সিআইডির আবেদনের প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর লাশ কবর থেকে তুলে পুনঃময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
Published : 06 Dec 2016, 07:28 PM
চট্টগ্রামের বিচারিক হাকিম শিপলু কুমার দে মঙ্গলবার বিকালে এই আদেশ দেন।
প্রথমবার ময়নাতদন্তকারী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষকরা পুনঃময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকছেন না। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের শিক্ষকদের দিয়ে তা করাতে বলেছে আদালত।
আদেশে বলা হয়েছে, বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুনঃময়নাতদন্তের জন্য লাশ কবর থেকে উত্তোলনের ব্যবস্থা করবেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে তাদের মাধ্যমে পুনঃময়নাতদন্ত করবেন।
গত ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেইট এলাকায় ভাড়া বাসায় নিজের কক্ষ থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
তিন দিন পর দিয়াজের যে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাটহাজারী থানা পুলিশকে দেওয়া হয় তাতে তিনি ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। সেদিনই ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে দিয়াজের পরিবার।
দিয়াজের বোন আইনজীবী জুবাইদা সারোয়ার চৌধুরী অভিযোগ করেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরির সময় নিয়ম বহির্ভূতভাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন। তার উপস্থিতিতে ‘এক নেতার নির্দেশে’ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ‘প্রভাবিত’ করা হয়েছে।
‘সত্য’ উদঘাটনে ওই অধ্যক্ষের মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাইয়ের দাবি জানান তিনি।
পুনঃময়নাতদন্তের আদেশের প্রতিক্রিয়ায় জুবাইদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা শুরু থেকেই বলছি, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রভাবিত করা হয়েছে। সুরতহালের সাথে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের মিল নেই।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নির্মাণ কাজের জন্য ৯৫ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে দিয়াজের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুর বিরোধ চলছিল।
সেই বিরোধ, চাঁদা দাবিসহ নানা কারণে ‘ষড়যন্ত্র’ করে টিপুকে হত্যার পর লাশ ঘরে ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে শুরু থেকেই দাবি দিয়াজের পরিবারের।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজ এবং বর্তমান সভাপতি টিপু দুজনই সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী।
দিয়াজের মৃত্যুর ঘটনায় তার মা গত ২৪ নভেম্বর আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ছাত্রলীগ নেতা টিপু ছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীসহ ১০ জনকে আসামি করা হয় ওই মামলায়।
আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে।
তারপর দিয়াজের পুনঃময়নাতদন্তের জন্য আবেদন করা হয় বলে সিআইডির এএসপি অহিদুর রহমান জানান।
এদিকে দিয়াজের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আন্দোলনের মুখে গত ২৮ নভেম্বর সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে অপসারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।