‘মুরুব্বিরা আমির বানাইয়া দিছে’: বাবুনগরী

হেফাজতে ইসলামের নতুন আমির জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, তার অনিচ্ছা থাকলেও সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের অনুরোধে পদটি নিতে হয়েছে তাকে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2020, 12:27 PM
Updated : 15 Nov 2020, 12:38 PM

প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর অনুসারীদের বিরোধিতার মধ্যে রোববার হাটহাজারী মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত হেফাজতের সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়।

এরপর মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সামনে এসে জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, “আমাকে আমির না করার জন্য আমি বলেছি। তারপরেও এই ‍মুরুব্বিরা আমির বানাইয়া দিছে।”

এসময় উপস্থিত হেফাজতকর্মীরা ‘বাবুনগরী এগিয়ে চল- আমরা আছি তোমার সাথে’ স্লোগান দিতে থাকে।

“আমি এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আদায় করতে পারার জন্য আপনারা দোয়া করবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার কমিটির ওলামায়ে কেরামদের জন্য দোয়া করবেন,” বলেন বাবুনগরী।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা নামে পরিচিত আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক আহমদ শফী ছিলেন হেফাজতের আমির। তিনি ওই মাদ্রাসার মহাপরিচালকও ছিলেন।

ওই মাদ্রাসারই শিক্ষক বাবুনগরী কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতের মহাসচিব ছিলেন।

তবে এই বছরের মাঝামাঝিতে শফীর ছেলে আনাস মাদানির সঙ্গে দ্বন্দ্বে মাদ্রাসার পদ হারান বাবুনগরী, তবে হেফাজতের মহাসচিবের পদে থেকে যান।

ওই ঘটনার জের ধরে এক দল মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর বিক্ষোভের মুখে মাদ্রাসার মহাপরিচালকে পদ ছাড়েন আহমদ শফী; তার ছেলে আনাস মাদানিকেও বরখাস্ত করা হয়। এরপর বাবুনগরী আবার মাদ্রাসার পদে ফেরেন।

হাটহাজারী মাদ্রাসার কর্তৃত্ব হারানোর পরদিনই আহমদ শফী মারা গেলে হেফাজতের আমিরের পদ শূন্য হয়।

এই অবস্থায় শফীর অনুসারীদের বিরোধিতার ‍মুখে বাবুনগরীরা রোববার সম্মেলন আয়োজন করে নতুন কমিটি গঠন করেন। এই সম্মেলনে শফীর ছেলে আনাস মাদানিও আমন্ত্রণ পাননি।

হেফাজতের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের কারণে সম্মেলন উপলক্ষে শনিবার থেকেই হাটহাজারীতে অতিরিক্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।

শনিবার দুপুরে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়েছিলেন স্থানীয় সাংসদ জাতীয় পার্টির নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

কাউন্সিলে অংশ নিতে শনিবার বিকেল থেকেই আমন্ত্রিতরা আসতে শুরু করে। তবে শফী অনুসারীরা উপস্থিত না থাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

নতুন কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণার সময় জানানো হয়, সম্মেলনের শুরুতে মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী আগের কমিটি বাতিল করেন।

নতুন কমিটিতে প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে আল্লামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরীকে। তিনি জুনাইদ বাবুনগরীর মামা। তিনি রোববারের সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।

কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার প্রশ্নে বিরোধের জেরে মহিবুল্লাহ বাবুনগরী হেফাজতে ইসলাম থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। তবে তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি বলে এখন জানানো হচ্ছে।  

নতুন কমিটিতে মহাসচিবের পদে এসেছেন আগের কমিটির নায়েবে আমির নূর হোসাইন কাসেমী। তিনি ২০ দলীয় জোটের অংশীদার জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব।

সম্মেলনে পাঁচশ প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। উপস্থিত ছিলেন চারশ জনের মতো। তাদের মধ্যে ১২ জন মুরুব্বি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ১৫১ সদস্যের কমিটি নির্ধারণ করেন।

ঘোষিত কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ২৪ জন । ৩২ জন নায়েবে আমির ও সাতজন যুগ্ম মহাসচিবের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

সাত যুগ্ম মহাসচিবের মধ্যে একজন খেলাফতে মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মামুনুল হক। শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণের দাবি তোলোন এই খেলাফত মজলিস নেতা।

এদিকে সম্মেলনে নতুন কমিটি গঠনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হেফাজতের শফীর অনুসারী নেতারা। তারা আগে থেকে বলে আসছিলেন, সংগঠনটির নেতৃত্ব ‘জামায়াত-বিএনপির’ হাতে যাচ্ছে।

এদিকে বাবুনগরীকে আমির করার পক্ষে অবস্থান জানিয়েছিলেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি।

জুনাইদ বাবুনগরী ও নূর হোসাইন কাসেমী, ফাইল ছবি

আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি

হেফাজতে নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার পুরনো দাবি নতুন করে তোলেন জুনাইদ বাবুনগরী ও নূর হোসাইন কাসেমী।

জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, “ইসলামবিরোধী যত অপশক্তি আছে, তাদের নির্মূল করার জন্য, কাদিয়ানীকে নির্মূল করার জন্য, নাস্তিক মুরাতাদদের নির্মূল করার জন্য এবং যারা আমার নবী মোহাম্মদের (সা.)এর শত্রু, নবীকে নিয় কটাক্ষ করে কটুক্তি করে তাদের কবর রচনা করার জন্য এবং…   

“এ সমস্ত ইসলামের পক্ষের কাজ করার জন্য প্রয়োজনে রক্ত দেওয়ার জন্য যদি আপনাদের ডাক দেয়া হয়, আপনারা আসবেন নি ইনশাল্লাহ?”

কাসেমী বলেন, “কাদিয়ানী সম্প্রদায় এরা অমুসলমান। মুসলমানের নাম ব্যবহার করা তাদের জন্য অবৈধ। আমাদের দাবি হলো অবিলম্বে কাদিয়ানীদের সরকারিভাবে অমুসলমান ঘোষণা করা হোক।

“হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানরা যেভাবে অমুসলমান নাগরিক হিসেবে এদেশে বসবাস করে কাদিয়ানীদেরও অমুসলমান নাগরিক হিসেবে এ দেশে বসবাসের অধিকার আছে।”

তিনি বলেন, “আল্লাহপাকের হাবিবের সানে যদি বেয়াদবি করা হয়, তার জন্য সরকারিভাবে মৃত্যুদণ্ডের আইন করতে হবে।”