উপজেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক অনুপম বড়ুয়া পারু ও দক্ষিণ জেলা যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন সাইফু।