সিডিএর প্রকল্পে ‘অসঙ্গতি’ দেখছেন নাছির

চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএর সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে ‘অসঙ্গতি’ দেখছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2017, 03:28 PM
Updated : 11 Sept 2017, 03:28 PM

সোমবার বিকালে নগরীর আন্দরকিল্লায় নিজ বাসায় খাল উদ্ধারে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রথম সভায় তিনি এসব অসঙ্গতির কথা তুলে ধরেন।

এর আগে বিকাল ৩টায় এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনেও একই মন্তব্য করেন মেয়র নাছির।

টাস্কফোর্সের সভায় মেয়র নাছির বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বলছে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ওয়াসা যে মহাপরিকল্পনা করেছে (ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান) তার আলোকেই তারা জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প নিয়েছে।

“কিন্তু আমরা দেখছি তা অনুসরণ করা হয়নি। প্রকল্পে ওয়াসার সুপারিশের সঙ্গে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে।”

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণ সদিচ্ছা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এভাবে অসঙ্গতির মধ্যে যদি প্রকল্প শেষ হয় আর যদি জলাবদ্ধতা পুরোপুরি নিরসন না হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার অপমৃত্যু হবে এবং টাকার অপচয় হবে। তাই সিডিএর প্রকল্প সংশোধন না করে বাস্তবায়ন হলেও সুফল আসবে না।”

গত ৯ অগাস্ট ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ নামে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) উদ্যোগে নেওয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার, গণপূর্ত ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

ওই প্রকল্পের আওতায় খালের মাটি খনন, কাদা অপসারণ, নালা সংস্কার ও নির্মাণসহ বৈদ্যুতিক বাতি স্থাপনের মত কাজও সিডিএ বাস্তবায়ন করবে।

এই প্রকল্প অনুমোদনের পর নগরীর দখল হওয়া খাল উদ্ধারে সিটি করপোরেশনের শুরু করা উচ্ছেদ অভিযানে ভাটা পড়ে এবং সিডিএর সাথে সিটি করপোরেশনের শীতল সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এর মধ্যে গত ২৮ অগাস্ট স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক অফিস আদেশে চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রাকৃতিক খালসমূহ থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।

টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক করা হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রকে।

সোমবার টাস্কফোর্সের প্রথম সভার আগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মেয়র নাছির বলেন, খাল উদ্ধারে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। অনেক স্থানে এমনভাবে খাল দখল হয়েছে যে পায়ে হেঁটে যাওয়ার সুয়োগও নেই। যন্ত্রপাতি নেওয়াও সম্ভব না।

“টপ প্রায়োরিটি লিস্ট করব। চাইব একটা একটা ধরে শেষ করতে। চাক্তাই খাল দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায়। আর সাম্প্রতিক আলোচনায় মহেশখাল। এ দুটোকে প্রাধাণ্য দেওয়া হবে।”

খালের ওপর সিটি করপোরেশনের স্থাপনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নাছির বলেন, “করপোরেশনের কিছু স্থাপনা আছে। শুরুতে হয়ত করতে পারব না। তবে আমার উপর আস্থা রাখতে পারেন। আইনের ঊর্ধ্বে করপোরেশন নয়।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, সময় বেঁধে দিয়ে খালের ওপর গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সম্ভব নয়। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নগরীর ৫৭টি খালের ওপর গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র ওয়াসাপ্রণিত মাস্টারপ্ল্যান অনুসারে সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে টাইডাল রেগুলেটর, স্লুইস গেট, খনন হবে এমন খালের সংখ্যা, সিল্ট ট্র্যাপের সংখ্যা, রিটেইনিং ওয়ালের, নালা পরিষ্কার, নালা নির্মাণ ও রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়নি বলে তুলে ধরেন।

টাস্কফোর্সের সভায় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের প্রতিনিধি উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মিজানুর রহমান বলেন, প্রয়োজনে সিডিএর ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) সংশোধন হতে পারে। প্রকল্পে খাল উদ্ধার ও উচ্ছেদের বাজেট না থাকলে তা রাখা যায়।

সভায় উপস্থিত সিডিএর প্রতিনিধির কাছে খালের দখল উচ্ছেদে তাদের প্রকল্পে বরাদ্দ আছে কি না তা মেয়র জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি।

এরপর মেয়র নাছির টাস্কফোর্সের পরবর্তী সভায় সিডিএর প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠাতে বলেন।

সভায় সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর, জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, নগর পুলিশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।