‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’র প্রচার শুরু

তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুদান পাওয়া ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ চলচ্চিত্রের কাজ ২০২০ সালে শুরু হয়, মুক্তি পাবে আগামী ১৮ নভেম্বর।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2022, 03:03 PM
Updated : 2 Nov 2022, 03:03 PM

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ এর প্রচার শুরু হয়েছে।

প্রীতিলতা চট্টগ্রামের যে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন, বুধবার দুপুরে সেই স্কুলের মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে চলচ্চিত্রটির প্রচার শুরু হল।

সিনেমায় প্রীতিলতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। মনোজ প্রামাণিক ও কামরুজ্জামান তাপুসহ অভিনয় করেছেন অনেকে। সংগীত পরিচালনা করেছেন বাপ্পা মজুমদার।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুদান পাওয়া ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’র কাজ ২০২০ সালে শুরু হয়।

২০১৯-২০ অর্থবছরের সরকারি অনুদানে নির্মিত এই সিনেমা মুক্তির সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছেন পরিচালক প্রদীপ ঘোষ।

১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাবে আগামী ১৮ নভেম্বর। সারাদেশে ৫০ হাজার শিক্ষার্থীকে অর্ধেক টাকায় এটি দেখার সুযোগ দেওয়া হবে বলেও জানান পরিচালক।

অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুদান পেয়ে কাজ শুরু করলেও ছবিটি শেষ করতে আরও অর্থের প্রয়োজন ছিল। তখন অনেকের কাছে গিয়েছি। যেনতেন ভাবে এই কাজ শেষ করতে পারছিলাম না। কারণ তাতে জাতির ক্ষতি হবে। 

“ছবির সাথে সম্পৃক্ত আমরা কয়েকজন নিজেদের অনেক কিছু বেচে দিয়েছি। তখন কেউ এগিয়ে না এলেও এগিয়ে এসেছিল এইচএম স্টিল।”

প্রদীপ আরও বলেন, “প্রীতিলতার আত্মাহুতির ৯০ বছর পর এ চলচ্চিত্র। এই ইতিহাসকে বাদ দিয়ে, বাংলাদেশের ইতিহাস হবে না। যেখানে যে ঘটনা ঘটেছে তা সেখানে চিত্রধারণ করতে চেয়েছে।

“ইউরোপিয়ান ক্লাব পেতে সাত মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। কোভিড মহামারীর কারণে দুয়েকটি স্থানে শুটিং করা সম্ভব হয়নি। সেগুলো সেট করে করতে হয়েছে।”

অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বলেন, “প্রীতিলতা ৯০ বছর আগে আত্মাহুতি দেন। তার পরিবারের বাড়ি সম্পত্তির দখল অন্যের হাতে। আজকের বাংলাদেশে নেলী সেনগুপ্তা, প্রীতিলতা এবং প্রথম বাংলা ভাষার দাবি উত্থাপনকারী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়ি শত্রুর সম্পত্তি। এখনও তা থেকে মুক্তি মেলেনি।

“মাস্টারদা সূর্যসেন, বীরকন্যা প্রীতিলতা এদের নাম বলতে বলতে আমাদের রাজনীতিবিদরা গলা ফাটিয়েছেন। সূর্যসেনের জমিটি ‘শত্রু সম্পত্তি’ ঘোষণা করে নবাব মিয়া নামের একজন প্রবাসী ব্যবসায়ীকে দেওয়া হয়েছিল। পরে একটি আন্দোলন হলে তা থেকে মুক্ত হয়।”

সেই বাস্তবতায় এই চলচ্চিত্রটি ইতিবাচক ঘটনা হিসেবে ভবিষ্যতে উল্লেখিত হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মেয়র এখানে আছেন। ব্রিটিশ আমলের চট্টগ্রাম বীরত্বের খেতাব পেল। যখন আজ বীরদের বাড়িঘর স্মৃতি দেখতে মানুষ আসে, তখন বিফল মনরথে ফিরতে হয়।

