চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতির জামিন নামঞ্জুর, বিক্ষোভ

এর আগে উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের জামিনে ছিলেন নুরুল।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2022, 12:28 PM
Updated : 28 Nov 2022, 12:28 PM

চট্টগ্রামের মেয়রের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছারের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

সোমবার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জহিরুল কবীর।

এর আগে উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের জামিনে ছিলেন নুরুল আবছার। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে তিনি সোমবার আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন।

জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পরপরই সুরক্ষা পরিষদের নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তারা ‘ভিত্তিহীন অভিযোগে’ করা এই ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি বর্ধিত গৃহকর বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

Also Read: চট্টগ্রামে মেয়রের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে মামলার আসামি

Also Read: চট্টগ্রাম সিটিতে ‘গলাকাটা’ গৃহকর প্রত্যাহার দাবি, আন্দোলনের ‘হুমকি’

গত ২১ সেপ্টেম্বর নগরীর চান্দগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী মোস্তফা কামাল চৌধুরী দুলাল।

সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ‘মানহানিকর ও হুমকিমূলক’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে মামলায় চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছারকে আসামি করা হয়। পরে তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছিলেন।

নুরুল আবছারের আইনজীবী আকতার কবীর চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ২৪ নভেম্বর সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক না থাকায় জেলা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন নুরুল আবছার। তবে সেদিন শুনানি হয়নি।

“আজ নির্ধারিত দিনে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে শুনানি শেষে আদালত তা নামঞ্জুর করেছেন। পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ কী হবে তা পরিষদের নেতৃবৃন্দ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।”

সাইবার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে তিনটি ধারায় মামলাটি হয়েছে, তার মধ্যে একটি জামিন অযোগ্য ধারা। উচ্চ আদালত শুরুতে ৬ সপ্তাহের জামিন দিলেও নিম্ন আদালতে আত্মসমপর্ণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

“সেই মোতাবেক তিনি আত্মসমর্পণ করেন। জামিন আবেদনের বিষয়ে উভয় পক্ষের শুনানি শেষেই আদালত তা নামঞ্জুর করেন।”

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত ১৮ সেপ্টেম্বর নগরীর পশ্চিম মাদারবাড়ীতে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে নুরুল আবছার মেয়রকে নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দেন।

এমন ‘মানহানিকর ও হুমকিমূলক’ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হওয়ায় ‘প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি চরম মর্যাদাহানি, নিরাপত্তা হুমকির মুখে এবং সিসিসি’র সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।

ভবনের ভাড়ার ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে সিসিসির উদ্যোগের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় পশ্চিম মাদারবাড়ী এলাকায় ওই উঠান বৈঠকটি হয়েছিল।

ওই বৈঠকে নুরুল আবছার চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেছিলেন, “আমরা এখানে যারা আছি, তারা ১১ ধরনের ট্যাক্স দিয়ে এই শহরে বসবাস করছি। কারও বাপের ভিটায় বসবাস করছি না আমরা। এই, এই মেয়র, তোর বাপের ভিটায় বসবাস করছি না আমরা। এই মেয়র, সাবধান হয়ে যাও তুমি।”

নির্বাচনের সময় মেয়র রেজাউলের পক্ষে প্রচার চালিয়ে এখন বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের উদ্যোগের কারণে ভোটারদের ‘গালাগালি’ শুনতে হচ্ছে বলেও দাবি করেন আবছার।

সোমবার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমির উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করে নুরুল আবছারকে জামিন না দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছি। তিনি এমন কোনো অপরাধ করেননি যে উনাকে জেলে যেতে হবে।

“আমাদের ন্যায্য আন্দোলনকে দমাতে ভিত্তিহীন অভিযোগে এই মামলাটি করা হয়েছে। আমাদের আন্দোলন চলবে। মামলার বিষয়ে আমরা পরবর্তীতে আইনজীবীদের সাথে আলোচনা করে করণীয় ঠিক করব।”

সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদে ভবনের ভাড়ার ভিত্তিতে গৃহকর আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হলে করদাতা সুরক্ষা পরিষদসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর তা স্থগিত করেছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। পরে চলতি বছর জানুয়ারিতে হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়নের ওপর চার বছর আগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে নগর সংস্থা আবেদন করলে ওই মাসেই তা প্রত্যাহার করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি ‘ভাড়ার ভিত্তিতে’ বর্ধিত হারে গৃহকর আদায়ে সিটি করপোরেশন তৎপর হলে গত চার মাস ধরে স্থানীয় পর্যায়ে জনসংযোগ থেকে শুরু করে সমাবেশ ও গণশুনানিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ।

নাছিরের সময় করদাতা সুরক্ষা পরিষদ আন্দোলনে নামলে তাতে সমর্থন দিয়েছিলেন প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমসহ চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনরা।

পরে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে খোরশেদ আলম সুজন ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে পুনর্মূল্যায়ন অনুসারে বর্ধিত গৃহকর আদায়ের অনুমতি চাইলে তাতে সম্মতি দিয়েছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।