প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪৬০ কিলোমিটার সড়ক সজ্জিত হবে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব আলোকবাতিতে।
Published : 06 Jul 2024, 11:33 PM
স্মার্ট আলোকায়নের সুযোগ প্রবেশ করছে চট্টগ্রাম নগরী, যেখানকার প্রায় ৪৬৭ কিলোমিটার সড়কে বসতে চলেছে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বাতি।
শনিবার এ লক্ষ্যে ‘স্মার্ট লাইটিং: ভবিষ্যতের স্মার্ট চট্টগ্রামের ভিত্তি’ নামে একটি অনুষ্ঠানে প্রায় ২৬১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারতীয় ঠিকাদার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করে সিটি করপোরেশেন।
চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লুতে চুক্তি সইয়ের এ অনুষ্ঠানে বলা হয়, স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে সড়ক বাতির আলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। শিগগির শুরু হতে যাওয়া প্রকল্পটি শেষ হলে নগরীর সড়কবাতি খাতে ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার কমবে এবং আগের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ খরচও বেঁচে যাবে।
‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অধীন বিভিন্ন এলাকার সড়কে আলোকায়ন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ভারতের ঠিকাদার কোম্পানি ‘শাপার্জি পালনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড’। লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) মাধ্যমে এ প্রকল্পের প্রায় ৮২ শতাংশ অর্থ দিচ্ছে ভারত।
প্রকল্পের নথিতে দেখা যাচ্ছে, মোট ২৬০ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকার এ প্রকল্পের অধীনে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের ৪৬৬ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার সড়কে ২০ হাজার ৬০০টি এলইডি বাতি বসানো হবে।
স্মার্ট আলোকবাতি সজ্জিত চট্টগ্রাম গড়ে তোলার প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে এলওসি-৩ (লাইন অব ক্রেডিট) এর আওতায় মোট খরচের ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ অর্থ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ভারত। টাকার অংকে যার পরিমাণ ২১৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
অবশিষ্ট ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ তথা ৪৬ কোটি ৪৩ লাখ ৫ হাজার টাকা সরকার বহন করছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ৪০, ৬০, ১০০ ও ২৫০ ওয়াটের ২০ হাজার ৬০০টি এলইডি বাতি, ২০ হাজার ২৬৭টি জিআই পোল এবং ৫০৭টি কন্ট্রোল সুইচ বসানো হবে।
এসব বাতি বসবে ৫ মিটারের বেশি প্রশস্ত সড়কগুলোতে। হাইড্রোলিক বিম লিফটার ও ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতিও কেনা হবে প্রকল্পের আওতায় থাকছে।
২০১৯ সালের ৯ জুলাই একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন হলেও ঠিকাদার নিয়োগসহ বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ভারতের চূড়ান্ত সায় না পাওয়ায় এত দিন তা আটকে ছিল।
চলতি বছর ভারতের চূড়ান্ত অনুমোদন মিলেছে। গত ২১ মে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলা হয়, দ্রুত প্রকল্পের ভৌত কাজ শুরু হবে। ২০২৬ সালের ৩০ জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
এ পর্যন্ত তিনবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্প অনুমোদনের পর দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে থমকে ছিল। এরপর অনুমোদন প্রক্রিয়াতেও কিছু সময় যায়।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, এই আলোকায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার কমবে এবং ৫০ শতাংশ খরচ কমবে।
প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষে চট্টগ্রামে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্ট্রিট লাইট ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠার আশা করে বাংলাদেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মা বলেন, “চট্টগ্রামের স্মার্ট সিটি হওয়ার জন্য এটি একটি পদক্ষেপ। নগরীর ৪৬০ কিলোমিটার সড়কে স্মার্ট আলোকায়ন হবে।
“দুই দেশের জন্য পরিবেশবান্ধব, স্থায়ী, সমন্বিত ও সুন্দর ভবিষ্যত তৈরিতে আমরা একযোগে কাজ করব। আমাদের লক্ষ্য কার্বন নিঃসরণ কমানো, জ্বালানি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি ও পরিবেশ সুরক্ষা।”
সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আমরা স্মার্ট আলোকায়নের যুগে প্রবেশ করছি। কথা দিচ্ছি, সঠিক ও যথাযথ গুণগত মানে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।”
অনুষ্ঠানে চুক্তিতে সই করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এবং শাপার্জির পক্ষে বিজনেস হেড নিরাজ কুমার।
‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে’
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সব সময় অপপ্রচার চালানো হয়, যা মানুষের মাঝে ‘ভুল ধারণা’ সৃষ্টি করে।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কোন দেশ তার প্রতিবেশী বদলাতে পারে না। প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতেই হয়। গত শতকে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক বিরোধ ছিল। শেষে তারা বিরোধ নিরসনে একমত হয়।
“ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে রেল, নৌ ও সড়ক যোগাযোগ আছে। এতে সেখানে কেউ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হারায়নি, বরং তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জীবনমান উন্নত হয়েছে তাতে।”
তিনি বলেন, “এই উপমহাদেশে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান বা পাকিস্তানের মানুষ কেন কষ্ট ভোগ করবে? কেবল নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে এটা হয়েছে।
“আমাদের প্রধানমন্ত্রী সকলের সাথে এগিয়ে যাবার উদ্যোগ নিয়েছেন। ভারত, বাংলাদেশ ও নেপাল মিলে বিভিন্ন ইস্যুতে একসাথে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর কেউ কেউ নিজস্ব লাভের জন্য এসব নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।”