চট্টগ্রামের বিজ্ঞান মেলায় ‘সাশ্রয়ী বাড়ির’ মডেল

বার্ষিক বিজ্ঞান মেলায় জলবায়ু পরিবর্তন, কাঙ্ক্ষিত শহরের নানা মডেল প্রদর্শিত হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2023, 11:29 AM
Updated : 21 March 2023, 11:29 AM

বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানি সাশ্রয়ী ভবিষ্যৎ বাড়ির মডেলটি যখন অতিথিদের বুঝিয়ে দিচ্ছিল দশম শ্রেণির ছাত্রী মুনিবা পারিহান, ইসরাত হামিদ ও ইবতিদা নিবরাজ, তখন চোখ-মুখের উজ্জ্বলতায় অনুবাদ হচ্ছিল তাদের স্বপ্ন।

মঙ্গলবার ‘হোম অব দ্য নেক্সট সেঞ্চুরি’ নামে এমন একটি প্রকল্প প্রদর্শিত হয় চট্টগ্রামের সেন্ট স্কলাস্টিকাস গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও হস্তশিল্প মেলায়। দিনব্যাপী এই আয়োজনে এমন শখানেক প্রকল্প প্রদর্শিত হয়।

জলবায়ু পরিবর্তন, কাঙ্ক্ষিত শহর, ইলেকট্রোস্টেটিক প্রেসিপিটেটর, স্ট্রিট মডেল ও রেসপিরেটরি সিস্টেমের মত বিষয় নিয়ে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা প্রকল্প নজর কেড়েছে আমন্ত্রিতদের।

নিজেদের প্রকল্প ঘিরে পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে মুনিবা পারিহান বলে, তাদের স্মার্ট বাড়ির প্রকল্পে থাকবে ভূমিকম্প সতর্কতা অ্যালার্ম সিস্টেম, পানির অপচয় রোধে সেন্সর নির্ভর অ্যালার্ম সিস্টেম ও রিসাইক্লিং করা প্লাস্টিক থেকে তৈরি ইট দিয়ে হবে ঝুঁকিহীন সীমানা প্রাচীর।

“কেনিয়াতে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক থেকে এমন ইট তৈরির বিষয়টি অনলাইনে দেখেছি। যদি কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সীমানা দেয়াল ভেঙেও পড়ে, তাহলেও বাড়ির বাসিন্দা বা পথচারী কারও জন্য তা ঝুঁকির হবে না।"

ভবিষ্যতে কম খরচে পরিবেশবান্ধব ‘স্মার্ট হোম’ তৈরি করাই প্রকল্পের লক্ষ্য জানিয়ে এই শিক্ষার্থী বলে, "প্রবেশপথটি সেন্সর নিয়ন্ত্রিত, যাতে কোনোরকম স্পর্শ ছাড়াই আগত ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করতে পারবেন। বিশেষ করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য এটি সহায়ক হবে। প্রবেশপথ ও সীমানা দেয়ালে লেজার রশ্মি থাকবে, যাতে অপরিচিত কেউ এলে বাড়ির বাসিন্দারা নোটিফিকেশন পাবেন।”

পরে এর সঙ্গে আরও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মো. জাহেদুল হক।

এর আগে সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক জাহেদুল হক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “তোমাদের শিক্ষা জীবনের মধ্যেই দেখতে পেয়েছ ডিজিটাল বাংলাদেশ। কিছুদিনের মধ্যে টানেল দিয়ে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে অপর পাড়ে চলে যেতে পারবে। আমাদের এখন স্যাটেলাইট আছে।”

তিনি বলেন, “তোমরাই ভবিষ্যতে নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেবে। তোমরাই ভবিষ্যতের উদ্যেক্তা হবে মেধা-মননের বিকাশের মধ্য দিয়ে- সে সুযোগ করে দিচ্ছে বিদ্যালয়।

“জনগণের রাজস্বের টাকায় তোমাদের শিক্ষার ব্যয় নির্বাহ হচ্ছে। বড় হয়ে এর প্রতিদান তোমাদের দেশকে দিতে হবে। তাই পড়া শেষে দেশ সেবা করে সেই ঋণ শোধ করতে হবে। তোমাদের সামনে অবারিত সুযোগ। নিজেদের স্বপ্ন নিজেরা নির্মাণ করবে। সেই স্বপ্নের লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাবে।”

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সেন্ট স্কলাস্টিকাস গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ফাদার লেনার্ড সি. রিবেরু বলেন, “ক্ষুদ্র প্রয়াসের মধ্যে দিয়ে আমরা বড় কিছুর দিকে ধাবিত হই। বিজ্ঞান হল উদ্ভাবনী শক্তি। আমরা উন্নতি চাই, মঙ্গল ও কল্যাণ চাই। আজকের ছোট ছোট উদ্ভাবনের মধ্যে মিশে আছে মেধা শ্রম চিন্তা। তোমাদের মধ্য থেকেই ভবিষ্যত পাবে নতুন বিজ্ঞানী।”

জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মাগ্রেট মণিকা জিন্স ও শিক্ষক শামাপদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সেন্ট প্লাসিডস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ব্রাদার স্যামুয়েল সবুজ বালা সেন্ট স্কলাস্টিকাস গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শিল্পী সেলিনা কস্তা বক্তব্য দেন।

সেন্ট স্কলাস্টিকাস গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ সিস্টার অসীমা স্কলাস্টিকা রিবেরু, গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি সাথী গোমেজ, গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি কামনাশীল ভট্টচার্য এবং অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক শিক্ষক রাজীব চক্রবর্তী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।