Published : 06 May 2025, 03:37 PM
ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩ মের মহাসমাবেশে দুই বক্তার ‘আপত্তিকর’ শব্দচয়নের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমাদের মহাসমাবেশে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দুজন বক্তা আপত্তিকর শব্দচয়ন করেছেন, যা আমরা সমর্থন করি না। কেউ এতে আহত হলে তাদের প্রতিও আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি।”
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নারী সংস্কার কমিশন গত ১৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর থেকেই ধর্মভিত্তিক দলগুলো এর বিরোধিতা করে আসছে।
ইসলামি উত্তরাধিকার আইন ও ইসলামি পারিবারিক আইন নিয়ে যে পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ কমিশন দিয়েছে, তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে ইসলামি দলগুলোর।
এছাড়া শ্রম আইন সংশোধন করে যৌনকর্মীদের মর্যাদা ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার সুপারিশ নিয়েও দলগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে।
নারী সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে গত শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। সেখানে অনেক বক্তাই নারীর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য দেন।
একজন বক্তা নারী কমিশনকে ‘বেশ্যা কমিশন’ আখ্যায়িত করেন। আরেকজন বলেন, ‘অবৈধ সন্তানকে স্বীকৃতি দিতে’ কমিশন যৌনকর্মীদের স্বীকৃতির দাবি তুলেছে।
জনসম্মুখে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ায় হেফাজতে ইসলামকে উকিল নোটিস দিয়েছেন ছয় নারী, যাদের মধ্যে তিনজন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির নেত্রী এবং বাকিরা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজন।
সেখানে বলা হয়, “নারীদের প্রতি হেফাজতের প্রকাশ্য বিদ্বেষমূলক মন্তব্য, বিশেষ করে মাইকে নারীকে ‘বেশ্যা’ বলে গালি দেওয়া, কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
দুই বক্তার শব্দচয়ন নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে মঙ্গলবার হেফাজতে ইসলামের বিবৃতিতে আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, “নারীর প্রতি আমাদের ঘৃণার প্রশ্নই আসে না। মতাদর্শিক লড়াইকে ‘নারীর প্রতি ঘৃণা’আকারে দেখাটা স্রেফ মুর্খতা। আমরা আবারও বলছি, যার যার ধর্মীয় বিধান অনুসারে নারীর ন্যায্য অধিকার রক্ষায় আমরাও সংস্কারকাজে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী।“
অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে এই নারী সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, তা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব।
“শুরুতেই আলেম-ওলামা ও অন্যান্য ধর্মীয় বিশেষজ্ঞকে বাদ দিয়ে একদল এনজিওবাজ নারীবাদীকে নিয়ে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করা হলো। যার ফলে এমন একচেটিয়া প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে, যেখানে সেক্যুলার প্রগতিশীল নারীসমাজের স্বার্থ ও মতাদর্শ রক্ষিত হলেও ধর্মপ্রাণ বৃহত্তর নারীসমাজের ধর্মীয় চিন্তা ও বিবেচনা উপেক্ষিত হয়েছে। এই বৈষম্য মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই।”
তিনি বলেন, “উগ্র ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠী কর্তৃক আমাদের ‘নারীবিদ্বেষী’ অপবাদ দেয়ার অপরাজনীতি বহু পুরনো। অথচ দেশজুড়ে আমাদের মহিলা কওমি মাদরাসাগুলোতে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য হারে ছাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি বরাদ্দমুক্ত এসব মাদরাসায় সমাজের হাজার হাজার প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের জন্যও বিনামূল্যে থাকা-খাওয়া, নিরাপত্তা ও ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
“ফলে এদেশের নারীদের স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধিতে আমাদেরও উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। কিন্তু কখনো আলেম-ওলামার সামাজিক অবদানের স্বীকৃতি দেয়া হয় না।”
আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, “আমাদের এই সামাজিক ভূমিকা ও ধর্মীয় অবস্থান আধুনিক ব্যবস্থায় এদেশের নারীকে ‘পণ্য’বানানোর পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নের অন্তরায় বলেই সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী আমাদের বিরুদ্ধে একদল উগ্র নারীবাদীকে লেলিয়ে দিয়েছে বলে আমরা মনে করি। কিন্তু ধর্মীয় ইস্যুতে বাড়াবাড়ি করলে আমরা ছাড় দেব না।”
সেই সঙ্গে তিনি ‘সেক্যুলার প্রগতিশীলদের’ হুঁশিয়ার করে বলেন, “যারা এতকাল আলেম-ওলামাকে বিদ্বেষমূলকভাবে ‘জঙ্গি, ‘মৌলবাদী, ‘ধর্মব্যবসায়ী’ ও ‘সাম্প্রদায়িক’বলে কটাক্ষ করে এসেছেন, তাদেরকেও আমরা এ ধরনের আপত্তিকর শব্দচয়ন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই। আর শাপলা চত্বরের গণহত্যায় আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শক্তিকে কারা উৎসাহ দিয়েছিল তা আমরা ভুলে যাইনি।”
নারীর প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য: হেফাজতকে ৬ নারীর আইনি নোটিস