“কিন্তু বাংলাদেশে কোস্টাল ফেরির প্রভিশন নেই, এটা আমাদের আনতে হবে,” বলেন তিনি।
Published : 24 Mar 2025, 12:48 PM
চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ সমুদ্রপথে নিয়মিত যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে ‘কোস্টাল ফেরি’ প্রয়োজন বলে মনে করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন ।
সোমবার সকাল ১০টায় উদ্বোধনী ফেরিতে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে নেমে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে সকাল সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ঘাটে এ ফেরি সেবা উদ্বোধন করেন তিনি।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “সন্দ্বীপ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। এর সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে। এতদিন এখানে যোগাযোগে বঞ্চিত করা হয়েছে, যা অন্যায়।
“আজ ফেরি চলাচল শুরু হলো। তবে এটা কন্টিনিউ করতে কিছু সমস্যা আছে। এখানে যে চ্যানেল তা নিয়মিত ড্রেজিং করতে হয়; বছর বছর ড্রেজিং প্রয়োজন।"
সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ পথে চলাচলের মধ্য দিয়ে দেশে প্রথমবারের মত সমুদ্রপথে ফেরি চলাচল শুরু হল।
বর্ষায় এই পথে সি ট্রাক চলাচল করানো হবে জানিয়ে নৌপরিবহন বলেন, “বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান বলেছেন, তারা সি ট্রাক দিবেন। কিন্তু সি ট্রাকে এত মালামার বা গাড়ি নেওয়া সম্ভব হবে না।
“এখানে কোস্টাল ফেরি প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে কোস্টাল ফেরির প্রভিশন নেই। এটা আমাদের আনতে হবে। আপনাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।"
সন্দ্বীপের সন্তান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “নৌপরিবহন উপদেষ্টা ও বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান এই কঠিন কাজকে সফল করেছেন। তারা এই চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। কঠিন কাজ বলেই এতদিন হয়নি।
“তবে এটা এখনো চলমান কাজ। সারা বছর যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে হলে কোস্টাল ফেরি লাগবে।"
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ফেরি কপোতাক্ষ দিয়ে সোমবার সন্দ্বীপে ফেরি চলাচল শুরু হয়। সোমবার সকাল ৯টায় সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া থেকে ফেরিটি ছেড়ে এক ঘণ্টায় সন্দ্বীপের গুপ্তছড়ায় পৌঁছায়।
ফেরি যখন গুপ্তছড়ায় পৌঁছায়, তখন ফেরিঘাটে হাজার হাজার দ্বীপবাসী উৎসাহ নিয়ে ফেরিটিকে স্বাগত জানায়।
সন্দ্বীপের সন্তোষপুর উপজেলার বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন মন্টু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৩০ টাকা যখন বোট ভাড়া ছিল, তখনও গেছি। কখনো বিপদে পড়ে ৫০০ টাকা দিয়েও পার হয়েছি। আজ ফেরি চলার শুরু হলো। এর থেকে খুশির আর কিছু নেই।”
ফেরির যাত্রী হেলাল বলেন, “আমাদের পরিবার একসময় সন্দ্বীপে ছিল। বারবার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারিতে থাকি। অনেক কষ্ট ছিল। মা বোনের বেশি কষ্ট হত। আজ থেকে কষ্ট আর থাকবে না।”
এর আগে ফেরিতে উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন দ্বীপের বাসিন্দারা।
এসব দাবির মধ্যে আছে- দ্বীপের চর্তুদিকে ব্লক বেড়িবাঁধ ও ডাবল লাইন রিং রোড করা, ফেরিঘাটের উভয় প্রান্তে সড়ক প্রশস্ত করা, হারামিয়া ২০ শয্যার হাসপাতালকে ৩১ শয্যায় উন্নীত করা, দক্ষিণ সন্দ্বীপের চিকিৎসা কেন্দ্রকে ১০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা এবং উড়িরচরের ইউনিয়ন চিকিৎসা কেন্দ্রকে ১০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা।
সাগর বক্ষের দ্বীপ সন্দ্বীপের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ফেরি সার্ভিস চালু করা। এরআগে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও তা সফল হয়নি।
উত্তাল এই সাগর পথে স্পিডবোট ও ট্রলারসহ বিভিন্ন নৌযানে চলাচল করতে হয় দ্বীপের বাসিন্দাদের। তাতে বৈরী আবহাওয়ায় দুর্ঘটনার মুখে পড়ে বহু প্রাণ গেছে।
তাছাড়া বৈরি আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন রোগীরা। সাগর পাড়ি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য অসুস্থ লোকজনদের মূল ভূখণ্ডে আনা সম্ভব হয় না।
তাছাড়া জোয়ার ভাটার কারণে বেশিরভাগ সময় নৌযান থেকে নেমে কাদা মাড়িয়ে ঘাটে পৌঁছাতে হয় সন্দ্বীপবাসীকে।
ফেরির সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা-সন্দ্বীপ রুটে বিআরটিসির বাস চলাচলও উদ্বোধন করা হয়। সোমবারই চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট-সী বিচ- নিমতল-নয়াবাজার-কুমিরা-বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট- সন্দ্বীপ এনাম নাহার মোড় রুটে এসি বাস সার্ভিস চালু করেছে বিআরটিসি।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারও উপস্থিত ছিলেন এসময়।