আগের নির্বাচনগুলোর মতই নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণের কাজ দ্রুত শুরু করার উদ্যোগের বিষয়টি প্রধান্য পেয়েছে নোমান আল মাহমুদের পরিকল্পনায়।
Published : 25 Apr 2023, 02:26 PM
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী-পাঁচলাইশ-চান্দগাঁও আসনের এমপি হতে পারলে কী করবেন, সে বিষয়ে ১৯ দফা ‘পরিকল্পনা ও ভাবনা’ তুলে ধরেছেন এ উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ।
আগামী ২৭ এপ্রিলের ভোট সামনে রেখে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নিজের নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো তুলে ধরেন তিনি। অবশ্য এসব অঙ্গীকারকে তিনি ‘ইশতেহার’ বলছেন না; বলছেন এলাকার উন্নয়নে নিজের ‘পরিকল্পনা ও ভাবনা’।
আর সেখানে আগের নির্বাচনগুলোর মতই নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণের কাজ দ্রুত শুরু করার উদ্যোগের বিষয়টি প্রধান্য পেয়েছে।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা ও নগরীর পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও বায়েজিদ বোস্তামী থানার আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ নির্বাচনী আসন।
নগরীর সাথে লাগোয়া বোয়ালখালী উপজেলার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা কালুরঘাট সেতু। এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৫০ হাজার লোক পারাপার হয়। একমুখী এ সেতুর যানজট এ উপজেলার মানুষদের অন্যতম দুর্ভোগের কারণ।
অতীতের প্রতিটি নির্বাচনে সবদলের প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে শতবর্ষী এ সেতুর জায়গায় নতুন সেতু করার কাজকে প্রাধান্য দিয়েছেন। কিন্তু তা আর হয়নি।
এ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য মহাজোট প্রার্থী মঈনউদ্দীন খান বাদল একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে এবং এক বছরের মধ্যে নতুন সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু না হলে তিনি ‘পদত্যাগ’ করবেন। সেতু নির্মাণ কাজ শুরুর আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাদলের মৃত্যুর পর এ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোসলেম উদ্দিন আহমেদও তার ইশতেহারে কালুরঘাট সেতু নির্মাণকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। ২০২০ সালের ওই নির্বাচনে জিতে তিনি এমপি হন, কিন্তু সেতুর কাজ শুরু হয়নি। তার মৃত্যুর পর এখন নতুন উপ নির্বাচন হচ্ছে এ আসনে।
তাদের অনুসরণ করে দ্বিতীয় দফা উপ-নির্বাচনের প্রার্থী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদও কালুরঘাট সেতু নির্মাণকে নিজের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে প্রাধান্য দিয়েছেন।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সম্বলিত স্মৃকিস্তম্ভ নির্মাণ, চান্দগাঁও বাস টার্মিনালকে স্থানান্তর করে সেখানে শেখ রাসেল স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগের কথাও তিনি বলেছেন।
যানজট নিরসনে সড়কের পাশে ফুটপাত দখল করে গড়ে তোলা হাটবাজার, অবৈধ অটো রিকশা ও টেম্পু স্ট্যান্ড উচ্ছেদ; ওয়াসা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা; বোয়ালখালী এলাকায় নদীভাঙ্গন রোধের উদ্যোগ এবং পুরাতন সড়ক মেরামত করে বিকল্প সড়ক নির্মাণের কথাও রয়েছে তার ১৯ দফা পরিকল্পনায়।
এই উপ-নির্বাচনের পর জাতীয় নির্বাচনের আগে সময় আছে এক বছরেরও কম। এত অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে সেতু নির্মাণ উদ্যোগ তরান্বিত করবেন– সেই প্রশ্ন সাংবাদিকরা রাখেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে।
উত্তরে তিনি বলেন, “যদি নির্বাচিত হতে পারি, চট্টগ্রামের নেতাদের নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করব। আগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় নিয়ে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করার অনুরোধ করব।”
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আ জ ম নাছির উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহের হোসেন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনও উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের শরিক হিসেবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ নেতা মইন উদ্দিন খান বাদল এ আসনে নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর তার মৃত্যুতে নতুন করে ভোটের প্রয়োজন হয়।
এরপর ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারির উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদে যান মোছলেম উদ্দিন আহমদ। তার মৃত্যুতে এখন সংসদের মেয়াদের এক বছর বাকি থাকতেই আগামী ২৭ এপ্রিল আবার উপ নির্বাচন হচ্ছে। ইভিএমের মাধ্যমে এ আসনে ভোটগ্রহণ হবে।
২০২০ সালের প্রথম উপ-নির্বাচনে দেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও এবার তারা ভোটে আসেনি।
আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী নোমান ছাড়াও এ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন চেয়ার প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, মোমবাতি প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি- এনপিপি’র কামাল পাশা এবং একতারা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী রমজান আলী।