চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওপর ক্ষুব্ধ মন্ত্রী মোশাররফ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আবজর্না অপসারণসহ কয়েকটি কাজ নিয়ে ক্ষোভ ঝেরেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2017, 03:26 PM
Updated : 24 Sept 2017, 03:26 PM

রোববার হোটেল রেডিসন ব্লুতে বিশ্ব ব্যাংক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) আয়োজিত ‘চিটাগং স্ট্রাটেজিক আরবান ট্রান্সপোর্ট মাস্টার প্ল্যান ভিশনিং ওয়ার্কসপের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করেন।

মন্ত্রী মোশাররফ বলেন, “চট্টগ্রাম শহরে গন্ধের জন্য এখন হাঁটা দায়। ময়লা পড়ে আছে সব রাস্তায়। বিদেশে এ ময়লা হলো সম্পদ। পলিথিন এক জায়গায়, কাগজ এক জায়গায়, টিন এক জায়গায়।’’

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সুয়ারেজ সিস্টেম না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, “আমার সাথে সিডিএ চেয়ারম্যানের কথা হয়েছে। সিডিএ অনন্যাতে যে প্রকল্প নিয়েছে সেখানে আমরা সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করব।

“আমরা সিটি করপোরেশনের ওপর ভরসা করব না। কখন সিটি করপোরেশন আসবে, কখন ময়লা নিয়ে যাবে, সেটার জন্য বসে থেকে লাভ আছে?”

সিডিএর অন্য সকল পরিকল্পনায় ‘সলিড ওয়েস্ট বেইসড ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট’ করারও কথা জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্যের বিষয় চট্টগ্রামে কোনো সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নাই। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা দিয়ে আমরা একটা ৮ বাই ১২ ফুট ড্রেন করেছি শেখ মুজিব রোডে, সেটার ভেতর দিয়ে সব কর্ণফুলীতে যায়।

“ভাগ্য ভালো কর্ণফুলীতে জোয়ার ভাটা ছিল, না হলে বুড়িগঙ্গার মতো নাকে হাত দিয়ে হাঁটতে হতো।”

নগরীর বিভিন্ন স্থানে হকার বসার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, “উই বিল্ট ইন অ্যা হকার মার্কেট, নো হকার গোজ দেয়ার। সে হকার মার্কেটগুলো আমাদের নেতারা দখল করে।”

এসময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ পাঁচলাইশ জাতিসংঘ শিশু পার্ক ও আগ্রবাদ জাম্বুরি মাঠের মালিকানা নিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনের টানাটানির প্রসঙ্গটিও তোলেন।

পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা গণপূর্ত বিভাগের মালিকাধীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ওখানে একটা পার্ক করব। সিটি করপোরেশন বলে তারা নাকি দখলী সূত্রে মালিক। ওটা কি কেউ হতে পারে?”

আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠে গণপূর্ত অধিদপ্তরের করা পার্কের জন্য থেকে ২৫ কোটি টাকা ছাড় পাওয়ায় পরিকল্পনামন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ে মোশাররফ বলেন, “চসিক ওখানেও অবজেকশন দিছে। তারা নাকি মালিক, ওখানে ওনারা কমার্শিয়াল পার্ক করবে।”

তিনি প্রশ্ন করে বলেন, “গণপূর্তের সম্পত্তি কি কেউ নিতে পারবে? কোনোদিন পারবে না। এখন বলবে আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পাইছি। কোন উত্তরাধিকার সূত্রে পাইছেন?’’

আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র। বেশকিছুদিন ধরেই পার্ক করা নিয়ে নাছির ও মোশাররফের মধ্যে কথার পাল্টাপাল্টি চলছে।

এদিকে মন্ত্রী বক্তব্য শেষ করে চলে যাওয়ার পর করপোরেশনের প্যানেল মেয়র হাসান মাহমুদ হাসনি তার বক্তব্যে মন্ত্রী মোশাররফের সমালোচনা করেন।

শনিবার চট্টগ্রামের ডিসি হিল পার্কে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালান মন্ত্রী মোশাররফ।

সেই প্রসঙ্গ টেনে হাসনি বলেন, “আমাদের গণধোলাইয়ের জন্য ডাকা হয়েছে কি না? আমি ১২ বছর ধরে কাউন্সিলর, প্যানেল মেয়রের দায়িত্বে আছি, মাননীয় মন্ত্রী আগেও মন্ত্রী ছিলেন। উনি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে আগেও বলেছিলেন ডিসি হিল পরিষ্কার করার জন্য। আমি সিটি করপোরেশনের মানুষ দিয়ে করিয়েছি।”

মেয়র নাছিরের সমর্থক হিসেবে পরিচিত দেয়ানবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসনি বলেন, “আমি জানি না মেয়রের সাথে মন্ত্রীর কোথায় ডিফারেন্স রয়েছে? উনার (মন্ত্রী) কথায় মনে হয় সিটি করপোরেশন যেন এ শহরের কিছুই না। এ শহরে সিটি করপোরেশনের দরকার নাই।’’

মন্ত্রীর সাথে একটি পার্ক নিয়ে সিটি করপোরেশনের সমস্যা হচ্ছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসনি বলেন, “আগের মেয়রের (মনজুর আলম) আমলেও পার্কটি ছিল। তখন তো সমস্যা হয়নি।”

আবর্জনা নিয়ে মন্ত্রীর সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন নগরীর উন্নয়নে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। হাউস-টু-হাউস আবর্জনা সংগ্রহ হয়তো শতভাগ হচ্ছে না। কিন্তু আর্বজনা পরিষ্কার আগের চেয়ে অনেক ভাল।”

অনুষ্ঠানে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামও বক্তব্য রাখেন।