চট্টগ্রামে বর্ধিত গৃহকরবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছার উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি বেরিয়ে আসার পর তাকে ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করেন করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সদস্যরা।
‘মেয়রের বিরুদ্ধে’ বক্তব্য দেওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় নুরুল আবছারের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে গত ২৮ নভেম্বর তাকে কারাগারে পাঠিয়েছিল চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ আমির উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নুরুল আবছার হাই কোর্ট থেকে জামিন লাভের পর বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন।
জামিনে মুক্ত হয়ে নুরুল আবছার শুরুতে হজরত শাহ আমানত (র.) এর মাজার জিয়ারত করেন। এরপর সুরক্ষা পরিষদের নেতা-কর্মী-সমর্থকসহ মিছিল নিয়ে কদমতলীর বাসভবনে পৌঁছান।
সেখানে সমবেতদের উদ্দেশে নুরুল আবছার বলেন, “চট্টগ্রামের মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসায় আমি কারামুক্ত হয়েছি। তাই চট্টগ্রামের মানুষের জন্য আমি শতবার জেলে যেতে প্রস্তুত। আমাদের আন্দোলন এখন থেকে নবোদ্যমে চলবে।”
তিনি বলেন, “মেয়র সাহেব আপিলের ফাঁদ পেতে চট্টগ্রামবাসীর ঘাড়ে ঘর-ভাড়ার ওপর গৃহকর স্থায়ীভাবে বসাতে চাচ্ছেন। চট্টগ্রামের মানুষ এসব আপিল-আপিল খেলা ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ঘর ভাড়ার করবিধি বাতিল করে সাবেক নিয়মে আয়তনের ভিত্তিতে গৃহকর নিতে হবে। যদি তা না হয় বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি মানতে মেয়রকে বাধ্য করা হবে।”
গত ২১ সেপ্টেম্বর নগরীর চান্দগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী মো. মোস্তফা কামাল চৌধুরী দুলাল।
সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ‘মানহানিকর ও হুমকিমূলক’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে মামলায় চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছারকে আসামি করা হয়। এরপর তিনি উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের জামিন নিয়েছিলেন।
ওই জামিনের মেয়াদ শেষে ২৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন নুরুল আবছার। সেই আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত।
এরআগে ১৮ সেপ্টেম্বর নগরীর পশ্চিম মাদারবাড়িতে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে নুরুল আবছার মেয়রকে নির্দেশ করে মানহানিকর বক্তব্য দেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, এমন ‘মানহানিকর ও হুমকিমূলক’ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে ব্যাপক প্রচার হওয়ায় ‘প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি চরম মর্যাদাহানি, নিরাপত্তা হুমকির মুখে এবং সিসিসি’র সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।
ভবনের ভাড়ার ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে সিসিসির উদ্যোগের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকায় ওই উঠান বৈঠক হয়েছিল।
ওই বৈঠকে নুরুল আবছার চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেছিলেন, “আমরা এখানে যারা আছি, তারা ১১ ধরনের ট্যাক্স দিয়ে এই শহরে বসবাস করছি। কারও বাপের ভিটায় বসবাস করছি না আমরা। এই, এই মেয়র, তোর বাপের ভিটায় বসবাস করছি না আমরা। এই মেয়র, সাবধান হয়ে যাও তুমি।”
নির্বাচনের সময় মেয়র রেজাউলের পক্ষে প্রচার চালিয়ে এখন বর্ধিত হোল্ডিংট্যাক্স আদায়ের উদ্যোগের কারণে ভোটারদের ‘গালাগালি’ শুনতে হচ্ছে বলেও দাবি করেন আবছার।
সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদে ভবনের ভাড়ার ভিত্তিতে গৃহকর আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হলে করদাতা সুরক্ষা পরিষদসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর তা স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। পরে চলতি বছর জানুয়ারিতে ব্যক্তি মালিকানাধীন হোল্ডিংয়ের কর পুনর্মূল্যায়নের ওপর চার বছর আগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে সিসিসি আবেদন করলে ওই মাসেই তা প্রত্যাহার করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি ‘ভাড়ার ভিত্তিতে’ বর্ধিত হারে গৃহকর আদায়ে সিটি করপোরেশন তৎপর হলে গত পাঁচ মাস ধরে স্থানীয় পর্যায়ে জনসংযোগ থেকে শুরু করে সমাবেশ ও গণশুনানিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ।
নাছিরের সময় করদাতা সুরক্ষা পরিষদ আন্দোলনে নামলে তাতে সমর্থন দিয়েছিলেন প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমসহ চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনরা।
পরে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে খোরশেদ আলম সুজন ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে পুনর্মূল্যায়ন অনুসারে বর্ধিত গৃহকর আদায়ের অনুমতি চাইলে তাতে সম্মতি দিয়েছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।