গত শুক্রবার বিকাল থেকেই ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেখানে, ইতোমধ্যে ফেরির টোলও নির্ধারণ করে দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
Published : 23 Jul 2023, 01:48 PM
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ শুরুর আগে সংস্কারের জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কালুরঘাট সেতু; কর্ণফুলীর ওই অংশ পারাপারের জন্য আপাতত ফেরির ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা জানান, আগামী সপ্তাহে কালুরঘাট সেতু সংস্কারের কাজ শুরু হবে। তখনই সেতুতে যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সেজন্য গত শুক্রবার বিকাল থেকেই ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেখানে, ইতোমধ্যে ফেরির টোলও নির্ধারণ করে দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সরকারের এ দপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সেতু এখনও বন্ধ না করায় ফেরি দিয়ে কোনো যানবাহন এখনও পারাপার হয়নি।
দুটি ফেরি উভমুখী চলাচল করবে এবং একটি ফেরি স্ট্যান্ডবাই থাকবে বলে জানান তিনি।
ফেরিতে যানবাহন পারাপারে আকার ভেদে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ টাকা থেকে ৫৬৫ টাকা।
সওজ জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি ৫৬৫ টাকা টোল দিতে হবে ট্রেইলার পারাপারেরজন্য। বড় ট্রাক ও কভার্ড ভ্যানে ৪৫০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে ২২৫ টাকা, মিনি ট্রাকে ১৭০ টাকা দিতে হবে।
বড় বাস পারাপারে ২০৫ টাকা; মিনি বাস ও কোস্টারে ১১৫ টাকা; মাইক্রোবাস, পিকাপ, জিপ ৯০ টাকা; কার ৫৫টাকা; ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার ১৩৫টাকা; তিন চাকার অটোরিকশা ২৫টাকা; মোটর সাইকেল ১০ টাকা এবং রিক্সা, ভ্যান, বাইসাইকেল ৫টাকা দিতে হবে।
নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে ফেরি চলানোর জন্য কোনো ইজারাদার নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সওজের পক্ষ থেকে তা চালানো হবে। পরে ইজারাদার নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একাংশের যোগাযোগের মাধ্যম এই কালুরঘাট সেতু। সড়ক পথের সব ধরনের যানবাহনের পাশাপাশি এ সেতু দিয়ে ট্রেনও চলে। চট্টগ্রাম থেকে যখন কক্সবাজারে ট্রেন যাবে, এই কালুরঘাট সেতু দিয়েই কর্ণফুলী পার হতে হবে।
আগামী সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ চালুর আশা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কক্সবাজারে রেলস্টেশন নির্মাণসহ প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
কিন্তু প্রায় শতবর্ষী এ সেতু ছিল রেল চালুর ক্ষেত্রে মাথাব্যথার বড় কারণ। সেজন্যই সেতুটি সংষ্কারের উদ্যোগ নেয় রেল কর্তৃপক্ষ।
১৯৩০ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় ৭০০ গজ দীর্ঘ কালুরঘাট রেল সেতু। ১৯৫৮ সালে এ সেতু সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার।
এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি রুটে চলাচল করে দুই জোড়া ট্রেন। দোহাজারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফার্নেস ওয়েল আনা-নেওয়ার জন্যও ট্রেন চলে এই সেতু দিয়ে।
১৯৯০ এর দশকে চট্টগ্রাম দোহাজারী রুটে ট্রেন চলাচল সীমিত হয়ে পড়লে কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচলে চাপ বাড়ে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু ভেঙে গেলে কালুরঘাট সেতু হয়ে পড়ে বন্দরনগরীর সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয়টি উপজেলা ও কক্সবাজার, বান্দরবান জেলার যোগাযোগের অন্যতম রাস্তা।
২০১০ সালে তৃতীয় শাহ আমানত সেতু উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত কালুরঘাট সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচলের কারণ সেতুটি আরও নাজুক হয়ে পড়ে।
২০০১ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফা সেতু বন্ধ রেখে সংস্কার করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ। সে সময়ও অন্যান্য যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরি চালু করা হয়েছিল।