চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে বলেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা।
Published : 15 Sep 2024, 09:21 PM
চট্টগ্রামে বন্যা পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
রোববার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে বিভাগ এবং জেলার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল সংস্থার বিভাগীয় প্রধানদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা বলেন, “সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর অধিকাংশই চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। বন্যা পরিস্থিতি আমরা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি।
“বন্যা পরবর্তী চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। চট্টগ্রামে বন্যা পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি।”
দেশে সমবায় সমিতিগুলো নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, “চট্টগ্রামসহ দেশের সমবায় সমিতিগুলোর অন্তর্কোন্দল অনেক বেশি। উচ্চ আদালতের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মামলা হচ্ছে সমবায় সমিতিগুলোর। যে সমিতি ৩ বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়, দেখা যায় এই মামলাগুলোর কারণে তারা ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদ পর্যন্ত থেকে যায়।
“যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সমবায় সমিতিগুলো প্রতিষ্ঠা হয়, এসব দ্বিধাবিভক্তি এবং অন্তর্দ্বন্দ্বের জন্য সমিতিগুলো সেসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়।”
ঘাটের ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় নীতিমালা থাকা দরকার মন্তব্য করে উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, “ঘাটের ইজারা নিয়ে জেলা পরিষদ এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের দ্বন্দ্ব প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়। অনেকসময় এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর হস্তক্ষেপও দেখা যায়।
“জাতীয়ভাবে পলিসি থাকলে এলাকাভিত্তিক দ্বন্দ্বগুলোও নিরসন হবে। প্রয়োজনে ঘাট ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে একটি আইনও করা যেতে পারে।”
চট্টগ্রাম নগরীতে শতভাগ মানুষের কাছে পানি সরবরাহ নিশ্চিতের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দেন উপদেষ্টা হাসান আরিফ।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আলী আখতার হোসেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম কামরুজ্জামান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম উপস্থিত ছিলেন।
জলাবদ্ধতা কমাতে প্রয়োজন সমন্বয়
বন্দর নগরী চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান চারটি সরকারি প্রকল্পের প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবগুলো সরকারি সংস্থাকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে বলেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা।
রোববার বিকেলে নগরীর টাইগার পাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) জলাবদ্ধতা, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ও সার্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এই নির্দেশনা দেন।
সভায় উপদেষ্টা বলেন, “শুধু প্রকল্পের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান সম্ভব না। এজন্য প্রয়োজন জনগণের সহযোগিতা। জনগণকে সচেতন করতেও কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।”
তিনি বলেন, “জলাবদ্ধতা নিরসন চট্টগ্রামের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। চট্টগ্রামের সাথে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি জড়িত। এজন্য এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংস্থাগুলোকে ইগো ত্যাগ করে জনস্বার্থে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।”
জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নেওয়া মেগাপ্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ সভায় জানান, ২০১৮ সাল থেকে ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড প্রকল্পের ভৌত কাজ করছে। সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের অগ্রগতি ৭১ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৫০ দশমিক ২২ শতাংশ।
সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম ও সেনাবাহিনীর যৌথ তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়নাধীন চট্টগ্রাম মহানগরী জলাবদ্ধতা নিরসন, নিষ্কাশন ও উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর এবং বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম।
সিটি করপোরেশনের প্রশাকক ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় চট্টগ্রামের ডেঙ্গু পরিস্থিতি এবং এ বিষয়ে গৃহীত উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা হয়।
এ বিষয়ে বক্তব্য দেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম, সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমাম হোসেন রানা ও সিসিসির প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি।
সভায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম সম্পর্কে উপদেষ্টাকে অবহিত করেন।
অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম কামরুজ্জামান, সিসিসি সচিব মো. আশরাফুল আমিন, আইন কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন, প্রধান প্রকৌশলী শাহীন-উল-ইসলাম ও প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরীসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।