“রাষ্ট্র, সরকার, রাজনৈতিক দল, জনপ্রতিনিধি, তাদেরই ইতিহাস সংরক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা অনেকেই বলি। কতজন ধারণ করি তা নিয়ে সন্দেহ আছে। মাননীয় মেয়র এক্ষেত্রে অনন্য। তিনি দায়িত্ব পালনকালে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন আশা করি।”

বিপ্লবীদের স্মৃতি সংরক্ষণে গত ৫০ বছরে যে উদ্যোগ নেওয়ার দরকার ছিল তাতে সরকারগুলোর আন্তরিকতার অভাব ছিল বলে দাবি করেন রানা দাশগুপ্ত।

তিনি বলেন, “কিছু নাগরিক উদ্যোগ বা সিটি করপোরেশন হয়ত উদ্যোগ নিয়েছে। এটা দুঃখজনক, রাষ্ট্রের উদ্যোগ না নেওয়াটা।

“প্রশাসনে পাকিস্তানি আছে, সাম্প্রায়িকতাও আছে। পাঁচমিশালি লোক দিয়ে প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্র চলছে। ফলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা আছে যা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়।”

এত বছর পর যুববিদ্রোহের ইতিহাস নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি ‘ইতিবাচক’ উল্লেখ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর দরকার ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তরুণ প্রজন্মকে জানানো। যে লড়াইয়ে নির্ভর করে মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম এগিয়েছে তা পাঠ্যপুস্তকে নেই। রাজনীতিতে চর্চা নেই। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারে না।”

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম নগরীর মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “প্রীতিলতা সমগ্র ভারতকে কাঁপিয়ে দেন। বিশ্বকে জানান চট্টগ্রাম- বীর চট্টগ্রাম। যে যুগে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলন করেন সে যুগে মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ ছিল সীমিত। সে যুগে যুদ্ধ করে আত্মাহুতি দিয়ে দুঃসাহস দেখিয়েছেন।

“আমরা সব ভুলে যেতে বসেছি। নিজেরাই নিজেদের হারিয়ে ফেলেছি। চট্টগ্রামের গর্ব সূর্যসেন, প্রীতিলতা। প্রীতিলতাদের আমরা স্মরণ করি বা না করি কিছু আসে যায় না। এদেশের মাটি, প্রকৃতি, সমুদ্রের গর্জনে মিশে আছেন সূর্যসেন-প্রীতিলতা । একে কেউ থামাতে পারবে না।”

মেয়র বলেন, “ইতিহাসকে কেউ ধামাচাপা দিতে পারে না। এর গতি কেউ রুদ্ধ করতে পারে না। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ইতিহাস ভুলবে না। প্রীতিলতাদের চেতনায় সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে হবে।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার বলেন, “স্বাধীনতা পেলেও আমরা বীরদের যথাযথ মর্যাদা দিতে পারিনি। প্রীতিলতা কখনও জীবনের ভয় করেননি। শোষণের প্রতিবাদে জীবনের মায়া ত্যাগ করে সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েন প্রীতিলতা। মূল্যায়ন করা উচিত বিপ্লবীদের।

“চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সবাই দেখবে, জানবে। এই চলচ্চিত্রের জয়যাত্রা কামনা করি।”

অনুষ্ঠানে এইচএম স্টিলের নির্বাহী পরিচালক মো সামসুদ্দোহা বলেন, “আমাদের চেয়ারম্যান সাবেক মেয়র মনজুর আলম প্রীতিলতার প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। তিনি মেয়র থাকাকালে প্রীতিলতার আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করেছিলেন। আমরা গর্ববোধ করছি চলচ্চিত্রটির অংশ হতে পেরে।”

অনুষ্ঠানে ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহেদা আক্তার, প্রীতিলতা ট্রাস্টের সভাপতি পঙ্কজ চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান শেষে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে টিকেট কুপন বিতরণ করা হয়।

আরও পড়ুন:

Also Read: বীরকন্যার প্রেম? প্রীতিলতা হয়ে আসছেন তিশা