মিলিটারি পুল ও জিরিতে জুয়ার আসর বসানোসহ বিভিন্ন কারণে পটিয়ার সাধারণ জনগণের বড় অংশ হুইপের ওপর ক্ষুব্ধ বলে উল্লেখ করেন নৌকার প্রার্থী।
Published : 31 Dec 2023, 07:11 PM
চট্টগ্রাম-১২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হুইপ সামশুল হক চৌধুরীকে ‘ডিগবাজ‘ আখ্যা দিলেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পাওয়া মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।
পটিয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারে দুই দফায় হামলার পরদিন রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করতে এসে নিজ দলের বর্তমান সংসদ সদস্যকে নিয়ে অভিযোগের ফিরিস্তি তুলে ধরেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল।
শনিবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণায় হামলার ঘটনাকে তার কর্মফল হিসেবেও তিনি উল্লেখ করেন সংবাদ সম্মেলনে।
লিখিত বক্তব্যে নৌকার প্রার্থী বলেন, “শুধু চট্টগ্রামের পটিয়া নয় সারাদেশের মানুষের কাছে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিশেষ পরিচিতি আছে। রাজনীতিতে তিনি ‘ডিগবাজ’ হিসেবে চিহ্নিত। তার উত্থান থেকে এ যাবতকালের কাহিনী আপনারাই গণমাধ্যমে প্রকাশ করে আসছেন।
“এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড এবং দলীয় সভানেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন। আমি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর পুলিশ প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে তিনি নানা দুরভিসন্ধিমূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এসব নিয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।‘‘
মোতাহেরুল ইসলাম বলেন, “গত ১৫ বছরে বর্তমান স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের এমপি থাকলেও দলের জন্য কোনো কিছুই করেননি। সরকারি প্রকল্পের নয়-ছয় এবং নানা অবৈধ পন্থায় নিজের অবৈধ আয়ের পথ প্রসারিত করেছেন। বিশেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুই প্রকল্পের কয়েক হাজার কোটি টাকার খাল খনন, বেড়িবাঁধ নির্মাণ, পটিয়া বাইপাস সড়ক, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের পটিয়া অংশের সম্প্রসারণ, চট্টগ্রাম ওয়াসার ওয়াটার রিজার্ভার, কৈয়গ্রাম-উজিরপুর বঙ্গবন্ধু সড়ক প্রকল্পের নামে পটিয়ার হাজার হাজার মানুষকে পথে বসিয়েছেন।
“রাতারাতি মানুষের বসতভিটা এবং চাষের জমি দখলে নিয়ে কোনো ক্ষতিপূরণ দেননি। মানুষের জমির মাটি কেটে বিক্রির টাকা নিজেদের পকেটে ঢুকিয়েছেন। এসবের ক্ষতিপূরণ চাইতে গিয়ে তার লাঠিয়াল বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। কোলাগাঁও ও চরকানাই শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করত তার ছোটভাই নবাব ও অন্যান্য আত্মীয়রা।”
হুইপের ভাইয়েরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জায়গা-জমি দখলের জন্য ভূমিদস্যু চক্র গড়ে তুলেছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে মোতাহেরুল বলেন, “তাদের চক্রে পড়ে অনেক সংখ্যালঘু পরিবার আজ নিঃস্ব। তার পরিবারের সদস্যরা পটিয়াকে মাদকের স্বর্গরাজ বানিয়ে ফেলেছে। মাদকের একটি সিন্ডিকেট এই পরিবারের নিয়ন্ত্রণে।”
এছাড়া তার পুত্রের তত্ত্বাবধানে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ছোট লিটনের নেতৃত্বে পটিয়ার মিলিটারি পুল ও জিরিতে জুয়ার আসর বসানোসহ বিভিন্ন কারণে পটিয়ার সাধারণ জনগণের বড় অংশ হুইপের ওপর ক্ষুব্ধ উল্লেখ করে নৌকার প্রার্থী বলেন, “সে কারণে এবার দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় ভোট চাইতে গিয়ে সাধারণ মানুষের তোপের মুখে পড়ছেন এবং ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
‘ধুরন্ধর‘ স্বতন্ত্র প্রার্থী এসব ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের ঘটনার দায়ভার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর চাপাচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “যার সাথে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অথচ বিভিন্ন উপায়ে তিনি দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে, আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও বিষোদগার করে চলেছেন। যদিও তিনি এখনও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য।”
ব্যক্তি স্বার্থের জন্য তিনি দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে নিজের ‘ডিগবাজ‘ মুখোশ বারবার উন্মোচন করে চলেছেন উল্লেখ করে মোতাহেরুল ইসলাম বলেন, তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর যা হচ্ছে তা হচ্ছে তার কর্মের ফল।
পটিয়া আসনের তিনবারের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে এবারে স্বতন্ত্র হিসেবে ঈগল প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তার বদলে দলের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় বিভিন্ন সময়ে হামলা ওভাংচুরের ঘটনা ঘটছে।
সর্বশেষ পটিয়ার শান্তিরহাট ও জিরি এলাকায় শনিবার সকালে ও সন্ধ্যায় প্রচারণার সময় দুই দফায় হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন এ হামলা করেছে বলে হুইপের পক্ষ থেকে অভিযোগ।
হামলার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে মোতাহেরুল ইসলাম বলেন, “শান্তিরহাট জিরি মাদ্রাসা এলাকায় শনিবারের ঘটনাটিও ক্ষোভের কারণ। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক সম্প্রসারণের সময় শান্তিরহাটের ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎ করায় ক্ষুব্ধ হন এলাকাবাসী। এ কারণে তার গাড়ির বহর আটকে রাখে। এখানে গাড়ি ভাঙচুর বা গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেনি এবং পুলিশ সরজমিনে কোনো আলামত পায়নি। গুলিবিদ্ধের ঘটনা হলে বুলেটের খোসা কোথায়- এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পুলিশও।
নিজেরাই নিজেদের গাড়ি ভাঙচুর করে আওয়ামী লীগ ও নৌকার সমর্থকদের মামলায় জড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে অভিযোগ করে তিনি নির্বাচন সামনে রেখে স্বতন্ত্র প্রার্থী হুইপের প্রটোকল সুবিধা স্থগিত এবং তার পুত্রের অস্ত্র থানায় জমা নেয়ার অনুরোধ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম চৌধৈুরী ও চেমন আরা তৈয়ব, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আইয়ুব আলী ও মোহাম্মদ নাছির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাশ, পটিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. তিমির বরণ চৌধুরীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।