নগরীতে প্রায় ছয়শ মণ্ডপে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়েছে এবার।
Published : 03 Feb 2025, 04:52 PM
বিদ্যা ও সংগীতের দেবীর আরাধনায় চট্টগ্রামে উৎসবের আমেজে মণ্ডপে মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয়েছে সরস্বতীর পূজা।
সোমবার সকাল থেকে মণ্ডপগুলোয় ভিড় করতে থাকেন বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরেও সরস্বতীর আবাহন দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিখিল কুমার নাথ জানিয়েছেন, নগরীতে প্রায় ছয়শ মণ্ডপে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়েছে এবার।
এর মধ্যে চট্টগ্রামের জে এম সেন হল মাঠে একসাথে ১২টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নগরীতে সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থীর ভিড় হয়েছে এখানেই।
এই মাঠে ওমর গণি এমইএস কলেজ, জে এম সেন স্কুল, আইন কলেজ, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সার্বজনীন বাণী অর্চনা উদযাপন পরিষদ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, কর আইনজীবী পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর এবং জে এম সেন হল কর্তৃপক্ষের পূজার আয়োজন হয়েছে।
সকালে নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দলে দলে ভিড় করেন জে এম সেন হলে।
শিক্ষার্থী সুস্মিতা রায় বলেন, “ঘরের পূজো শেষ করেই বন্ধুদের নিয়ে এখানে চলে এসেছি। সবাই একসাথে ঘুরে ঘুরে মণ্ডপে পূজা দেখব বলে।”
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ভগবানের জ্ঞান ও বিদ্যার রূপ হলেন দেবী সরস্বতী। প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের শ্রী পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যাদেবীর পূজা হয়। হাতে বীণা থাকে বলে সরস্বতীকে বীণাপাণিও বলা হয়।
সাদা রাজহাঁস এ দেবীর বাহন। ঐতিহ্য অনুযায়ী এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পুরোহিতের মন্ত্র পাঠের মধ্য দিয়ে বিদ্যাদেবীর মন্দিরে সন্তানদের প্রথম বিদ্যার পাঠের হাতেখড়ির আয়োজন করেন।
পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিখিল কুমার নাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ সকাল থেকে বাণী অর্চনা, আরতি ও ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলিতে পূজার আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়েছে।
“এরপর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে হয়েছে পিঠা উৎসব। তারপর অতিথিদের উপস্থিতিতে দরিদ্রদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এখন প্রসাদ বিতরণ করা হবে ভক্তদের মাঝে। সন্ধ্যায় শুরু হবে আরতি। চলবে রাত ১১টা পর্যন্ত।”
জে এম সেন হল প্রাঙ্গনসহ নগরীর মন্ডপগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “পুলিশের কর্মকর্তারা সকাল থেকে মণ্ডপগুলো পরিদর্শন করছেন। এখন পর্যন্ত সুন্দরভাবে পূজার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।”
রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রম চট্টগ্রামের সম্পাদক স্বামী শক্তিনাথানন্দ বলেন, “আমাদের বিবেকানন্দ বিদ্যার্থী ভবনের বিদ্যার্থীদের আয়োজনে শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
“দেবী সরস্বতী ব্রহ্মস্বরূপা, পরমা, জ্যোতিরূপা ও সনাতনী। তিনি সর্ববিদ্যার অধিশ্বরী দেবী। বিদ্যার্থীরা জ্ঞান অর্জনের জন্য দেবীর আরাধান করে।”
জে এম সেন হল প্রাঙ্গন ছাড়াও নগরীর রামকৃষ্ণ মিশন চট্টগ্রাম, চেরাগী পাহাড় মোড়, দেওয়ানজি পুকুর পাড়, ফিরিঙ্গি বাজার, পাথরঘাটা, জামালখান, আগ্রাবাদ গোসাইলডাঙ্গা, কাট্টলী, হালিশহর ও চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় মন্ডপে মন্ডপে বিদ্যাদেবীর আরাধনা চলছে।
বেলা বাড়ার সাথে নগরীর মণ্ডপগুলোতে ভিড় বাড়তে থাকে। শাড়ি ও পাঞ্জাবিতে সজ্জিত হয়ে শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের দশনার্থীরা পূজা দেখছেন মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে।