পরিকল্পনা সবাইকে নিয়ে না হলে জলাবদ্ধতা যাবে না: বাদল

সবাইকে নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন না হলে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প দিয়েও চট্টগ্রামের জলবদ্ধতা নিরসন হবে না বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদল।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2019, 03:21 PM
Updated : 8 Oct 2019, 03:21 PM

মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বায়েজিদ সবুজ উদ্যানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যের এ দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ জাসদের নেতা বাদল বলেন,  “জলাবদ্ধতা… মোশাররফ ভাই, আপনি উদ্যোগ নেন। মেয়রকেও বলেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদও আছেন। সমস্ত এমপি, স্টেক হোল্ডার যারা যারা আছে তাদের ডাকেন।

“জলাবদ্ধতা যাবে না। এইসব প্রকল্প…পাঁচ হাজার কোটি, দশ হাজার কোটি; ভুয়া। কিচ্ছু হবে না।”

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “পরিকল্পনাকারীরা পরিকল্পনা করেই যাচ্ছেন। পরি যে উড়ি যায়, সেটা খেয়াল নেই। খালি কল্পনায় পড়ে আছে। কর্ণফুলী যদি পানি বহন না করে এই পরিকল্পনা কীভাবে হবে?”

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই সঙ্কট দেখা দিচ্ছে দাবি করে এতে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের আহ্বান জানান বাদল।

আগামী বছর চট্টগ্রামে এই সম্মেলন আয়োজন করতে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

“একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলন ডাকেন। মেয়র দায়িত্ব নেন, পৃথিবীকে ডাকতে চাই এখানে। আপনাদের ফান্ডসহ সবকিছু নিয়ে আসতে হবে। আগামী বছর এটা করেন।”

সভায় নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএর প্রকল্প নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র নাছির বলেন, “জলাবদ্ধতায় যেভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, এটা পূর্ণাঙ্গ কি না, আমার সন্দেহ আছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণে সাগরের পানির উচ্চতা বেড়েছে।

“এই টাকাগুলোর অনেকটা অপচয় হবে বলে মনে করি। যদিও আমি এক্সপার্ট না। আরও ফিজিবেলিটি স্টাডি করে যদি করা যায়…জনগণের টাকা খরচ করে যদি ফল না মেলে, তখন নগরবাসী আমাদেরকেই দোষ দেবেন।”

‘সুন্দর পরিকল্পনা’ করার উপর গুরুত্ব নিয়ে সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “জলাবদ্ধতায় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি জড়িত। প্রথমে পানি একটা প্রকল্প নিল। কিন্তু সিডিএ ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান ছাড়া একটা বড় প্রকল্প পাস করালো। এটা আবার রিভাইস করা দরকার আছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার আছে।

“চট্টগ্রাম ডুববে না। এখন থেকে পরিকল্পনা নিতে হবে। সাগরের পানি বাড়লে যেন শহরে ঢুকতে না পারে। এগুলো নতুন কোনো বিষয় না। নেদারল্যান্ডসসহ বহু দেশে চলে আসছে; বাইরের পানি ঢুকতে দিব না আর পাহাড় থেকে পানি নেমে আসে, সেগুলো পাম্প দিয়ে বের করা। যেটা দরকার সেটা হলো সুন্দর পরিকল্পনা।”

সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন,  “জলাবদ্ধতার কাজ সিডিএ করতেছে; মেয়রও করছেন। আশা করি শেষ করতে পারব। এই প্রকল্পে পানি সরাতে পাম্প থাকবে।”

জাতিসংঘ পার্ক নিয়ে ভিন্ন সুর

নগরীর পাঁচলাইশ এলাকায় জাতিসংঘ পার্ক নিয়ে মন্ত্রী থাকাকালে মেয়রের সঙ্গে বিরোধে জড়ালেও মঙ্গলবার এ নিয়ে ‘সমঝোতার’ ঘোষণা দেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ।

অনুষ্ঠানে মেয়র নাছির বলেন,  “গণপূর্তের সাথে মামলা আমি করিনি। সাবেক মেয়র মহোদয়রা করেছেন। এটাই বাস্তবতা। আমি পজেটিভ মেন্টালিটির। আমি চাই নিরাপদ ও বসবাস যোগ্য নগরী। এতে যে প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে আমরা পাশে থাকব।”

পরে মেয়রের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোশাররফ বলেন,  “কিছু কথা হয়েছে উনার সাথে। উনাকে ধন্যবাদ জানাই। উনার কথা মতো পদক্ষেপ নেব। উনি আমাকে সহযোগিতা করবেন।

“আপনারা আরো উন্নয়ন দেখবেন। ডিসি হিলে আমি শুরু করেছিলাম পার্ক। ২০ বছর পূর্বে। ডিসি হিলে পার্ক করব ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে। জাতিসংঘ পার্কের জন্য ১১ কোটি টাকা আছে। কাজ করে পার্ক উনাকে দিয়ে দিব। দেখাশোনা করবেন।”

আলাপ করেই কাজ করবেন উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, “আমি তো মন্ত্রী নাই। তবে বললে হয়ে যাবে। চট্টগ্রাম আরও তিনটা বড় খেলার মাঠ পাবে। উনার সহযোগিতা নিয়ে করব। উনি নগর পিতা। আমি কর্মী। উনার সাথে আলাপ করে করব।”

২০১২ সালে সাবেক মেয়র মনজুর আলম জাতিসংঘ পার্কে চার কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি সুইমিংপুল ও একটি জিমনেসিয়াম নির্মাণ শুরু করেন। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি এ কাজ শেষ হয়।

২০১৬ সালে পার্কটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ২৫ বছরের জন্য ইজারা দিতে উদ্যোগ নেন মেয়র নাছির। তবে তখনকার গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন ও স্থানীয় পাঁচলাইশ আবাসিক সমিতির বাধায় তা সম্ভব হয়নি।

এরপর পার্কটির মালিকানা নিয়ে বিরোধে জড়ায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও সিসিসি। গণপূর্ত অধিদপ্তর ১২ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নিলেও তাতে সিসিসি বাধা দেয়। পার্কটি তখন থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।