“তবে আরো দুইদিন সময় লাগতে পারে পুরো কাজ শেষ করতে। সেক্ষেত্রে বুধবারের আগে পানি সরবরাহ করা হয়ত সম্ভব হবে না।"
Published : 10 Mar 2025, 01:17 PM
চট্টগ্রাম নগরীতে বিদ্যুতের ভূর্গভস্থ কেবল স্থাপনের কাজ চলাকালে এবার সাগরিকা এলাকায় ওয়াসার পানি সরবরাহ লাইন কাটা পড়েছে। এতে দুদিন ধরে নগরীর বড় একটি অংশে পানি নেই।
লাইন কাটা পড়ায় নগরীয় আগ্রাবাদ, হালিশহর, সিডিএ, দেওয়ানহাট ও কদমতলীর পুরো এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
ওই সঞ্চালন লাইন মেরামত করে পানি সরবরাহ করতে আরো দুইদিন সময় লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ওয়াসার কর্মকর্তারা, সেক্ষেত্রে বুধবার পর্যন্ত পানি সংকট রয়ে যাবে।
এতে করে হালিশহর, সিডিএ, দেওয়ানহাট ও কদমতলীসহ আরো কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা বিপাকে পড়েছেন। যেসব ভবনে বিকল্প হিসেবে গভীর নলকূপ নেই, তারা বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
কর্মকর্তাদের ভাষ্য, পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসির অধীনে বাস্তবায়নাধীন ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের আওতায় ভূগর্ভস্থ কেবল স্থাপনের কাজ চলার সময় সাগরিকা এলাকায় ওয়াসার পাইপ লাইন কাটা পড়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শনিবার রাতে সাগরিকা এলাকায় পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের ভূর্গভস্থ কেবল বসানোর কাজের সময় আমাদের ৪৪ ইঞ্চি ব্যাসের সরবরাহ লাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
“এ কারণে হালিশহরে যে ট্যাংকে পানি রেখে আমরা পানি সরবরাহ করি সেখানে পানি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য হালিশহর, আগ্রাবাদ, সিডিএ, দেওয়ানহাট ও আশেপাশের এলাকায় পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।”
এ বিষয়ে ওয়াসা গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, এই সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে হালিশহর এলিভেটেড ট্যাংক হয়ে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, সিডিএ আবাসিক এলাকা, পশ্চিম মাদারবাড়ি, হালিশহর, বড়পোল, ছোটপোল, বেপারীপাড়া, গোসাইলডাঙ্গা, পানওয়ালাপাড়া, পোস্তার পাড়, ধনিওয়ালা পাড়া, কদমতলী, হাজীপাড়া, শান্তিবাগ, মুহুরীপাড়া, পাহাড়তলী, ঈদগাঁ, দেওয়ানহাটসহ সংলগ্ন এলাকায় পানি সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে।
হালিশহর এলাকার বাসিন্দা মামুন হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল (রোববার) সেহেরির জন্য ঘুম থেকে উঠে দেখি পানি নেই। এলাকার মানুষ কেউ জানে না কেন পানি আসছে না। ওই অবস্থায় কোন রকমে সেহেরি ও ফজরের নামাজ শেষ করেছি।
“কিন্তু আজকে পর্যন্ত এলাকায় পানি আসেনি। রমজানের দিনে এভাবে পানি ছাড়া থাকা যায় নাকি? এদিকে গরমও বাড়ছে। যেসব বাড়িতে ডিপটিউবওয়েল আছে তারা কোনভাবে চলছে। যাদের ওয়াসার পানি একমাত্র ভরসা তারা খুব বিপদে পড়ে গেছে।”
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওয়াসার পাইপ লাইন মেরামত করে পানি সরবরাহ করার দাবি জানিয়েছেন গোসাইলডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন।
ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল আমিন বলেন, “গতকাল রাতভর কাজ করেছে আমাদের লোকজন। যেহেতু পাইপ লাইন মাটির নিচে তাই আগে সেটা এক্সপোজ করে কি ড্যামেজ হয়েছে সেটা দেখতে হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে মেরামতের চেষ্টা চলছে।
“তবে আরো দুইদিন সময় লাগতে পারে পুরো কাজ শেষ করতে। সেক্ষেত্রে বুধবারের আগে পানি সরবরাহ করা হয়ত সম্ভব হবে না। পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করছিল। তাদের লোকজন আমাদের সবরকম লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছে মেরামতের জন্য।”
এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কের অনন্যা আবাসিক সংলগ্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলাকালে ওয়াসার ৪৮ ইঞ্চি ব্যাসের সরবরাহ পাইপ লাইন ফেটে যায়।
তখন নগরীর হালিশহর, আগ্রাবাদ, মাদারবাড়ি, দেওয়ানহাট, লালখান বাজার, ওয়াসার মোড়, জিইসি মোড়, ২ নম্বর গেট, বায়েজিদ বোস্তামি, নাসিরাবাদ, মুরাদপুর, কদমতলী, বহদ্দারহাট, কুয়াইশ, জামালখান, চকবাজার, আন্দরকিল্লা ও সংলগ্ন এলাকাসহ শহরের প্রায় এক তৃতীয়াংশ এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
সেবার প্রায় পাঁচদিন পর পানি সরবরাহ শুরু হয়। সবগুলো এলাকায় পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হতে প্রায় এক সপ্তাহ লেগে গিয়েছিল।
ওয়াসার পাইপ ভেঙে চট্টগ্রামের বড় অংশে পানি সরবরাহ বন্ধ
তিন দিনেও মেরামত হয়নি পাইপ, চট্টগ্রামের বড় অংশে পানির কষ্ট