সূর্যাস্তের পর জিইসি থেকে মুরাদপুর ও ষোলশহর থেকে জিইসি র্যাম্প পর্যন্ত অংশ অন্ধকার হয়ে থাকে।
Published : 23 Mar 2025, 12:48 AM
চুক্তি নিয়ে জটিলতার কারণে চট্টগ্রাম নগরীর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের বড় একটি অংশ তিন মাস ধরে বিদ্যুতবিহীন অবস্থায় রয়েছে।
এক সময় যে ফ্লাইওভারটি ছিনতাইয়ের অন্যতম স্থান হয়ে উঠেছিল সেখানে বিদ্যুৎ না থাকায় আতঙ্ক নিয়ে রাতে চলাচল করতে হচ্ছে যানবাহন চালক ও যাত্রীদের।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দুর্ঘটনা ও অপরাধ রোধে ফ্লাইওভারে রাতে আলো থাকা খুব জরুরি।
ফ্লাইওভারটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) সঙ্গে সৌন্দর্য বর্ধনের চুক্তি নিয়ে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের আইনগত জটিলতার কারণে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হচ্ছে না।
এ কারণে তিন মাস ধরে রাতে বাতি জ্বলছে না আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের জিইসি থেকে মুরাদপুর ও ষোলশহর থেকে জিইসি র্যাম্প পর্যন্ত অংশে। এতে সূর্যাস্তের পর থেকেই অন্ধকার হয়ে থাকে ফ্লাইওভারের ওই অংশটি।
যানবাহন চালকরা বলছেন, রাত বাড়তে থাকলে ফ্লাইওভারে যানবাহন চলাচল কমে যায়। যে কারণে অন্ধকার থাকে ফ্লাইওভারটি। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কার কথাও বলেছেন তারা।
২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর নগরীর মুরাদপুর থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত চার লেনের আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়। এরপর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের মার্চে।
২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ফ্লাইওভারটির মূল অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ধাপে ধাপে জিইসি ও ষোলশহরের লুপ এবং র্যাম্পগুলো যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করার পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারসহ চারটি ফ্লাইওভার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এরপর থেকে ফ্লাইওভারগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে চট্টগ্রাম সিটি করেপোরেশন।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ট্রেড ম্যাক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে ২০২০ সালে চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি অনুসারে ফ্লাইওভারের ওই অংশের সড়ক বাতির বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করত প্রতিষ্ঠানটি।
গত বছরের ডিসেম্বরে সেই চুক্তি বাতিল না করে সৌন্দর্য বর্ধনে আবার দরপত্র আহ্বান করে সিটি করপোরেশন। এরপর তা নিয়ে আদালতে যায় ট্রেড ম্যাক্স। তখন থেকে তারা বিদ্যুতের মিটার রিচার্জ করছে না।
অন্যদিকে মুরাদপুর অংশে ফ্লাইওভারের নিচে থাকা একটি বৈদ্যুতিক ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ডের (ডিবি) বাক্সে তালা দিয়ে চলে গেছে অন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেখান থেকে সড়ক বাতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হত।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর লালখান বাজার থেকে জিইসি পর্যন্ত বেশিরভাগ বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বাতি জ্বললেও জিইসি থেকে মুরাদপুর ও ষোলশহর থেকে জিইসি পর্যন্ত এলাকায় ফ্লাইওভারের দুইপাশের খুঁটিতে থাকা একটি বাতিও জ্বলছে না।
এ কারণে রাতে ফ্লাইওভারের গতি নিয়ন্ত্রকগুলো (স্প্রিড ব্রেকার) দেখতে পাওয়া যায় না।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক মো. আবদুল হালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরে মুরাদপুর থেকে বাতি জ্বলছে না। রাত ৯টা, সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ফ্লাইওভারে গাড়ি বেশি থাকায় স্বাভাবিকভাবে চলাচল করা যায়। কিন্তু রাত আরও বাড়লে ফ্লাইওভারে গাড়ি নিয়ে উঠতে ভয় লাগে।”
তিনি বলেন, গাড়ির চাপ থাকলে হেডলাইটের আলোতে ফ্লাইওভারে অন্ধাকারটা বোঝা যায় না। তবে ছুটির দিনে কিংবা রাত ১০টার পর থেকে সেখানে উঠতে ভয় লাগে।
সাইদুল ইসলাম নামের এক মোটরসাইকেল চালক বলেন, “কয়েক বছর আগে ফ্লাইওভারের মাঝে দুই প্রান্তে সুতা টেনে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছিল। এখন সেটি শোনা না গেলেও, রাতে উঠতে ভয় লাগে।”
তিনি বলেন, লালখান বাজার থেকে মুরাদপুরের দিকে যাওয়ার পথে জিইসি পর্যন্ত ভয় লাগে না। বায়েজিদগামী গাড়িগুলো ষোলশরের লুপের দিকে চলে যাওয়ায় মুরাদপুরের দিকে গাড়ির চাপ কমে যায়। তখন সে সড়কটি ভূতুড়ে মনে হয়।
সাইদুল বলেন, “কয়েকদিন পর ঈদের ছুটি শুরু হবে, ফাঁকা শহরে যানবাহনও কম চলবে। ওই সময়তো জিইসি থেকে মুরাদপুর ভুতুড়ে হয়ে যাবে। তখন গাড়ি চালাতেও ভয় লাগবে।”
চট্টগ্রাম নগরীর এ ফ্লাইওভারে সুতা বেধে রেখে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে বছর কয়েক আগে। পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছিল ছিনতাইকারীরা।
এ ফ্লাইওভারের বেশির ভাগ অংশ পাঁচলাইশ থানার অধীনে।
পাঁচলাইশ থানার ওসি মো. সোলায়মান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে ফ্লাইওভারসহ নগরীর কিছু সড়ক অন্ধকার। ফ্লাইওভার কেন্দ্রিক অপরাধ রোধে আলোর কোনো বিকল্প নেই। আলো থাকলে সেখানে অপরাধ প্রবণতাও কম থাকে।
“আমরা বিষয়টি সিটি করপোরেশনকে বলব।”
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাফকাত বিন আমীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফ্লাইওভারের ওই অংশে বাতিগুলো সচল আছে। কিন্তু বিদ্যুতের মিটার রিচার্জ না হওয়ায় সেখানে বাতি জ্বলছে না।
“ওই অংশে বিদ্যুতের তিনটি মিটার রিচার্জ করত সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা প্রতিষ্ঠান ট্রেড ম্যাক্স। কিন্তু তাদের চুক্তি নিয়ে জটিলতার কারণে তারা এখন করছে না। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিবে।”
নির্বাহী প্রকৌশলী সাফকাত বলেন, “আর মুরাদপুর অংশে ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ডে একটি সমস্যা আছে। সেখানকার ঠিকাদার ওই ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ডের বাক্সে তালা দিয়ে চলে গেছে। এটা দুই-তিন দিনের মধ্যেই আমরা সমাধান করতে পারব আশা করছি।”
ঈদের আগেই ফ্লাইওভারের সব অংশ সড়ক বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস্ত করেন এই প্রকৌশলী।