সিআইডির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রভাবিত হয়ে, অভিযোগ দিয়াজের মায়ের

“আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। অথচ আসামিরা জানে,” বলেন জাহেদা আমিন চৌধুরী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2023, 03:21 PM
Updated : 23 Feb 2023, 03:21 PM

চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলায় সিআইডির দেওয়া ‘চূড়ান্ত প্রতিবেদন’ প্রত্যাখ্যান করে তার মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বলছেন, তার ছেলে আত্মহত্যা করেনি, তাকে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা’ করা হয়েছে।

তদন্তকারী সংস্থা ‘প্রভাবিত হয়ে’ এমন প্রতিবেদন দিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আগে বাদী হিসেবে তার সঙ্গেও কথা বলেনি সিআইডি, অথচ মামলার এক আসামি ফেইসবুকে ওই খবর জানিয়েছে।

এরআগে ২০২১ সালেও মামলার তদন্ত ‘প্রভাবিত’ করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছিলেন জাহদা আমিন চৌধুরী।

প্রায় ছয় বছর তদন্তের পর বৃহস্পতিবার বিকেলে এ মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আবদুস সালাম মিয়া। সেখানে বলা হয়, দিয়াজকে হত্যা করা হয়নি, ওই তরুণ ‘আত্মহত্যা’ করেছিলেন।

একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দিয়াজের মা ও মামলার বাদী জাহেদা আমিন চৌধুরী বৃহস্পতিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি খুবই অসুস্থ। শরীরে আর পারছি না, তাই গতকাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।

“আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। অথচ আসামিরা জানে। তারা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়। আমাকে না জানিয়ে সিআইডি এরকম (চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া) করতে পারে না। তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) কিন্তু আমাকে ডাকবে বলেছিল। ডাকেনি। আমার সাথে কথা না বলেই তারা প্রতিবেদন কীভাবে দিল?”

দিয়াজের মা বলেন, “সিআইডি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীর কাছ থেকে সাক্ষ্য নিয়েছিল। স্থানীয় এক দোকানদার তাদের কাছে সাক্ষী দেন। এমনকি প্রতিবেশী এক মহিলার কাছ থেকেও সাক্ষী নেন।

“তখন আইওসহ সিআইডির লোকজন বলেছিলেন, তারা ক্লু পেয়েছেন। এখন কেন, কীসের জন্য তারা এটা করেছে তা জানি না।”

শুরু থেকেই দিয়াজের মায়ের দাবি, মামলার আসামিরা ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ‘নানাভাবে তদন্ত কাজ প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে’।

বৃহস্পতিবারও তিনি বলেন, “সিআইডি কীসের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এমন রিপোর্ট দিল বুঝতে পারছি না। আমার আগেই মনে হচ্ছিল, তাই তদন্ত বিষয়ে অনাস্থা জানিয়ে সিআইডি প্রধান কার্যালয়ে একটি চিঠি দিয়ে এসেছিলাম ২০২১ সালে। যাদের বিষয়ে অনাস্থা দিয়েছি তারা কীভাবে প্রতিবেদন দিল?”

২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) দক্ষিণ ক্যাম্পাসে নিজের বাসা থেকে উদ্ধার হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত মরদেহ।

দিয়াজের মৃত্যুর তিন দিন পর ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের দেওয়া প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হয়। তার ভিত্তিতে হাটহাজারী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করে পুলিশ।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নির্মাণ কাজের দরপত্র নিয়ে কোন্দলের সূত্র ধরে এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যা’ বলে শুরু থেকেই দিয়াজের পরিবার ও তার অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মীরা দাবি করে আসছিলেন।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ওই বছরের ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদী হয়ে আদালতে হত্যা মামলা করেন।

তাতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সে সময়ের সভাপতি আলমগীর টিপু, সেসময়ের সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী, তাদের অনুসারী রাশেদুল আলম জিশান, আবু তোরাব পরশ, মনসুর আলম, আবদুল মালেক, মিজানুর রহমান, আরিফুল হক অপু ও মোহাম্মদ আরমানকে আসামি করা হয়।

আসামিরা সবাই চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। দিয়াজও ছিলেন নাছিরেরই অনুসারী।

দিয়াজের মায়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা। এজন্য তখন তারা চট্টগ্রামে দিয়াজের লাশ উদ্ধারের স্থানেও যান।

২০১৭ সালের ৩০ জুলাই দেওয়া দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তারা বলেন, দিয়াজের শরীরে ‘হত্যার আলামত’ রয়েছে। ওই প্রতিবেদনের পর দিয়াজের মায়ের করা এজাহার হত্যা মামলা হিসেবে নিতে হাটহাজারী থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।

এখন সিআইডি যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে জাহেদা আমিন চৌধুরী বলেন, “মামলা আছে, আদালতও আছে। আল্লাহই সব। আমার আল্লাহর উপর ভরসা আছে। আমার এক রাকাত নামাজও যদি আল্লাহর দরবারে কবুল হয় আমার ছেলে হত্যার বিচার হবে।

Also Read: ‘আত্মহত্যা করেছিলেন’ দিয়াজ, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জানাল সিআইডি

“আমার টাকা-পয়সা নেই। আমি অসুস্থ। কিন্তু ছেলে হত্যার বিচারের জন্য আমি শেষ পর্যন্ত লড়াই করব। আমার ছেলে আত্মহত্যা করেনি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।”

দিয়াজের মায়ের অভিযোগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আবদুস সালাম মিয়াকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হত্যা মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু তদন্তে আমরা পেয়েছি দিয়াজ আত্মহত্যা করেছে। তাই ‘তথ্যগত ভুল’ উল্লেখ করে আমরা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তদন্তে যা পেয়েছি সে অনুযায়ীই প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।”

আদালতে দেয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি পাওয়ার পর আদালতে নারাজি আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন দিয়াজের বোন আইনজীবী জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা।

পুরনো খবর

·         দিয়াজের মৃত্যুর ৫ বছর: তদন্ত ‘প্রভাবিত’ করার অভিযোগ মায়ের

·         চার বছরেও তদন্ত শেষ হয়নি, ‘পলাতক’ আসামিরা প্রকাশ্যে

·         নিজের ঘরে ছাত্রলীগ নেতার ঝুলন্ত লাশ

·         দিয়াজের মৃত্যু ঘিরে নানা প্রশ্ন সন্দেহ

·         হত্যা মামলা করলেন দিয়াজের মা

·         দিয়াজ আত্মহত্যা করেছেন: ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন

·         আত্মহত্যা নয়, খুন হয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ: সিআইডি

·         দিয়াজ হত্যামামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ আদালতের 

·         বিচার চেয়ে মেয়রকে দিয়াজের বোনের খোলা চিঠি

·         মেয়র নাছিরের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন নিহত দিয়াজের মা