“শেখ হাসিনা যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব সম্প্রদায় থেকেও প্রশংসিত হচ্ছে।”
Published : 18 Aug 2023, 08:02 PM
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাকে অভিনন্দন না জানানোয় বিএনপি ও নাগরিক সমাজের ‘একাংশের’ সমালোচনা করেছেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘মানবিক ও কল্যাণ রাষ্ট্র’ এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। কিন্তু বিএনপি একে অভিনন্দন জানাতে ব্যর্থ হয়েছে।
শুক্রবার নগরীর কদমতলিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন- রেড ক্রিসেন্ট ফিজিও অর্থোপেডিক পুনর্বাসন সেবা কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, “দেশের প্রান্তিক মানুষের কথা ভেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামাজিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন ও রাষ্ট্রকে মানবিক করার ক্ষেত্রে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু বিরাট উদ্যোগ নিলেও বিএনপিসহ নাগরিক সমাজের একাংশ এটিকে অভিনন্দন জানাতে ব্যর্থ হয়েছে।
“জননেত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব সম্প্রদায় থেকেও প্রশংসিত হচ্ছে। শুধু প্রশংসা করতে পারে না আমাদের দেশের বিএনপিসহ কিছু দল আর কিছু ব্যক্তি বিশেষ। এটি জাতির জন্য দুর্ভাগ্য।”
মন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুকে- নাগরিক সমাজের সদস্য, যারা কারণে-অকারণে জাতিকে জ্ঞান দেন, তারাও অভিনন্দন জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
“হয়ত কদিন পরে দেখা যাবে এখানের মধ্যে কী ভুল আছে সেটি বের করার চেষ্টা করবে। এরা কোনো কাজ করে না, অন্যে কী কাজ করে সেটির ভুল ধরে। আমি এজন্য ওদের নাম দিয়েছি ভুল ধরা পার্টি। রাত বারোটার পরে এই ভুল ধরা পার্টি টেলিভিশনে সরব হয়।”
বেশ কয়েক বছরের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির পর আগের দিনই দেশে চালু হয় সর্বজনীন পেনশন। এই স্কিমে ৬০ বছর পর্যন্ত মানুষ টাকা জমা করবে এবং এরপর থেকে আজীবন মাসে মাসে অর্থ পাবে।
১৮ বছর থেকে শুরু করে ৫০ বছর বয়সে এসেও টাকা জমানো শুরু করা যাবে। তবে যত বেশি বছর টাকা জমা হবে, সুবিধা হবে তত বেশি।
মোট চারটি স্কিম ঘোষণা করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রবাসীদের জন্য আছে প্রবাস, বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি, অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের জন্য আনা হয়েছে সুরক্ষা আর নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য আছে সমতা।
সমতা স্কিমে মাসে জমানো যাবে এক হাজার টাকা করে। এই স্কিমে জমার অর্ধেক টাকা দেবে সরকার।
সুরক্ষা স্কিমে এক হাজার, দুই হাজার, তিন হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা করে টাকা জমানো যাবে।
প্রগতিতে জমানো যাবে দুই, তিন অথবা পাঁচ হাজার টাকা করে। প্রবাসে পাঁচ হাজার, সাড়ে সাত হাজার এবং ১০ হাজার টাকার স্কিম আছে।
১৮ বছর বয়স থেকে কেউ টাকা ৪২ বছর মাসে দুই হাজার টাকা কমা করলে পেনশন পাবেন প্রায় ৬৯ হাজার টাকা। তবে টাকা জমানোর বছর কমলে পেনশনও কম আসবে।
হাছান মাহমুদ যেদিন চট্টগ্রামে বক্তব্য রেখেছেন, সেদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজধানীতে পেনশন ব্যবস্থা নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বরং এর সমালোচনা করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ““আওয়ামী লীগ লুট করে শেষ করে দিয়েছে বাংলাদেশকে, ফোকলা বানিয়ে দিয়েছে,… কিচ্ছু নাই। আবার নতুন আরেকখান কায়দা বাইর করছে.. দেখছেন। কী বলে…, পেনশন দেবে, পেনশন স্কিম।
“মানুষের টাকা চুরি করার আরেকটা ফন্দি বাইর করছে। ওই টাকা চুরি করে ওরা নির্বাচন করতে চায়। মানুষ এবার তাদেরকে দেবে না।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “যে যাই বলুক না কেন, যতই সমালোচনা করুক না কেন, কাজ করলে সমালোচনা হবে। আমরা সমালোচনাকে সমাদৃত করার মানসিকতা পোষণ করি।
“সেই কারণে আমরা মনে করি সমালোচনা করলে ক্ষতি নাই। কিন্তু অন্ধের মত সমালোচনা ভালো নয়, সবকিছুতে না বলার সংস্কৃতি এবং না বলার রাজনীতি রাষ্ট্রের জন্য ভালো নয়।”
দেশের প্রান্তিক মানুষের কথা ভেবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার মধ্যে চারটি প্রোগ্রাম আছে। তার মধ্যে একটি প্রোগ্রাম একেবারে নিম্মআয়ের মানুষের জন্য।
“তিনি (কোনো ব্যক্তি) যত চাঁদা দিবেন সরকার সমপরিমাণ চাঁদা সেখানে দিয়ে দিবে। সামাজিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করার ক্ষেত্রে এবং রাষ্ট্রকে মানবিক করার ক্ষেত্রে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা একটি বিরাট উদ্যোগ।”
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতা চালু করেছেন। এখন সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ২২ প্রকার ভাতা দেয়া হয়।
“প্রতি ইউনিয়ন পরিষদে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মানুষ নানা প্রকারের ভাতা পায়। আজকে মানুষের স্বপ্নকেও হার মানিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা ছিন্নমূল মানুষকে ঘর করে দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে সাড়ে আট লাখ পাকা টিনশেড ঘর করে দিয়েছেন।”
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বাংলাদেশের মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দেশে নতুন নতুন বিশ্বমানের হাসপাতাল হচ্ছে, সেখানে সেবার মূল্য এত বেশি যে তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সেজন্য আমাদের সরকার স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোর আধুনিকায়ন করেছে।
“হাসপাতালের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।”
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সভাপতি এটিএম আব্দুল ওয়াহ্হাবের সভাপতিত্বে এবং চট্টগ্রাম সিটি ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জব্বারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
রেড ক্রিসেন্টের মহাসচিব কাজী শফিউল আজম, কোষাধ্যক্ষ এম এ ছালাম, চট্টগ্রাম সিটি ইউনিটের সহসভাপতি আলমগীর পারভেজও বক্তব্য রাখেন।
এম এ ছালাম এর ব্যক্তিগত অর্থায়নে প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ফিজিও অর্থোপেডিক পুনর্বাসন সেবা কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।