এখন সেই মাঠ বাফুফেকে বরাদ্দ দেওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে চট্টগ্রামের স্বীকৃতি বাতিলেরও শঙ্কা দেখছেন ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক এক পরিচালক।
Published : 07 Jan 2025, 09:05 AM
চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে বছরে অন্তত ৩২টি ইভেন্টের খেলা হয় চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে। পাশাপাশি চলে বিভিন্ন ইভেন্টের অনুশীলন। সেই মাঠটি ‘আন্তর্জাতিক ফুটবল স্টেডিয়াম’ করার জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে ২৫ বছরের জন্য লিজ দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এ সিদ্ধান্তে চট্টগ্রামের খেলাধুলায় ‘সংকট সৃষ্টির’ আশঙ্কা করছেন চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকরা। এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের পরিবর্তে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠকে আন্তর্জাতিক ফুটবল স্টেডিয়াম হিসেবে তৈরি করারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এ সিদ্ধান্তকে চট্টগ্রামের ‘ক্রীড়াঙ্গনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও ক্রীড়া উপদেষ্টাকে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করারও অনুরোধ জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক ফুটবল স্টেডিয়াম হিসেবে তৈরির জন্য ১২ শর্তে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কাছে ‘লিজ’ দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। গত ২ জানুয়ারি এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ২৫ বছরের জন্য ওই মাঠ বরাদ্দ পেয়েছে বাফুফে।
এমএ আজিজ স্টেডিয়াম আগে থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে তালিকাভুক্ত। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে টেস্ট ম্যাচ হয়েছিল এ মাঠে, যেখানে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। সে কারণে এ স্টেডিয়াম বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে স্মরণীয় একটি মাঠ।
এখন সেই মাঠ বাফুফেকে বরাদ্দ দেওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে চট্টগ্রামের স্বীকৃতি বাতিলেরও শঙ্কা দেখছেন ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক এক পরিচালক।
বাফুফে দেওয়া জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চিঠিতে যে ১২টি শর্তের কথা বলা হয়েছে, সে অনুযায়ী, মাঠে কোনো সংষ্কার ও মেরামত করতে হলে ক্রীড়া পরিষদকে অবহিত করে কাজের ব্যয়ভার বাফুফে বহন করবে।
লিজ চলাকালে কোনো ক্ষতি সাধন হলে বাফুফে ক্ষতিপূরণ দেবে। স্টেডিয়ামের বিদ্যুৎ,পানিসহ সকল ধরনের ইউটিলিটি বিল, ভূমিকরসহ যাবতীয় রাজস্ব ব্যয় বাফুফে বহন করবে।
ক্রীড়া পরিষদের অনুমতি ছাড়া স্টেডিয়ামের কোন মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করা যাবে না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকমানের খেলাধুলায় ১৫ শতাংশ গেট মানি ক্রীড়া পরিষদকে দিতে হবে। ক্রীড়া পরিষদের অনুমতি ছাড়া বাফুফে মাঠটি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবে না।
চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকরা বলছেন, ঢাকা ছাড়া দেশের অন্যান্য জেলার স্টেডিয়ামগেুলো জেলা ক্রীড়া সংস্থা তাদের খেলাধুলা এবং প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করে। একইভাবে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা তাদের নিজস্ব ইভেন্টগুলো পরিচালনা করে।
গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থ্যানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার মত চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটিও ভেঙে দেওয়া হয়। অ্যাডহক কমিটি গঠনের নির্দেশনা থাকলেও তা এখনও গঠন করা হয়নি।
