দুই বছর পর ভিন্ন মঞ্চে আয়োজিত চট্টগ্রামের জব্বারের বলী খেলার আসরে নানা নাটকীয়তার ফাইনালে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন কক্সবাজারের চকরিয়ার জীবন বলী।
Published : 25 Apr 2022, 06:47 PM
সোমবার বিকালে প্রায় ২৭ মিনিট ধরে চলা ফাইনালের দুই প্রতিযোগী শাহজালাল ও জীবন কেউ প্রতিপক্ষের পিঠ মাটিতে লাগাতে পারেননি। তাই পয়েন্টের হিসেবে ৩:০ ব্যবধানে চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবনকে জয়ী ঘোষণা করেন রেফারি।
আর এর মধ্য দিয়ে ২০১৯ সালে কুমিল্লার শাহজালালের কাছে হারানো শিরোপা আবারও নিজের করে নিলেন জীবন। সেবারও কেউ কারো পিঠ মাটিতে লাগাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত পয়েন্টের হিসাবে ৩:১ ব্যবধানে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল শাহাজালালকে।
মহামারীর কারণে গত দুই বছর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে জব্বারের বলি খেলা হয়নি, পুরো রাস্তাজুড়ে বৈশাখী মেলার আসরও বসেনি।
সংস্কার কাজের কারণে এবারও মাঠ মেলেনি। শেষ পর্যন্ত বিশেষ ব্যবস্থায় এবারের বলী খেলা হয় মাঠের বাইরে চার রাস্তার মোড়ে অস্থায়ী মঞ্চ করে।
চট্টগ্রামের বাইরের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ৭২ জন বলী বা কুস্তিগীর এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসেন। দুপুরের পর থেকেই লড়াই দেখতে হাজারো দর্শক জড়ো হন লালদিঘী মাঠের আশেপাশের সড়কে।
গতবারের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল ও রানার আপ জীবনসহ আটজন সরাসরি অংশ নেন চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে, বাকিরা প্রথম রাউন্ড থেকে লড়াইয়ে নামেন।
দুপুরে খেলার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। আর ফাইনাল শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের যুব সমাজকে সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে স্থানীয় আব্দুল জব্বার সওদাগর লালদিঘী মাঠে আয়োজন করেন কুস্তি প্রতিযোগিতা। পরে তা আব্দুল জব্বারের বলীখেলা নামে পরিচিতি পায়।
বলী খেলার এবারের আসরে চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে জয়ী হয়ে জীবন, শাহজালাল, খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার মুবিন সেমিফাইনালে ওঠেন।
সেমিফাইনালে মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবন বাঁশখালীর মুবিন বলীকে পরাজিত করে ফাইনালে উঠেন। অপর সেমিফাইনালে সাত মিনিট খেলার পর শাহজালালের কাছে পরাজয় মেনে নেন খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমা।
জীবন-শাহজালাল ফাইনাল ছিল নানা নাটকীয়তায় ভরা। খেলা শেষ হতে সময় নেয় ২৭ মিনিট। টান টান উত্তেজনার ওই সময়টায় কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেনি। প্রতিযোগিতার মধ্যে যুক্ত হয় দর্শকদেরও উত্তেজনা।
১৯ মিনিট খেলা চলার পর প্রধান রেফারি আব্দুল মালেক ৩:০ পয়েন্টের ব্যবধানে জীবনকে জয়ী ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তখন শাহজালাল এর বিরোধিতা করেন। দর্শকরাও এ রায় মেনে না নিয়ে চিৎকার শুরু করে দেয়। তখন আয়োজকদের পক্ষ থেকে পাঁচ মিনিট সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয় জয়-পরাজয় নিশ্চিত করতে।
ওই পাঁচ মিনিটেও জয় নিশ্চিত না হওয়ায় আয়োজকরা বিচারের ভার দেন প্রধান অতিথি ও সিটি মেয়র এম রেজাউল করিমের কাছে। সিটি মেয়র ওই সময় বিচারকদের সাথে আলোচনা করে আরও তিন মিনিট অতিরিক্ত সময় দেন।
ওই তিনি মিনিটেও কেউ যখন প্রতিপক্ষের পিঠ মাটিতে ছোঁয়াতে পারল না, রেফারি ৩:০ পয়েন্টের ব্যবধানে জীবন বলিকে বিজয়ী ঘোষণা করলেন।
প্রতিবারের মত এবারও নানা বয়সী মানুষের সম্মিলন ঘটেছিল বলি খেলায়। বিগত বছরগুলোর মত এবারও এই মল্লযুদ্ধে অংশ নিতে এসেছিলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারির সত্তরোর্ধ্ব মো. মফিজ এবং চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকার খাজা আহম্মেদ।
মফিজ জানান, ১০ বছর বয়স থেকে তিনি বলী খেলায় অংশ নিচ্ছেন। তার সতীর্থ খাজা আহম্মদও অংশ নিচ্ছেন একই রকম বয়স থেকে।
মফিজ-খাজা আহম্মেদের খেলায় কেউ জেতেনি, কেউ হারেনি। যৌথভাবে তাদের জয়ী ঘোষণা করা হয়।
কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে বলী খেলায় অংশ নিতে এসেছিলেন মো. রাশেদ নামে ১৫ বছর বয়েসী এক কিশোর।
পানের বরজের শ্রমিক রাশেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবরই প্রথম তার এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ।
রাশেদের মতো সখের বশে বলি ধরতে এসেছিলেন ফিশিং বোটের ক্যাপ্টেন মো. তসলিম উদ্দিন।
তিনি জানান, পেশার বাইরে তিনি একজন কৌতুক অভিনেতা। জব্বারের বলী খেলার একটি ঐতিহাসিক পটভূমি রয়েছে। সে কারণেই প্রথমবারের মত তিনি এ খেলায় অংশ নিতে এসেছেন।