তিন সন্তানকে নিয়ে আতিকের স্ত্রী গেছেন বাবার বাড়ি, আর আতিকের মা ছোট ছেলেকে নিয়ে নিজের বাড়িতে।
Published : 10 Apr 2024, 11:46 AM
বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র জিম্মি নাবিক আতিক উল্লাহ খানের পরিবারের সদস্যরা কেউ এবার ঈদের নতুন পোশাক কেনেননি। সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি আতিকের পরিবারের সদস্যরা এবার একসাথে ঈদও করছেন না।
তার অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রী ফিরোজা আজমিন মিনা তিন কন্যাকে নিয়ে গেছেন বাপের বাড়ি হাটহাজারীতে। আতিকের মা শাহানুর বেগম ছোট ছেলে আসিফকে নিয়ে গেছেন চন্দনাইশের বরকলে নিজ বাড়িতে।
‘এমভি আবদুল্লাহ’ জলদস্যুদের কবলে না পড়লেও এবার রোজার ঈদে আতিক উল্লাহ খানসহ জিম্মি অন্য নাবিকদের দেশে ফেরা হত না। কিন্তু তারপরও তারা মুক্ত থাকলে হয়ত পরিবারের ঈদ আনন্দে কমতি হত না। কিন্তু জিম্মিদশা আতিকসহ অন্য নাবিকদের পরিবারের ঈদের আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে।
গত ১২ মার্চ মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে কয়লা নিয়ে যাওয়ার পথে সোমালিয়ান উপকুল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে কবির গ্রুপের মালিকানাধানীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জলদস্যুরা জিম্মি করে জাহাজের ২৩ নাবিককে।
জিম্মি করার আটদিনের মাথায় ২০ মার্চ জলদস্যুরা তৃতীয় একটি পক্ষের মাধ্যমে জাহাজ মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। মালিকপক্ষ তৃতীয় ওই পক্ষের মাধ্যমে দফায় দফায় আলোচনা চালিয়ে চালাচ্ছে বলে গণমাধ্যমে তারা জানিয়েছেন।
নাবিকদের জিম্মিদশার প্রায় ২৮ দিন পার হয়েছে। আর একদিন বাদেই ঈদ। ঈদের কেনাকাটা এবং আনন্দ নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের টানছে না।
চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান পরিবার নিয়ে থাকেন বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নন্দনকানন এলাকাতে। সেখানে তার মা শাহানুর বেগম, ছোট ভাই আসিফ, তিন শিশু সন্তান ও স্ত্রী ফিরোজা আজমিন মিনা থাকেন।
আতিকের ছোট ভাই আবদুল নুর খান আসিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদের আনন্দ আমাদের এবার টানছে না। ভাইয়া দস্যুদের হাতে বন্দি, আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাটছে। পুরো রমজান জুড়েই আমরা রোজা রেখে আল্লাহর কাছে ভাইয়া সুস্থভাবে ফিরে আসার জন্য প্রার্থনা করেছি।”
এবার পরিবারের সদস্যরা কেউই নতুন জামাকাপড় কেনেনি জানিয়ে তিনি বলেন, “আত্মীয়স্বজনরা অনেকেই সকলের জন্যই নতুন কাপড় কিনে বাসায় পাঠিয়েছেন। এবারে আমরা ঈদের কেনাকাটা করতে বাজারে যাইনি।”
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, আতিক উল্লাহর মা শাহানুর বেগমকে তার দেবর চন্দনাইশ উপজেলার বরকল এলাকার বাড়িতে নিয়ে গেছেন।
আসিফ খান বলেন, “গত ঈদে ভাইয়া দেশে ছিল। আমরা একসাথে ঈদ করেছিলাম। এবার ঈদে তার দেশে থাকার কথা ছিল না। ভাইয়া না থাকলেও ঈদের যে আনন্দ সেটাতে কমতি হত না। কিন্তু সব ছাপিয়ে আনন্দের ঈদ আমাদের জন্য এবারে আমাদের জন্য সুখকর নয়।”
সর্বশেষ গত শুক্রবারে আতিক উল্লাহ স্যাটেলাইট ফোনে জাহাজ থেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন।
আসিফ জানান, ঘরের সবার জন্য নতুন কাপড় কেনা হয়েছি কিনা জানতে চেয়েছিলেন আতিক। নাবকিদের মুক্তির বিষয়ে অগ্রগতি কতটুকু অগ্রগতি হতয়েছে, তা নিয়েও কথা হয়েছে বলে জানান আসিফ।
জলদস্যুদের সঙ্গে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ এবং আলোচনার অগ্রগতির প্রেক্ষিতে জিম্মি নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে রোজার ঈদের আগে মুক্তির আশা জাগে।
জিম্মি এক নাবিকের পরিবারের সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সবারই তো আশা থাকে তাদের স্বজনরা যাতে দ্রুত জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পায়। কিন্তু কখন সে সময় আসবে বা আলোচনায় কি অগ্রগতি হচ্ছে তা নিয়ে আমরা একপ্রকার অন্ধকারে।”
এ প্রসঙ্গে এমভি আবদুল্লাহর মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পারসন মিজানুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দস্যুদের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি রয়েছে। কম সময়ের মধ্যে নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি।”
জাহাজ পরিচালনায় অভিজ্ঞ বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জিম্মি জাহাজের মালিকপক্ষ সঠিকপথেই আছে বলে মনে করি। চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে সময় লাগবে।”
ঈদের আগে নাবিকদের মুক্তি না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জাহাজে যারা চাকরি করে তাদের ঈদ বা অন্যান্য বিষয় বলতে কিছু থাকে না। তারা এসব বিষয় মেনে নিয়েই চাকরি করতে যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলেও আবদুল্লাহর নাবিকেরা এবারে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করতে পারত না।”
এমভি আবদুল্লাহ: বিপর্যস্ত চিফ অফিসার আতিকের পরিবার, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শয্যাশায়ী