সাবেক ফুটবলার হাফিজুর রহমান বলেন, ক্রীড়াপঞ্জির মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা বিভিন্ন ইভেন্টের খেলাধুলা পরিচালনা করে। এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ফুটবল, ক্রিকেট, হ্যান্ডবল, হকিসহ বিভিন্ন ইভেন্টের খেলাধুলা হয়, পাশাপাশি প্রশিক্ষণও হয় এ মাঠে।
“ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে আমাদের কাছে সব ইভেন্ট সমান, কিন্তু এমএ আজিজ স্টেডিয়াম শুধু ফুটবলকে বরাদ্দ দেওয়া হলে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হবে।”
প্রবীণ এ ক্রীড়া সংগঠক বলেন, জহুর আহমেদ ক্রিকেট স্টেডিয়াম চট্টগ্রামের ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট ভেন্যু। তার প্রাকটিস ভেন্যু হিসেবে এমএ আজিজ স্টেডিয়াম ব্যবহৃত হয়। সেই মাঠ ফুটবলকে বরাদ্দ দেওয়া হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের কোনো দল আর অনুশীল করতে পারবে না।
আন্তর্জাতিক ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে হলে চট্টগ্রামের বাইরে কোনো স্টেডিয়ামকে বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে হাফিজ বলেন, “চট্টগ্রামে যদি স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে হয়, তাহলে পলোগ্রাউন্ড মাঠকে করা যায়। এ মাঠটি সারা বছর অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকে।”
চট্টগ্রাম জেলার এ ক্রীড়া সংগঠকদের ভাষ্য, প্রতিবছর তারা মোট ৩২টি ইভেন্টের খেলা আয়োজন করেন। তার মধ্যে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ফুটবলের পাশাপাশি হ্যান্ডবল, হকি, ভলিবল, আর্চারি, রাগবিসহ নানা ধরনের আউটডোর ইভেন্ট হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক পরিচালক সিরাজউদ্দিন মো. আলমগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফুটবলের জন্য ডেডিকেটেড স্টেডিয়াম হবে এটা ভালো সিদ্ধান্ত। তবে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামকে ফুটবল ‘ডেডিকেটেড’ স্টেডিয়াম করা হলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠবে অন্য ইভেন্টের কী হবে?”
তিনি বলেন, “চট্টগ্রামে আর কোনো মাঠতো নাই। এক মাঠেই সব খেলা হয়। পাশাপাশি এ মাঠে অনুশীলনও করে বিভিন্ন ইভেন্টের খেলোয়াড়রা।”
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামকে ফুটবলের জন্য বরাদ্দ দেওয়ায় অন্যান্য ইভেন্ডের খেলাগুলো ‘হুমকির মুখে পড়বে’ মন্তব্য করে ক্রীড়া সংগঠক আলমগীর বলেন, “ফুটবল, ক্রিকেট ছাড়া এমনিতেই অন্য ইভেন্টগুলোতে ফিউচার, ফিন্যান্সিয়াল সাপোর্ট ও সিকিউরিটি না থাকায় প্লেয়াররা আসতে চায় না। এখন যদি লীগ- টুর্নামেন্ট বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এসব ইভেন্টেরতো আর কোন চর্চা থাকবে বলে মনে হচ্ছে না।”
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত মন্তব্য করে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের পরিবর্তে পলোগ্রাউন্ড মাঠকে ফুটবল মাঠ ঘোষণার পরামর্শ দেন তিনি।
বিসিবি’র সাবেক পরিচালক আলমগীর বলেন, ২০১১ সালে বাংলাদেশে ক্রিকেট বিশ্বকাপ এবং ২০১৪ সালে যুব বিশ্বকাপ হয়েছিল। এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে তখন প্রাকটিস ম্যাচ হয়েছিল।
“এমএ আজিজ স্টেডিয়াম ফুটবলের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলে ভবিষ্যতে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু থাকবে কি না, সেই শঙ্কা তৈরি হবে।”
সংগঠকদের এই উদ্বেগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মন্ত্রণালয় থেকে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম বাফুফেকে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি শুনেছি। তবে আমাদের কাছে কোনো অফিসিয়াল চিঠি আসেনি। চিঠিটা এলে দেখব, তারপর সেটা দেখে সিদ্ধান্ত নেব, কীভাবে আলোচনা করব।”