এতে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। তবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
Published : 15 Oct 2022, 12:28 PM
অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে চট্টগ্রামে দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। অগ্নিকাণ্ডে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। তবে আগুন কীভাবে লাগল, তার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আমদানি করা জ্বালানি তেল চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় স্থাপিত সরকারি এই শোধনাগারে পরিশোধনের পর সারাদেশে সরবরাহ করা হয়।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে ওই শোধনাগারে পাইপ লাইনে আগুন লাগে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তা নেভানো হয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) আবদুল হামিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “(রিফাইনারির) মিটারিং সেকশন নামক অংশে কোনো কারণে আগুন লেগে যায়। দ্রুতই আমরা তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। আগুন ১২টা ২৫ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আসে। ১২টা ৪৫ মিনিটে পুরোপুরি নির্বাপন সম্ভব হয়েছে।”
তিনি বলেন, “যেখানে আগুন লেগেছিল, ওই অংশে একসাথে ৭০-৮০টা ছোট ছোট পাইপ ছিল। এটা একটা জংশনের মতো। পাশেই তেলের একটা পিটে আগুন লাগে।”
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের বন্দর, পতেঙ্গা, ইপিজেড, আগ্রাবাদ এই ৪টি ইউনিটের কর্মীরা ৭টি গাড়ি নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিটারিং সেকশনের পাশের একটি পিটে আগুন লাগে। আগুনে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। অল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।”
অগ্নিকাণ্ড তদেন্ত সাত সদস্যের একটি কমিটি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জিএম (অপারেশন্স অ্য্ন্ড প্ল্যানিং) রায়হান আহমাদকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
“আশা করছি, আজ বিকেলের মধ্যেই তারা তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। তখন জানা যাবে, কেন-কীভাবে আগুন লেগেছিল।”
অগ্নিকাণ্ডের পর দুপুরে ইস্টার্ন রিফাইনারি পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-বিপিসি’র পরিচালক (অপারেশন্স ও পরিকল্পনা) খালিদ আহম্মেদ।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সিসিটিভি আছে এখানে। অন্যান্য যারা প্রত্যক্ষদর্শী আছেন, এখানে তাদের সাথে কথাবার্তা বলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কারণ উদঘাটন করে আমাদের জানাবে। আমরা জানলে আপনাদের জানাব।”
ওয়েল্ডিংয়ের কাজের সময় আগুন লাগে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটি ইআরএলে এর মূল স্থাপনায় কোনো আগুন নয়। এটি এসপিএম প্রজেক্টে পাইপলাইন টার্মিনাল ফ্যাসিলিটিজ যেটা, ওটার ডেভেলপমেন্ট কাজ চলছিল।
“টেকনিক্যাল নো হাউ যাদের আছে, তারা দেখবেন কেন আগুন লেগেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর কুলিং করার জন্য সার্বক্ষণিক পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে উত্তাপজনিত কারণে আবার কোনো ঘটনা না হয়।”
ইআরএলের কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে জানিয়ে খালিদ বলেন, “একটা পিটে আগুন লাগে। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড এবং ইআরএল এর ফেন্সিং এর মাঝামাঝি অংশে আগুন লাগে। মূল প্ল্যান্ট থেকে অনেক দূরে ঘটনাস্থল।”
আগুনে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি জানিয়ে তিনি বলেন, “ইআরএল এর নিজস্ব ফায়ার সেফটি ব্যবস্থা খুবই আধুনিক। যখনই কোনো কাজ হয় ইন্টারনাল ফায়ার ফাইটাররা প্রস্তুত থাকেন। ঘটনা ঘটার সাথে সাথে তারা ব্যবস্থা নিয়েছে। ফলে একেবারেই নূন্যতম ক্ষয়ক্ষতিতে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।”
বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে (ইআরএল) প্রথম বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬৮ সালের ৭ মে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ করা হয়। ইআরএলের একমাত্র ইউনিটটির বার্ষিক পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন।
১৯৭৪ সালে পেট্রোবাংলা প্রতিষ্ঠিত হলে ইআরএলকে এর অধিভুক্ত করা হয়। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) প্রতিষ্ঠা করা হলে ইআরএল এর ৭০ শতাংশ শেয়ারসহ বিপিসির অংগসংগঠন হিসেবে অধিভুক্ত হয়।