মারধরের শিকার প্রকল্প পরিচালক ফেরেননি, নতুন কাউকে চান চট্টগ্রামের কাউন্সিলররা

প্রকল্প পরিচালক না থাকায় বড় এই প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2023, 03:58 PM
Updated : 24 May 2023, 03:58 PM

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আড়াই হাজার কোটি টাকার এক প্রকল্পের পরিচালক মারধরের শিকার হওয়ার পর অফিসে আসেন না চার মাস ধরে; কাজ থামকে থাকায় তার জায়গায় নতুন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে ওয়ার্ড কাউন্সিলররা।

বুধবার সিটি করপোরেশনের ২৮তম মাসিক সাধারণ সভায় প্রকল্প পরিচালকের বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে নগরীর আন্দরকিল্লায় পুরনো নগর ভবনে এই সাধারণ সভা হয়।

লালখান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনাকাঙ্ক্ষিত সেই ঘটনার পর একদিনও প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানী অফিসে আসেননি। সেই ঘটনার জন্য মেয়র মহোদয় এবং আমরা সকলেই দুঃখ প্রকাশ করেছি। জড়িত ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি আর না আসায় প্রকল্পের কাজ থমকে আছে।”

মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী সভায় বলেন, “একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের পরিচালক সিটি করপোরেশনে আসছেন না। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে প্রকল্প পরিচালক না থাকায় এই বিশাল প্রকল্পের বিল প্রদান, কার্যক্রম পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে।

“এই প্রকল্পের এখনও মাত্র পাঁচশ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। অথচ এতদিনে এটি এক হাজার কোটি টাকা ছাড়ানোর কথা ছিল। আমি আজকেই মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেব।”

সিটি করপোরেশনের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি আড়াই হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়।

একই বছরের ১৪ অগাস্ট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানীকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতি সপ্তাহে ঢাকা থেকে এসে প্রকল্পের কাজ দেখাশোনা করতেন তিনি।

Also Read: কার্যালয়ে ঢুকে প্রকল্প পরিচালককে মারধরের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪

প্রকল্পের ৩৭টি লটের মাধ্যমে প্রায় ২২০ কোটি টাকার কাজের দরপত্র ডাকা হয়েছিল। দরপত্র মূল্যায়ন শেষে ঠিকাদার নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি সিসিসির অস্থায়ী নগর ভবনে ইয়াজদানীর কার্যালয়ে ঢুকে তাকে মারধর ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পরদিনই সিটির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়।

তিন সপ্তাহ পর ২২ ফেব্রুয়ারি সিটি করপোরেশনের তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনে হামলার জন্য ১১ ঠিকাদারকে চিহ্নিত করা হয়। পরে এই ১১ ঠিকাদারের ১২টি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদার সাহাব উদ্দিনসহ চারজনকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ।

দরপত্র মূল্যায়ন শেষ হওয়ার আগেই ঠিকাদাররা এ সংক্রান্ত তথ্য জেনে যাওয়ায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দায়ী করা হয়েছিল প্রতিবেদনে। তবে হামলার নেপথ্যে করপোরেশনের কেউ জড়িত কি না, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি সেখানে।

গত অগাস্টে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রতি বুধ ও বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে অফিস করছিলেন ইয়াজদানী। তবে হামলার পরই ছুটি নিয়ে আর অফিসে ফেরেননি।

বর্ষায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার ঝুঁকি

সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভায় নগরীর জলবাদ্ধতা সৃষ্টির শঙ্কা এবং ওয়াসার পানি সরবরাহের সংকট নিয়েও আলোচনা হয়।

মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররা সভায় নগরবাসীর দুর্ভোগ তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট অন্য সরকারি সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। জবাবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এবং ওয়াসার প্রতিনিধিরা তাদের গৃহীত উদ্যোগ ও পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

এ নিয়ে মেয়র রেজাউলে ভাষ্য, “জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে সিডিএর প্রকল্পে সেনাবাহিনী কাজ (পূর্ত কাজ) হলেও প্রকল্পটির তত্ত্বাবধান করার দায়িত্ব সিডিএ এর। বারবার বলার পরও এই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন খালে জমা মাটি উত্তোলন না করায় এবার বর্ষায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার হুমকিতে আছে চট্টগ্রাম।

“জন-অসন্তোষের কথা মাথায় রেখে সিডিএ এর ত্বরিৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে স্লুইচগেইট সংস্কার না করায় বন্যায় শহরে সমুদ্রের পানি ঢোকার ঝুঁকি আছে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।”

খাবার পানির সংকটের বিষয়ে মেয়র বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে চট্টগ্রাম ওয়াসার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ওয়াসা নতুন তৈরি করা রাস্তা কেটে জনভোগান্তি তৈরি করছে। নষ্ট করছে সরকারের বাজেট আর সৃষ্টি করছে জন-অসন্তোষ।

“কোরবানির ঈদের আগেই হাটহাজারী সড়কে ওয়াসার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করতে করতে হবে, কারণ এই পথটি দিয়ে একদিকে কোরবানির পশু বিবিরহাট বাজারসহ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছায়। অপরদিকে এই পথ দিয়ে কোরবানির বর্জ্য শহর থেকে সরানো হয়। এছাড়া আতুরার ডিপোর কারখানাগুলোতে এই পথ দিয়ে চামড়া পরিবহন করতে না পারলে আর্থিক ক্ষতি ও শহরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।”

সভায় মেয়র সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগকে দুই কর্মদিবসের মধ্যে শহরের আলোকায়ন পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। এছাড়াও বর্ষাকালে উন্নয়ন কাজ চলমান রাখতে জন্য স্টোর নির্মাণ করে প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুদের নির্দেশ দেওয়া হয়।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব খালেদ মাহমুদ সভায় উপস্থিত ছিলেন। 

পুরনো খবর

Also Read: প্রকল্প পরিচালককে মারধর: দরপত্র আগের মতই চলবে, তদন্তে কমিটি

Also Read: সিসিসির আক্রান্ত প্রকৌশলী ছুটি নিয়েছেন