নিজের ফেইসবুক পাতায় মঙ্গলবার রাত ১১টায় ৪৫৮ শব্দের এক পোস্টে এই খোলা চিঠি দেন দিয়াজের বোন জুবাঈদা।
সেখানে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনকে ‘নেতা’ সম্বোধন করে দিয়াজ খুনের আগের ও পরের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরা হয়।
নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে খোলা চিঠি দেওয়ার বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক দিয়াজ ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি।
দিয়াজের মৃত্যুর পর তার মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদী হয়ে যে হত্যা মামলা করেন তার অন্যতম প্রধান আসামি আলমগীর টিপু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি।
গত বছরের ২০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেইট এলাকার নিজ বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এর আগে গত বছরের ২৯ অক্টোবর দিয়াজসহ চার ছাত্রলীগ নেতার বাসায় ভাংচুর চালায় প্রতিপক্ষ। এ ঘটনার জন্যও আলমগীর টিপু ও তার অনুসারীদের দায়ী করে দিয়াজের পরিবার।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন কলা ভবন ও শেখ হাসিনা হলের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের দরপত্রকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের বিরোধে দিয়াজকে খুন করা হয় বলে দাবি তার অনুসারীদের।
ফেইসবুকে দেওয়া খোলাচিঠির সঙ্গে গত বছরের ১ অক্টোবর দিয়াজের একটি ফেইসবুক পোস্টও শেয়ার করেন জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা।
ওই পোস্টে মেয়র নাছিরের সঙ্গে তোলা একটি ছবি দিয়ে দিয়াজ লিখেছিলেন, “কত অভিমান থাকে মনে, কিন্তু আপনার সাথে কথা বললে, আপনার দিকনির্দেশনা শুনলে মুহূর্তেই মনটা ভাল হয়ে যায়। প্রিয় নেতা, আপনার তুলনা আপনাতেই….।”
এ প্রসঙ্গে খোলাচিঠিতে দিয়াজের বোন জুবাঈদা লেখেন, “নেতা, জানিনা দিয়াজের আপনার উপর কিসের অভিমান ছিল! দিয়াজ বলে যাওয়ার সুযোগ পায়নি।
“দিয়াজ আর আমাদের আপনি ডেকেছিলেন কথা বলার জন্য, যেদিন দিয়াজকে বলেছিলেন তুমি ওপেন ঘুড়তে পারবে, ক্যাম্পাসে যেতে পারবে, দিয়াজের মা আমার মা, দিয়াজ সোনার টুকরো ছেলে, যেদিন আপনি আলমগীর টিপুকে আমাদের ঘড় ভাংচুরের মামলা থেকে বাদ দিতে বলেছেন, যেদিন আপনি কথা দিয়েছিলেন আমার দিয়াজের সার্টিফিকেট, ল্যাপটপ থেকে শুরু করে লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া আমার মায়ের সব সম্পদ উদ্ধার করে দিবেন, সেদিন দিয়াজ আপনার ড্রয়িংরুমে বসে ভিতরের রুমে আমাকে বারবার এসএমএস করছিল- ‘নাসির ভাইয়ের সাথে তর্ক করবেন না, সব জিরো হয়ে যাবে। নাসির ভাই যা বলে মেনে নেন’।”
“দিয়াজ যেহেতু আপনাকে মায়ের চেয়ে বেশি বিশ্বাস করতো, তাই ওর হত্যার পর আমরা আপনার কাছে ছুটে গিয়েছিলাম। আপনি আমাদের বলেছিলেন দিয়াজ আত্মহত্যা করেছে, আপনার কিছু করার নেই। আমার ঠিক তখনি দিয়াজের পাঠানো এসএমএসের কথা মনে পড়ে গেল।”
দিয়াজ খুনের পর আলমগীর টিপুর ও তার অনুসারীরা একে ‘আত্মহত্যা’ বলে দাবি করছিল। প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হয়।
পরে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষাপটে আদালতের নির্দেশে করা দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দিয়াজকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়।
সেসময়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জুবাঈদা লেখেন, “আমি আপনাকে (নাছির) অনেক বলেছি- আপনি বুকে হাত দিয়ে বলেন দিয়াজ আত্মহত্যা করেছে; যে দিয়াজ আপনার কথা যতবার উচ্চারণ করেছে, ততবার যদি আল্লাহকে ডাকতো তাহলে সে আওলিয়া হয়ে যেত; সে দিয়াজ আত্মহত্যা করতে পারে না। আপনি আমার কথা মানেন নি।
“যে পুলিশ আপনার অধীনে, যে ডাক্তাররা আপনার রাজনীতি করে, যে ছেলেরা আপনার নাম বিক্রি করে টেন্ডারবাজি করে, তারা সকলে মিলে আপনার কাছে উপস্থাপন করলো দিয়াজ আত্মহত্যা করেছে। দিয়াজের খুনিদের সাথে আপনার হাসিমুখের সেলফি আমাদের হৃদয়কে রক্তাক্ত করতো।”
জুবাঈদা লেখেন, “আপনার সাহায্য না পেয়ে আমরা হতাশ হইনি। কারণ আমরা দিয়াজের রক্ত। আমরা জেনেছিলাম দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের সাথে ছিল কিছু ভালো মানুষ... যারা দিয়াজের আত্মহত্যার নাটক মেনে নেয়নি।
“আজ সত্য প্রতিষ্ঠিত। আজ আপনাকে মানতেই হবে দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে। আজ আইন আপনাকে সে সুযোগ করে দিয়েছে। আপনি দিয়াজের জন্য কী করেছেন তা আমি দেখিনি, তবে আমি দেখেছি দিয়াজ আপনার জন্য কি করেছে। দিয়াজ আপনার হকদার। আপনি পারেন এখন দিয়াজের হত্যার বিচার করতে।”
দিয়াজ হত্যা মামলার আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত করে জুবাঈদা লেখেন, “দিয়াজ হত্যার আসামিরা, দিয়াজের মায়ের ঘর ভাংচুর মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। শুনেছি তারা আপনার সাথে দেখা করার জন্য মরিয়া... রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার জন্য।
“পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আপনার নেতৃত্বে। আপনি পারেন আসামিদের আইনের আওতায় এনে দিয়াজের প্রতি কিছুটা হলেও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে।”
মেয়র নাছিরের উদ্দেশে চিঠিতে জুবাঈদা লেখেন, “হয়তো আপনার সামনে গিয়ে এসব বলতে পারব না বলেই এখানে বলা। দিয়াজের কর্মীরা আপনার কাছে গিয়ে দিয়াজ হত্যার বিচার চাইতে ভয় পায়, কারণ আপনি যদি রাগ করেন! ওরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ভীত। তাই আমি আপনাকে এ খোলা চিঠি লিখলাম।
“সুদীপ্ত হত্যা মামলার আসামিরা ধরা পড়ছে। দিয়াজ কি দোষ করলো? দিয়াজ আপনার একনিষ্ঠ কর্মী ছিল, তাই আপনার কাঁধে দিয়াজ হত্যার বিচারের দায়ভার তুলে দিলাম। বাকিটা আপনার বিবেচনার উপর ছেড়ে দিলাম।”