জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ-সিসিসি ‘সমঝোতা’

চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সমঝোতা স্মারক অনুষ্ঠানে বিবদমান দুই সরকারি সংস্থার প্রধান পারস্পরিক সহযোগিতার ঘোষণা দিলেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 April 2018, 08:40 AM
Updated : 9 April 2018, 08:40 AM

সোমবার পাঁচ তারকা রেডিসন ব্লু হোটেলে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাথে সেনাবাহিনীর সমঝোতা স্মারক সাক্ষর হয়।

সেই অনুষ্ঠানে এতদিন জলাবদ্ধতা ইস্যুতে বিপরীত মেরুতে থাকা দুই সংস্থা- চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) ও সিডিএর দুই কর্ণধার পারস্পরিক সহযোগিতার ঘোষণা দিলেন।

অনুষ্ঠানে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম প্রকল্প বাস্তবায়নে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ সিটি করপোরেশনের সবার ‘সহযোগিতা’ চেয়েছেন।

জবাবে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির ‘শতভাগ সহযোগিতা’র আশ্বাসও দিয়েছেন।

অবশ্য এর আগে পাঁচ হাজার ছয়শ কোটি টাকার এই জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প নিয়ে পরষ্পর বিরোধী অবস্থানে ছিলেন সিটি মেয়র নাছির ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।

তবে সবশেষ গত রোববার সমঝোতা স্মারক সাক্ষর অনুষ্ঠানে মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরকে আমন্ত্রণ জানাতে নগর ভবনে যান দলের নগর কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।

সোমবারের অনুষ্ঠানে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, পদ্মা সেতুর পর বাংলাদেশের বড় প্রকল্প চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প। চট্টগ্রামবাসী এতদিন আতঙ্কে ছিল জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে কি না।

“এখন এমওইউ সাক্ষরের মধ্য দিয়ে এই আতঙ্ক দূর হবে। এরপর হবে বাস্তবায়ন। ২০১৬ সালে ওয়াসার করা ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।”

সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, সিটি করপোরেশনের মেয়র-কাউন্সিলরসহ সবাইকে অনুরোধ করছি সহযোগিতা করার জন্য। তারা একাজে অভিজ্ঞ। মেয়রের কাছে প্রত্যাশা তারা অভিজ্ঞতা দিয়ে সহযোগিতা করবেন।

এরপর অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, আমাদের প্রকৌশল ও পরিচ্ছন্নতা বিভাগ নিয়ে যেভাবে সহযোগিতা করা প্রয়োজন তা শতভাগ করব। জলাবদ্ধতা নিরসন নগরবাসীর জন্য।

“যত দ্রুত আমরা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হব তত মঙ্গল। নগরবাসীর কাছে অনুরোধ- বলা যত সহজ, করা তত কঠিন। এই প্রকল্পের সুফল পাব বাস্তবায়নের পর। এটা বুঝতে হবে, ধৈর্য্য ধরতে হবে।”

খালে ও ড্রেনে ময়লা-আর্বজনা ফেলার অভ্যাস পরিহার করতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, এটা বন্ধ না হলে প্রতিদিন মাটি তুলেও সুফল মিলবে না। সকলকে সংকীর্ণতা উর্ধে উঠে কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর পক্ষে ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশ ব্রিগেড এর লে. ক. শাহরিয়ার আহমেদ আমিনএবং সিডিএ’র পক্ষে প্রকৌশলী হাসান বিন শামস সমঝোতা স্মারকে সাক্ষর করেন।

এসময় আ জ ম নাছির ও আবদুচ ছালামকে পাশাপাশি দাঁড়াতেও দেখা গেছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার ও প্রকশানা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন উপস্থিত ছিলেন।

গত ৯ অগাস্ট ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ নামে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) উদ্যোগে নেওয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার, গণপূর্ত ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

ওই প্রকল্পের আওতায় খালের মাটি খনন, কাদা অপসারণ, নালা সংস্কার ও নির্মাণসহ বৈদ্যুতিক বাতি স্থাপনের মত কাজও সিডিএ বাস্তবায়ন করবে।

এই প্রকল্প অনুমোদনের পর নগরীর দখল হওয়া খাল উদ্ধারে সিটি করপোরেশনের শুরু করা উচ্ছেদ অভিযানে ভাটা পড়ে এবং সিডিএর সাথে সিটি করপোরেশনের শীতল সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এরপর গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর খালসমূহ থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও মনিটরিং টাস্কফোর্সের সভায় সিটি মেয়র নাছির সিডিএ’র প্রকল্পে ‘অসঙ্গতি’ আছে বলে অভিযোগ করেন।

এদিকে আসন্না বর্ষাকে লক্ষ্য রেখে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে খাল খনন শুরু করলেও সিডিএ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে সরাকারি অনুমোদন (জিও) পাওয়ার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চেয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান বরাবরে চিঠি দেয় সিসিসি।

চিঠির জবাবে সিডিএ খাল খনন কার্যক্রম চালু রাখতে বললেও এ খাতে প্রকল্পের অধীনে সিসিসিকে ব্যয় পরিশোধ সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয়া হয়।

এরপর গত মার্চের শেষ সপ্তাহে খাল খনন কার্যক্রম বন্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় সিটি করপোরেশন।

একারণে জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প কাজ শুরু হতে চললেও নিয়মিত খাল খনন না হওয়ায় এই বর্ষাতেও মারাত্মক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা নগরবাসীর।