এসএসসি’তে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে গণিতের খাতা কাটায় ‘কারিগরি ত্রুটি’ হয়েছে দাবি করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ‘সঠিক ফল’ প্রকাশের দাবি জানিয়েছে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
Published : 16 May 2016, 07:42 PM
সোমবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ‘এসএসসি ২০১৬ গণিত পরীক্ষার ফল বিপর্যস্ত শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ফোরাম’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
গণিতের ‘গ’ ও ‘ঘ’ সেটের বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) খাতা মূল্যায়নের সময় বাংলা মাধ্যমের খাতা ইংরেজি মাধ্যমের প্রশ্নের উত্তর অনুসরণ করে কাটা হয়েছে বলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এই ফোরামের দাবি।
সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আলাউদ্দিন বলেন, গণিতের গ ও ঘ সেটের খাতা মূল্যায়নে কারিগরি ত্রুটির কারণে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ফল বিপর্যয় ঘটেছে।
“ফল ঘোষণার পর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে খোঁজ নিয়ে কারিগরি ত্রুটির বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হই। শুধু বহুনির্বাচনী অংশের খাতা পুর্নমূল্যায়ন করলেই হাজার হাজার শিক্ষার্থী সব বিষয়ে এ-প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হবে।”
শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তারা খাতা মূল্যায়নে কোনো ধরণের ‘কারিগরি ত্রুটির’ কথা সরাসরি স্বীকার না করলেও ‘ত্রুটি’ অনুসন্ধানে বোর্ডের একটি দল কাজ করছে। ফল নির্ধারণে কোনো ধরনের ভুল হয়ে থাকলে তা দ্রুততম সময়ে সংশোধনেরও আশ্বাস দিয়েছেন তারা।
১১ মে সারাদেশে একযোগে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। বোর্ডে এবার পাসের হার ৯০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে সাত হাজার ৬৬৬ জন।
গণিতে এবার পাসের হার ৯৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। যা গতবার ছিল ৯১ শতাংশ। গণিতে ভর করেই এবার বোর্ডের সার্বিক ফলাফলে উন্নতি বলে জানান শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তারা।
তবে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবি, এবার প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী অন্য নয় বিষয়ে এ প্লাস পেলেও গণিতে না পাওয়ার কারণে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
ফল প্রকাশের পরদিন ১২ মে থেকে চট্টগ্রামের প্রথম সারির বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন।
“শুধু ৮০ বা ১০০ পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছি না। ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবনকে রক্ষা করতে আন্দোলন করছি। এ ফল বিপর্যয়ের কারণে অনেকে ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারব না।”
কলেজিয়েট স্কুলের ইফতেখার ইবনে জালাল বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ের মেহেদী হাসান নওশাদ জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে চতুর্থ। সেও গণিতে এ-প্লাস পায়নি।
“অন্য কারো ভুলের দায়ভার যোগ্য ও মেধাবীরা কেন নেবে?”
ফোরামের সদস্য সচিব মো. শওকত আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গ ও ঘ সেটে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের এমসিকিউ প্রশ্নের ক্রমিক একই রকম নয়।
“ইংরেজি মাধ্যমের পরীক্ষার্থীরা কেউ কাঙ্খিত ফল না পাওয়ার অভিযোগ করেনি। সম্ভবত এ দুই সেটে ইংরেজি মাধ্যমের এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর অনুসরণ করে বাংলা মাধ্যমের খাতা কাটা হয়েছে।”
শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেছেন জানিয়ে শওকত আলী বলেন, বরিশাল বোর্ড একদিনের মধ্যে যাচাই করে এক হাজার শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন করলে চট্টগ্রাম বোর্ড কেন পারবে না?
“গত বছর গণিতে আড়াই হাজার শিক্ষার্থী এ প্লাস পেলেও এবার পেয়েছে মাত্র এক হাজার ৯০০ জন। শুধু গণিতের জন্যই কমপক্ষে এক হাজার শিক্ষার্থী সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে।”
১৮ মে পর্যন্ত মোবাইলে আবেদনের মাধ্যমে ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা যাবে।
তার আগেই যাচাই-বাছাই শেষে ত্রুটি সংশোধন করে ফল প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন শওকত আলী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একটি দল বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
“যদি ত্রুটি থাকে অবশ্যই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশোধন করা হবে।”
বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের খাতা মূল্যায়নে ‘কারিগরি ত্রুটি’র বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুব হাসান বলেন, সেরকম কিছু ঘটেছে কি না তা এখনই বলতে পারছি না।
কত জন শিক্ষার্থী এ ধরণের অভিযোগ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন শেষে ১৯ মে বলতে পারব।