চট্টগ্রামের ঐতিহ্য জব্বারের বলী খেলার ১১৩তম আয়োজন হবে। অন্য বছরের মতো বসবে মেলাও।
Published : 16 Apr 2022, 02:35 PM
শনিবার আবদুল জব্বারের স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও মেলা কমিটির সঙ্গে আলোচনা শেষে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী এ ঘোষণা দেন।
প্রতিবারের মতো এবারও ১২ বৈশাখ (২৫ এপ্রিল) বলী খেলা হবে। লালদীঘি মাঠ না পাওয়ায় এবারের বলী খেলা হবে মাঠের সামনে জেলা পরিষদ চত্ত্বরে অস্থায়ী মঞ্চ করে।
তবে রমজান মাস হওয়ায় এবার বলী খেলার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। আর খেলা ঘিরে বৈশাখী মেলা বসবে লালদীঘি মাঠের আশেপাশের এলাকায় ১১, ১২ ও ১৩ বৈশাখ (২৪ থেকে ২৬ এপ্রিল) এই তিন দিন।
এরআগে ১৩ এপ্রিল লালদীঘি মাঠ না পাওয়ায় আবদুল জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা আয়োজন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছিল আয়োজক কমিটি। তার আগে গত দুবছরও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বলী খেলা ও মেলা হয়নি।
বলী খেলা ও মেলা স্থগিতের ঘোষণা আসার পর তা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা শুরু হয়। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজন অব্যাহত রাখার দাবি ওঠে।
একপর্যায়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম কুস্তি প্রতিযোগিতা ও মেলা কমিটির সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেন। বৃহস্পতিবার রাতেই মেলা কমিটির সঙ্গে এ দফা আলোচনা করেন তিনি।
শনিবার সকালে দ্বিতীয় দফায় আলোচনার পর বহদ্দার বাড়ি এলাকায় নিজ বাসভবন লাগোয়া ব্যক্তিগত কার্যালয়ে মেয়র ও আয়োজক কমিটির সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র রেজাউল বলেন, “কয়েকদিন আগে যখন ঘোষণা আসে বলী খেলা ও মেলা হবে না, তখন মানুষের মাঝে হতাশা চলে আসে। মেয়র হিসেবে বিভিন্ন জন আমাকে বলতে শুরু করে, কেন জব্বারের বলী খেলা হবে না? তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, মেয়র হিসেবে আমার দায়িত্ব আছে।”
তিনি বলেন, “জব্বারের বলী খেলা শুধু একটি খেলা নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য। এমনকি অতীতে ঈদের দিনেও বলী খেলা হয়েছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মানুষকে সচেতন করতে এই খেলার আয়োজন শুরু হয়েছিল।”
অল্প সময়ের প্রস্তুতিতে মেলা আয়োজনে সবার সহযোগিতা চেয়ে মেয়র বলেন, “সবার সহযোগিতায় ইনশাল্লাহ সফলভাবে করতে পারব।
“আয়োজকরা বলেছেন অল্প সময়ে স্পন্সর পাওয়া যাবে না। পুরস্কার, সম্মানী, জৌলুস যা ছিল আগে, সব থাকবে। আমি ব্যবস্থা করব।”
সংবাদ সম্মেলনে মেলা কমিটির সভাপতি জহর লাল হাজারী বলেন, “গত দু’বছর করোনার কারণে আয়োজন করতে পারিনি। এবার মাঠ না পেয়ে স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলাম। মেয়র মহোদয় আলাপ করে এই ঐতিহ্য অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেন।”
মেলা কমিটির সদস্য সচিব ও আবদুল জব্বারের নাতি শওকত আনোয়ার বাদল বলেন, “এই আয়োজন আমার দাদার নামে হলেও এটা আমাদের পরিবারে আর সীমাবদ্ধ নেই। এটা এখন চট্টগ্রামবাসীর সম্পদ।
“এবার মাঠ না পাওয়ায় আমরা খেলাটা রাস্তার উপর করছি। কিন্তু আগামী বছর থেকে যেন বলী খেলা লালদীঘির মাঠে করতে পারি। মেয়র মহোদয় যেন সে উদ্যোগ নেন।”
মেয়র রেজাউল বলেন, “ভবিষ্যতে উদ্বোধনের পর লালদীঘি মাঠেই খেলা হবে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।”
সংবাদ সম্মেলনে মেলা কমিটির সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন, বলী খেলা পরিচালনাকারী (রেফারি) এম এ মালেক উপস্থিত ছিলেন।
লালদীঘি মাঠে ছয় দফা মঞ্চ, বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার টেরাকোটা ও মাঠ সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের কথা রয়েছে। তাই বলী খেলা আয়োজনের জন্য এবার মাঠ পাওয়া যাচ্ছে না।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের যুব সমাজকে সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে স্থানীয় আব্দুল জব্বার সওদাগর নগরীর লালদিঘী মাঠে আয়োজন করেন কুস্তি প্রতিযোগিতা। পরে যা আব্দুল জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিত হয়। এর জনপ্রিয়তা এখনও অক্ষুণ্ন রয়েছে।
বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে বৈশাখ মাসের ১২ তারিখে লালদিঘীর ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় এই খেলা। খেলার আগের দিন থেকে শুরু করে পরদিন পর্যন্ত তিন ধরে লালদিঘীর মাঠ ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বসে বৈশাখী মেলা।
অবৈধ দখল ও সংস্কারের অভাবে লালদীঘি মাঠটি জৌলুস হারিয়ে বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। একাংশে গড়ে ওঠে অবৈধ মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড।
এই মাঠে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ঐতিহাসিক ছয় দফা মঞ্চ, বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার ম্যুরাল স্থাপন, কিডস কর্ণার, ঘাস লাগানো, সীমানা প্রাচীর, ফটক নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রায় আড়াই বছর আগে এই কাজ শুরু হয়।