মেয়র পদে দ্বিতীয় দফায় মনোনয়ন না পেয়ে ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’ হয়েছেন দাবির পর এবার কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েও ক্ষোভ ঝাড়লেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির।
Published : 02 Mar 2020, 03:20 PM
সোমবার দুপুরে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে যুবলীগের বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শুধু মেয়র প্রার্থী দলীয় প্রতীকে ভোট করতে পারেন। আর বিভিন্ন দলের সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলরপ্রার্থীরা নির্বাচন করেন অন্য প্রতীকে।
তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) নির্বাচনে ৪১টি সাধারণ ও সংরক্ষিত ১৪টি সংরক্ষিত আসনসহ মোট ৫৪টি কাউন্সিলর পদে এবারই প্রথম দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়ার পর কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে নগরীর রাজনীতিতে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা বেশিরভাগই বাদ পড়েছেন।
১৫ ফেব্রুয়ারি দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর চট্টগ্রামে ফিরে ১৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় নাছির দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার পেছনে ‘ষড়যন্ত্র’ রয়েছে বলে দাবি করেন।
সেদিন নাছির বলেছিলেন, কেউ চাইলে তিনি নিজেই মেয়র পদ থেকে সরে যেতেন। তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও অপরাজনীতি করতে গিয়ে দলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সোমবারের সভায় নাছির বলেন, “মিডিয়া আমার কাছে প্রশ্ন করেছেন, অনেকে। আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা, আমাদের প্রিয় প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী উনার কাছেও প্রশ্ন করেছেন যে- এই প্রার্থীগুলো (কাউন্সিলর) কিভাবে মনোনয়ন পেলেন?
“আসলে তো আমরা কোনো কিছু জানি না। এই কাউন্সিলর প্রার্থী কারা মনোনয়ন দিয়েছেন, এটা কি আমরা জানি? আমাদের জানামতে চট্টগ্রামের কেউ এই মনোনয়ন প্রক্রিয়ার সাথে আমরা জড়িত নই। আজকে তাহলে যারা এদের রেকমেন্ডেশন করেছে, তারা কারা?”
তিনি প্রশ্ন রাখেন, “তারা কী জেনেশুনে করেছে? তারা জেনেশুনে করেননি। নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তারা এ কাজগুলো করেছেন। তারা যে কাজ করেছেন এর দ্বারা কি সংগঠনের কল্যাণ হবে? মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে?”
দল মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থীদের ‘বিতর্কিত’ উল্লেখ করে মেয়র নাছির বলেন, “এই জনপ্রতিনিধিগুলো মানুষের কী কোনো কল্যাণ করতে পারবে? তারা তো জনপ্রতিনিধি হতে যাচ্ছেন, বিগত দিনে তাদের কী কর্মকাণ্ড ছিল? এখনও তারা তো বিতর্কিত। তাহলে তারা কিভাবে মনোনয়ন পেলেন? আমি এই কথাগুলো বলতে চাই না। আমি যদি কথা বলি, এই কথার সূত্র ধরে অন্য কথা হয়ত অনেকে বলার চেষ্টা করবেন।”
তবে দলের মনোনয়ন মেনে নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
“প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মনোনয়ন বোর্ড যে মনোনয়ন প্রদান করেছেন সেটাই আমার শিরোধার্য এবং সেটা নিয়ে কাজ করছি, কাজ করব। কাজ করে প্রমাণ করে দেব আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শতভাগ অনুগত এবং জাতির জনকের আর্দশ অন্তরে ধারণ করি।”
“আমি যে আজকে বেঁচে আছি আল্লাহর রহমত, প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার অবদান। অনেকবার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের মাটি থেকে বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল ফারুক-রশিদকে উৎখাত করেছি, ফ্রিডম পার্টি, জামায়াত-শিবিরকে উৎখাত করেছি। আমি আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে সেগুলো হয়েছে। এটিই তো নিষ্ঠুর বাস্তবতা, কেউ কি অস্বীকার করতে পারে?”
এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের কথাও স্মরণ করেন নাছির।
“স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সমগ্র চট্টগ্রামে যখন উপজেলা নির্বাচন বানচাল করার জন্য দলের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রত্যেকটি প্রার্থীর বাসায় বাসায় গিয়ে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে যে হামলা করা হয়েছে, তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য, সেটা আমি আ জ ম নাছির উদ্দিন, আমার নেতৃত্বে। তখন মহানগর, উত্তর, দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আমার সাথে ছিল। কেউ কী অস্বীকার করতে পারে?”
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন যুবলীগ সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ।
উদ্বোধনী অধিবেশনের পর সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সঞ্চালনায় প্রতিনিধি সভার মূল কার্যক্রম শুরু হয়।
উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী।
বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, শেখ ফজলে নাঈম, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান প্রমুখ।