বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতাকারী হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে চট্টগ্রামে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
Published : 26 Nov 2020, 07:31 PM
বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে ‘জঙ্গিবাদবিরোধী ছাত্র ও যুব ঐক্য পরিষদ’ আয়োজিত সমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
মূলত চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের আয়োজনে এই সমাবেশে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও আওয়ামী লীগ নেতারা অংশ নেন। অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীরা প্রায় সবাই প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর বর্তমানে তারা মহিউদ্দিনপুত্র শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে আছেন।
তার আগের দিন বৃহস্পতিবার জঙ্গিবাদবিরোধী এই সমাবেশ থেকে চট্টগ্রামে যেখানেই মামুনুল হককে পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। পাশাপাশি তার কুশপুতুলও দাহ করা হয়।
সমাবেশে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, “এই বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুধু চট্টগ্রামে নয় বাংলাদেশের কোথাও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কটূক্তিকারী মামুনুল হককে সভা করতে দেওয়া হবে না।”
নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধী ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছে তা দেশদ্রোহের শামিল। এরপর তার নাগরিকত্ব থাকতে পারে না। কোনোভাবেই মামুনুল হককে চট্টগ্রামে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। অবশ্যই প্রতিহত করা হবে।
“ভুলে যাবেন না, সরকার চাইলে শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতের কেউ নিরাপদে ফিরে আসতে পারত না। জামাত-বিএনপি, কাসেমী-মামুনুল হক সব একই জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী। আগামীকাল তাকে প্রতিহত না করে আমরা ঘরে ফিরব না।”
শ্রমিক লীগ নেতা আবুল হোসেন আবু বলেন, “যুদ্ধাপরাধী ও পাকিস্তানিদের প্রেতাত্মা মামুনুল হক। তারা সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াতে চায়। এই চট্টগ্রামে তাদের কোনো স্থান নেই।”
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ বলেন, “এরা একাত্তরের পরাজিত শক্তি। এরা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে, ধর্ম চর্চা করে না। চট্টগ্রাম থেকে বার বার অসাম্প্রদায়িকতাকে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম হয়েছে।
“এই চট্টগ্রাম থেকে গোলাম আজমকে প্রতিহত করা হয়েছে। সাঈদীর মাহফিল বন্ধ করা হয়েছে। সবাই মিলে আমরা জঙ্গিবাদীদের প্রতিহত করব।”
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ বলেন, “স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে মন্তব্য মামুনুল হক করেছে তার নিন্দা জানাই। তাকে ধিক্কার জানাই। তার সমাবেশ চট্টগ্রামের মাটিতে হবে না। ধর্মকে পুঁজি করে তারা সন্ত্রাস নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়।”
নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন, ছাত্রলীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদুল করিম, যুব নেতা শিবু চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে মামুনুল হকের একটি কুশপুতুল দাহ করা হয়।
শুক্রবারের কর্মসূচি বিষয়ে জানতে চাইলে নগর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নেব। মামুনুল হককে হাটহাজারী যেতে দেওয়া হবে না।”
সমাবেশে অংশ নেওয়া ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা জানান, শুক্রবার নগরীসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং হাটহাজারীতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেবেন।
প্রতি বছর শীতে সংস্থাটি এই মাহফিলের আয়োজন করে। সংস্থার ব্যানারে হলেও আয়োজকরা হেফাজতে ইসলাম সংশ্লিষ্ট।
শুক্রবার এই মাহফিলে প্রধান তিন বক্তার একজন মামুনুল হক। অন্য দুজন হলেন জুনাইদ আল-হাবীব ও হাফেজ হাসান জামিল।
শুক্রবার সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরীর উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ও ওই মাহফিলের দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম চলছিল বিদ্যালয়ের মাঠে।
মাহফিলের আয়োজন করা হলেও শুক্রবার সমাপনী দিনে ওই অনুষ্ঠানে মামুনুল হককে সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা আছে।
এ নিয়ে মামুনুল হকের সমর্থক ও তার বিরোধীরা ফেইসবুকে বাকযুদ্ধ, হুমকি, পাল্টা হুমকি দিয়ে চলেছেন।
প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় প্রশাসনের এই কর্মকর্তা বলেন, মামুনুল হক সড়ক না আকাশপথে হাটহাজারী আসবেন সে বিষয়ে ‘কিছু জানা নেই’ তার।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হাটহাজারী বড় মাদ্রাসায় সাম্প্রতিক ঘটনাবলী, প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ, নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়া, শফীর জানাজায় জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি এবং আমির পদে জুনাইদ বাবুনগরীর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় মামুনুল হকের নেপথ্যের ভূমিকার কথা বার বার আলোচনায় এসেছে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এবং বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মামুনুল হক সদ্য ঘোষিত হেফাজতে ইসলামের কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিবের পদ পেয়েছেন।
নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকার বিএমএ মিলনায়তনে রাজধানীর ধোলাইরপাড়ে জাতির পিতার ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে তা অবিলম্বে বন্ধের দাবি তোলেন মামুনুল হক।
তার ওই বক্তব্যের পর সরকার বা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তেমন কোনো প্রতিবাদ লক্ষ করা যায়নি। এরপর ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-৯ আসনের সাংসদ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতাকারীরা ক্ষমা না চাইলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘মৌলবাদী গোষ্ঠীকে’ বেশি বাড়াবাড়ি না করতে হুঁশিয়ার করে নওফেল বলেছিলেন, “বেশি বাড়াবাড়ি করলে ঘাড় মটকাতে সময় লাগবে না।”