বাঁশখালী গণ্ডামারায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতায় সংঘর্ষে চারজন নিহতের পর জেলে যাওয়া ১২ জন জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।
Published : 20 Apr 2016, 01:58 AM
সংঘর্ষের মামলায় গ্রেপ্তারদের জামিন করাতে সহযোগিতা ও মামলা তুলে নেওয়ায় জেলা প্রশাসকের আশ্বাসের তিনদিনের মধ্যে জামিন পেয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হলেন তারা।
মঙ্গলবার বিকালে ছাড়া পাওয়ার পর তাদের নিয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করেন গণ্ডামারা ইউনিয়ন বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী।
সম্মেলনে বাঁশখালী থেকে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প চলে যাওয়া গণ্ডামারাবাসী চায় না মন্তব্য করলেও একইসঙ্গে পরিবেশের ক্ষতি করে ওই এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও এলাকাবাসী চাইছে না বলে জানান তিনি।
গণ্ডামারার বড়ঘোনায় ৬০০ একর জমিতে ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চীনের সহায়তায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে এস আলম গ্রুপ। ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে স্থানীয়রা এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করছে। তাদের অভিযোগ, এস আলম গ্রুপ পুনর্বাসনের সুযোগ না দিয়ে জোর করে জমি অধিগ্রহণ করছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে গিয়ে গত ৪ এপ্রিল বিকালে পক্ষ-বিপক্ষে সংঘর্ষে চার জন নিহত হন। পরে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হলে গ্রামবাসীর ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপরও বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতায় অনড় গ্রামবাসীকে সরকার ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে এলাকাবাসীর ক্ষোভের কথা শোনার আশ্বাস দিলে ১৫ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করে বিদ্যুৎকেন্দ্র বিরোধীরা।
এরপর দাবি অনুযায়ী সংঘর্ষে নিহতের পরিবার ও আহতদের ৮২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেম যাতে ওই জামিনের আশ্বাস দেওয়া হয়।
আন্দোলকারীদের নেতা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “মানুষ পরিবেশের ক্ষতি করে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চায় না। আবার ভুল বোঝাবুঝির কারণে বাঁশখালী থেকে একটা উন্নয়ন প্রকল্প চলে যাক সেটাও চায় না।”
তাদের নয় দফা দাবির মধ্যে সরকার ইতোমধ্যে তিনটি মেনে নিয়েছে বলে জানান তিনি।
লিখিত বক্তব্যে গণ্ডামারা ইউনিয়ন বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, সরকার তিনটি দাবি মেনে নিলেও অন্য দাবিগুলো দ্রুত মেনে নেয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
অন্য দাবিগুলোও দ্রুত মেনে নেওয়ার দাবি জানিয়ে গণ্ডামারা ইউনিয়ন বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তর এখনও ছাড়পত্র দেয়নি।
মাহমুদুল ইসলাম বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সহনীয় ও অসহনীয় দুইটি ইস্যুকে নিয়ে আমরা দাবি জানিয়েছি।
তিনি বলেন, “এক নম্বর দাবি অনুযায়ী আমরা গ্রেপ্তারদের পাঁচদিনের মধ্যে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। সে হিসেবে তারা মুক্তি পেয়েছে পাঁচদিনের মধ্যে। এছাড়া ক্ষতিপূরণের দাবিও সরকার মেনে নিয়েছে।
মাহমুদুল ইসলাম বলেন, “চার নম্বর দাবি অনুযায়ী কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করতে বলেছিলা।এখন পর্যন্ত নতুন করে কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।”
সংঘর্ষের সময় নেতৃত্বদানকারী গণ্ডামারার সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা লেয়াকত আলীর বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মাহমুদুল বলেন, “আন্দোলনের সময় কোনো কমিটি ছিল না, ছিল ব্যক্তিবিশেষ আন্দোলন। উনি এলাকায় না থাকায় কমিটিতে নেই।”
তবে লেয়াকত কমিটির সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রেখেছে বলে দাবি করেন তিনি।