চট্টগ্রামে তেলের সঙ্গে মিশিয়ে তরল কোকেন আনার ঘটনায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিন হেফাজতে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত।
Published : 17 Jan 2016, 03:48 PM
রোববার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম রহমত আলী আসামির পক্ষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রশিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নুর মোহাম্মদকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। আদালত তিন দিনের রিমান্ডই মঞ্জুর করেছেন।
এর আগে খান জাহান আলী লিমিটেডের মালিক নুর মোহাম্মদকে শুক্রবার র্যাব-৭ এর সদর দপ্তরে ডেকে নেওয়া হয়। তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকেলেই আদালতে হাজির করার পর রাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
আসামি পক্ষের আইনজীবী ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসি প্রশিকিউশন আদালতে নুর মোহাম্মদকে আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের সদস্য বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু কোন চক্রের কোন পর্যায়ের সদস্য সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি।”
এছাড়া পুলিশের দেওয়া এ মামলার অভিযোগপত্রেও আসামি নুর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই দাবি করে তিনি বলেন, “নুর মোহাম্মদ এই পণ্য আনার জন্য কোনো এলসি (ঋণপত্র) করেননি।
“খান জাহান আলী লিমিটেডের সম্পৃক্ততার বিষয়েও কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। কন্টেইনারটি কে-কাকে পাঠিয়েছে এবং বন্দরে কে আনলোড করেছে সে বিষয়েও কোনো তথ্য নেই।”
এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর এ মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণের বিষয়ে শুনানির দিনে অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে মামলাটির অধিকতর তদন্ত করতে র্যাবকে নির্দেশ দেয় আদালত।
মামলার এক আসামি ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উল্লেখ করেন জানিয়ে আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেননি।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ৭ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা একটি কনটেইনার আটক করে সিলগালা করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, বলিভিয়া থেকে আমদানি করা সূর্যমুখী ভোজ্যতেলবাহী কনটেইনারটি জাহাজীকরণ হয় উরুগুয়ের মন্টেভিডিও বন্দর থেকে। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে গত ১২ মে কনটেইনারটি এসে পৌঁছায় চট্টগ্রাম বন্দরে।
এ ঘটনায় ২৮ জুন চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানায় নুর মোহাম্মদ ও তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী গোলাম মোস্তফা সোহেলকে আসামি করে মাদক আইনে একটি মামলা করে পুলিশ ।
পরে আদালত মামলাটিতে চোরাচালানের ধারা সংযোগের নির্দেশ দেয়।
গত ১৯ নভেম্বর এ ঘটনায় মাদক আইনে করা মামলায় আট জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (দক্ষিণ) মো. কামরুজ্জামান।
১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য আইনের ১৯ (১) এর খ ধারায় এবং দণ্ডবিধির ৩৩ (১) ধারায় দেওয়া অভিযোগপত্রে মোট ৫৮ জনকে সাক্ষী করা হয়।
নুর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয় অভিযোগপত্রে।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- খান জাহান আলী লিমিটেডের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সোহেল, মো. মোস্তফা কামাল, আইটি বিশেষজ্ঞ মেহেদী আলম, গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী মো. আতিকুর রহমান, সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (করপোরেট, বিক্রয় ও বিপণন) এ কে আজাদ এবং যুক্তরাজ্যের দুই নাগরিক ফজলুর রহমান ও বকুল মিয়া।
অভিযুক্তদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের নাগরিক ফজলুর রহমান ও বকুল মিয়া পলাতক এবং সাইফুল ইসলাম গত ২ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতের জামিন নিয়ে কারাগার থেকে ছাড়া পান।