উপদেষ্টা বলেন, “এখন রাতের বেলায় পাহাড় কাটে। রাতে আমরা লোক পাঠালে সে রাতে বন্ধ থাকে এবং দুই রাত পর আবার কাটে।”
Published : 26 Feb 2025, 08:33 PM
পাহাড় কাটা নিয়ে ‘টম অ্যান্ড জেরি’র খেলা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেছেন, “জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে, পাহাড় কাটলে দয়া করে শ্রমিককে কেউ গ্রেপ্তার করবেন না। গ্রেপ্তার করবেন মালিককে। যদি দুই একজন মালিকের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, দেখবেন পাহাড় কাটা কমে এসেছে।”
বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গবেষণা ও উদ্ভাবন মেলার’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সামনে এ কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, “এখন রাতের বেলায় পাহাড় কাটে। রাতে আমরা লোক পাঠালে সে রাতে বন্ধ থাকে এবং দুই রাত পর আবার কাটে। সারাক্ষণ টহল দিয়ে রাখবার মত সামর্থ্য তো আমাদের নেই।”
রিজওয়ানা মনে করেন, “দুই একটা পাঁচ ছয়টা জায়গায় যদি আমরা শক্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারি, তাহলে অন্যরা নিরুৎসাহিত হবে। সেটা সরকারে আসার পরও চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং সরকারে যখন ছিলাম না তখনও চেষ্টা করেছি।”
পাহাড় কাটা নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম চত্বরে অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানেও কথা বলেন পরিবেশ উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “যদি পাহাড় চলে যায় তাহলে চট্টগ্রাম আর থাকল কেমন করে। যেটুকু পাহাড় আছে সেটুকু বাঁচানো আমাদের সকলের দায়িত্ব। ডিসি মহোদয় একটা ভালো কাজ করেছেন। এ শহরকে তিনি ছয়টি জোনে ভাগ করেছে। সেখানে একেকটি করে কমিটি কাজ করবে।
‘যেখানে কোনো পাহাড় কাটা হবে, সেখান থেকে উনাকে খবর পৌঁছানো হবে। উনার দায়িত্ব কিন্তু এবার থেকে মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা। মালিককে সত্যিকার অর্থে গ্রেপ্তার করা এবং আইনের মুখোমুখি করা। আমি দেখব, মালিক গ্রেপ্তার হলে পাহাড় আর কাটা হয় কিনা।”
রিজওয়ানা বলেন, “চট্টগ্রামে বন আছে, সমুদ্র আছে। এরকম একটা শহর বিশ্বে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। এখানে সবকিছু একসাথে আছে। এসবকে জাতীয় ঐতিহ্য, গৌরব ও সম্পদ হিসেবে রক্ষা করতে হবে।
“প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে উন্নয়নের কথা চিন্তা করি। প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে কেউ জিততে পারেনি। একটা পাহাড় কাটলে সেই পাহাড় কি বানিয়ে দিতে পারবেন? একটা গাছ কাটলে রোপন করা যাবে, কিন্তু পাহাড় তো বানানো যাবে না। যেখানেই পাহাড় কাটা দেখবেন ডিসিকে জানাবেন। দেখবেন, ওই মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করে কিনা। না হয় মেয়র মহোদয়কে হোয়াটস অ্যাপে জানাবেন, আমরা যোগাযোগ করে ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করব।”
পলিথিনের পরিবর্তে সরকার পাটের ব্যাগ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই পাটের দাম বাড়ছে বলে তথ্য দেন উপদেষ্টা।
জুট মিলে প্রস্তুত করা ব্যাগ সরবরাহের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা বলেন, টেকসই চটের ব্যাগ তৈরি এবং ‘আগেকার দিনগুলোতে’ কীভাবে ফেরত যাওয়া যায়, সে বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ জুট মিল মালিকদের বৈঠক হয়েছে।
“আমরা যখন ঠিক করেছি পলিথিন ব্যাগের বিকল্প পাট, তখন যে পাটের বেইলের মূল্য ছিল ২৮ টাকা, সেটা তারা করে দিয়েছে ৪০ টাকা। এটাই তো বাংলাদেশ, এর মাঝে সাঁতার কেটে কেটে চলতে হবে।”
তিনি বলেন, “পলিথিনের বিকল্প পাট আর চট। মাছ মাংসের বাজারে এসব ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেতে আমরা দ্বিধান্বিত। সে কারণে মানুষ এখন পলিথিন নিয়ে যায়। কারণ সবাই মনে করে ওটা সস্তা।”
পলিথিনও সস্তা নয় মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, “বিভিন্ন রকমের বাজারের জন্য যেখানে ২০টা পলিথিন লাগে, সেখানে একটা চটের ব্যাগ নিতে পারেন। মাছ মাংসের ক্ষেত্রে আমরা যেটা দেখিয়েছি, কাগজের ব্যাগে যদি মোম লাগানো থাকে সেটা ব্যবহার করা যাবে, এটা অস্বাভাবিক কিছু না।”
বিষয়টি নিয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাথেও কাজ করার কথা বলেন রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, “যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় পাট ও কাপড়ের ব্যাগ তৈরির জন্য বিভিন্ন জেলায় যুবকদের প্রশিক্ষণ দেবে। সঙ্গে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় পাট এবং কাগজের ব্যাগ দেওয়ার জন্য আমাদের সাথে কাজ করবে।”
১৯ ধরনের পণ্যে পাটের মোড়ক ব্যবহারের আইনের কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, “সে আইনটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। এখন আমরা ছয়টা পণ্যকে চিহ্নিত করেছি। এ ছয়টা পণ্য দিয়ে পাটের মোড়কের যে আইনটা আছে সেটা আমরা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করব।”
এখন পরিকল্পনা করলে আগামী অগাস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে জুটমিলগুলো সরকারকে চটের ব্যাগ সরবরাহ করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “জুটমিলগুলোর সক্ষমতা কী, তারা কতটুকু আমাদের সরবরাহ করতে পারবে, সেখানে সরকারের কতটুকু সহায়তা দরকার এবং মনিটরিং লাগবে, সেটা আমরা ঠিক করব।”
চট্টগ্রামের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণাকর্ম ও উদ্ভাবনকে এক প্ল্যাটফর্মে উপস্থাপনের লক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ‘জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের’ উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মত এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি অনুষদের ৪৭টি বিভাগ, ৩৫টি গবেষণাগার এবং বিভাগের ১৫টি গবেষণা ইনস্টিটিউট অংশ নেয়।
এছাড়া চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করে।
মেলার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার।