দুর্ঘটনায় প্রাণহানি: সেবাসংস্থার সমন্বয়ে ‘নেতৃত্ব’ চান চট্টগ্রামের মেয়র

একাধিক প্রাণহানির পর উন্নয়ন প্রকল্পে সমন্বয়হীনতার কথা উল্লেখ করে বিধি সম্মতভাবে সেবাসংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় কাজে নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার চাইলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন- সিসিসি এর মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2021, 03:55 PM
Updated : 29 Sept 2021, 03:55 PM

বুধবার নগরীর আন্দরকিল্লায় নগর ভবনে সিসিসি এর অষ্টম সাধারণ সভায় তিনি এ দাবি জানান।

সভায় সোমবার রাতে নগরীতে খালে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সেহেরীন মাহবুব সাদিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি আলোচনায় আসে।

এজিএম শেষে বিকালে নগরীর হালিশহরে নিহত সাদিয়ার বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান মেয়র।

গত সোমবার রাতে নগরীর আগ্রাবাদে ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় নাছির ছড়া খালে পা পিছলে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ সাদিয়ার লাশ উদ্ধার হয় প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর।

এ দুর্ঘটনা নিয়ে সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একে অপরের উপর দায় চাপিয়ে বক্তব্য দিয়েছে।

সিটি করপোরেশনের দাবি চলমান এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং সংলগ্ন সড়ক ও ফুটপাতের কাজ করছে সিডিএ। তারাই খালের মুখে থাকা রেলিং ভেঙেছে।

আর সিডিএ এর দাবি খালের মালিকানা সিসিসি এর। তাই নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বও তাদের।

এ নিয়ে পরষ্পরবিরোধী বক্তব্যের বিষয়ে বুধবারের সাধারণ সভায় মেয়র বলেন, “সিডিএ এর একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী সিসিসি এর প্রতি দোষারোপ করে যে সকল বিদ্বেষমূলক উক্তি গণমাধ্যমে প্রকাশ করছেন তাতে আন্ত:সংস্থা (সিডিএ ও সিসিসি) বিরোধ সৃষ্টির অপপ্রয়াস বলে মনে করি।

“এ কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাই প্রশ্ন জাগে ওই প্রকৌশলী কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।”

সাধারণ সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের ‘চরম উদাসীনতা’ ও ‘দীর্ঘসূত্রতার’ কারণে পরপর যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে তাতে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে কষ্ট পেলেও তা লাঘবে নিজের ক্ষমতা ‘খুবই সীমিত’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

চট্টগ্রামে খালে পড়ে নিহত সাদিয়ার বাড়িতে গিয়ে বুধবার সিটি মেয়র রেজাউল করিম পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান।

তিনি বলেন, “সরকারের মেগাপ্রকল্পসহ যে সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে সে ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতার কারণে নাগরিক দুর্ভোগ ও সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তা নিরসনে সরকারের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।“

এর কারণ তুলে ধরে নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল বলেন, “কারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান বা নির্বাহী প্রতিনিধিরা সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও তারা দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা প্রদানের আওতা বর্হিভূত। এক্ষেত্রে মেয়র হিসেবে সেবা প্রদানকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনের নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার বিধিসম্মতভাবে দেওয়া অতীব প্রয়োজন বলে মনে করি।”

জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা ও জনভোগান্তি চিহ্নিত করে তা সমাধানে সিসিসি ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) প্রকৌশলী পর্যায়ে একটি তদারকি কমিটি গঠনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “এ কমিটি সরেজমিনে গিয়ে সমস্যা শনাক্ত করলেও বাস্তব ক্ষেত্রে সমাধানের কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি।

“আরও উদ্বেগজনক হল, যেখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে এবং ওই স্থানগুলোতে নিরাপত্তা বেষ্টনি না থাকায় প্রতিনিয়তই দুঃখজনক দুর্ঘটনা ঘটছে।”

প্রকল্প বাস্তবায়নে আন্ত:সংস্থাগুলোর সমন্বয় এবং সম্পাদনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে কর্তৃত্ব প্রদানের উপর গুরুত্বারোপ করে মেয়র রেজাউল বলেন, “সরকারের ভাবমুর্তি ও প্রকৃত জনস্বার্থ রক্ষায় আমার পূর্বসূরী এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী যে ভূমিকা পালন করেছিলেন আমি তা করতে চাই।

“এজন্য দল-মত নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা কামনা করি।“

এরআগে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সেবাসংস্থার মধ্যে সমন্বয়ে সিটি গভর্নমেন্টের দাবি তুলেছিলেন। পরের মেয়র এম মনজুর আলম সেই ধারণার সমর্থন করেন। সবশেষ সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনও সমন্বয়ের উপর জোর দিয়েছিলেন।

বিকেলে সাদিয়ার বাড়িতে সহমর্মিতা জানাতে গিয়ে নিহতের পরিবারের সদস্যদের মেয়র রেজাউল বলেন, “এ ধরণের দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে আমি মর্মাহত ও ব্যথিত, যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। জনপ্রতিনিধি হিসেবে এ ধরণের ঘটনার দায় আমিও এড়াতে পারি না।“

তিনি দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে সচেতন ও সর্তক থাকার আহ্বান জানান।

এসময় তার সঙ্গে ছিলেন কাউন্সিলর মো. ইলিয়াস, মো. শেখ জাফরুল হায়দার চৌধুরী ও মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম।

আরও পড়ুন