বিচারক অভিযোগ শুনে সিআইডিকে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
Published : 07 Oct 2024, 09:18 PM
জোর করে তুলে নিয়ে ‘হত্যা ও গুমের ভয়’ দেখিয়ে জমি লিখিয়ে নেওয়া এবং ‘প্রতারণামূলকভাবে’ জমির যথাযথ দাম পরিশোধ না করার অভিযোগে চট্টগ্রামের সাবেক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, তার মেয়ে ও ভাইসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন কৃষক দলের এক নেতা।
কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এম সাইফুদ্দিন সৈয়দ সোমবার চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম জুয়েল দেবের আদালতে এ মামলার আবেদন করলে বিচারক সিআইডিকে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেন।
সাইফুদ্দিন থাকেন চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ খুলশী আবাসিক এলাকায়। তিনি বোয়ালখালী উপজেলার এম মোবিনুল হক সৈয়দের ছেলে। সাইফুদ্দিন সৈয়দ একসময় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কৃষক দলের সভাপতি ছিলেন।
মামলার আসামিরা হলেন- সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, রেজাউলের মেয়ে সাবিহা তাসনিম তানিম, রেজাউলের ভাই নুরুল করিম চৌধুরী, নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার বহদ্দার বাড়ির বাসিন্দা মাহমুদুর রহমান চৌধুরী মান্না, নজরুল ইসলাম অপু ও চান্দগাঁও থানার বারইপাড়ার বাসিন্দা টিপু রহমান।
দণ্ডবিধির ৩৪১, ৩৮৬, ৩৮৭, ৪০৬, ৪২০, ৫০৬ (৩৪) ধারায় মামলাটি দায়েরের আর্জি জানানো হয়েছে।
রেজাউল করিম চৌধুরী নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। তিনি ২০২০ সালে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সিটি মেয়র নির্বাচিত হন। গত মাসে তাকে মেয়র পদ থেকে অপসারণ করা হয়।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জমি দখলের চেষ্টা করে সফল না হয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে বাদীর কাছ থেকে জোরপূর্বক দলিলে স্বাক্ষর নেয় আসামিরা। পাশাপাশি প্রতারণামূলক ভাবে বাদীর ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা আত্মসাত করে।
“আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।”
মামলার আবেদনে বলা হয়, বাদী সাইফুদ্দিন সৈয়দ নগরীর বহদ্দার বাড়ি এলাকায় ২০১৭ সালে একটি জমি কেনেন। শুরুতে ওই জমিতে থাকা সেমিপাকা একটি দোকান আসামি মাহমুদুর রহমান চৌধুরী মান্না এবং পরে আরেকটি সেমিপাকা দোকান অন্য আসামি টিপু রহমান ভাড়া নেন।
সাবেক সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী নগরীর বহদ্দার বাড়ি এলাকার বাসিন্দা।
বাদীর অভিযোগ, আগে মান্না ও টিপু ঠিকমত দোকান ভাড়া দিলেও ২০২০ সালে রেজাউল মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তারা আর নিয়মিত ভাড়া দিচ্ছিল না। এরপর মেয়র রেজাউল ওই জমির দেয়াল ভেঙে জমিটি ‘দখলের চেষ্টা’ করেন।
ওই ঘটনার পর, বাদী এম সাইফুদ্দিন সৈয়দ সাবেক মেয়র রেজাউল করিমকে উকিল নোটিস পাঠান। এরপর রেজাউল বাদী সাইফুদ্দিন সৈয়দকে ওই জমিটি বিক্রির ‘প্রস্তাব দেন;। কিন্তু মার্কেট নির্মাণ করবেন জানিয়ে বাদী সেই জমি বিক্রির প্রস্তাবে রাজি হননি।
মামলার আর্জিতে বলা হয়, প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সাবেক মেয়র রেজাউল ‘ক্ষিপ্ত হয়ে’ বাদীকে ওই জমিতে মার্কেট নির্মাণ করতে দেবেন না বলে ‘হুমকি’ দেন। আসামি টিপু এবং মান্নাও জমিটি সাবেক মেয়র রেজাউলের কাছে বিক্রির জন্য ‘চাপ’ দেন।
বাদীর অভিযোগ, ২০২৩ সালের ১৪ অগাস্ট তিনি নগরীর দক্ষিণ খুলশীর বাসা থেকে বের হওয়ার পর সেসময়ের মেয়র রেজাউল নিজের গাড়ি দিয়ে গতিরোধ করেন। পরে রেজাউলের মেয়ে সাবিহা তাসনিম তানিম, রেজাউলের ভাই নুরুল করিম চৌধুরী ও আরেক আসামি মাহমুদুর রহমান চৌধুরী মান্না বাদীকে ‘ঘিরে ধরে জোর করে’ সাবেক মেয়র রেজাউলের গাড়িতে তুলে নগরীর চান্দগাঁও সাব রেজিস্ট্রার অফিসে নিয়ে যান।
কয়েক ঘণ্টা সেখানে বসিয়ে রেখে, সব আসামিরা উপস্থিত থেকে ‘গুম-খুনের ভয় দেখিয়ে জোর করে’ বাদীর কাছ থেকে জমি বিক্রির দলিলে সই নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে আর্জিতে।
বাদীর ভাষ্য, জমি বিক্রির ওই দলিলে ৬ দশমিক ০৮ শতক জমির মূল্য ১ কোটি ৪৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা লেখা হয়। ৪ কোটি টাকার জমি এত কম মূল্য কেন জানতে চাইলে মোট ৮৭ লাখ টাকার তিনটি পে-অর্ডার দিয়ে বাকি টাকা এক মাস পরে দেওয়ার কথা বলে চলে যান আসামিরা।
সাইফুদ্দিন সৈয়দ বলছেন, রেজাউলের আশ্বাস অনুযায়ী, এক মাস পর ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জমির মূল্য বাবদ বাকি ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকার জন্য তিনি নগরীর টাইগারপাসে মেয়রের কার্যালয়ে যান। সেদিন ওই জমির সকল মূল কাগজপত্র বুঝে নেওয়ার পর আর কোনো টাকা বা পে-অর্ডার না দিয়ে ‘গুমের ভয় দেখিয়ে; তাকে কার্যালয় থেকে বের করে দেন রেজাউল।
সরকার পতনের পর থেকে অন্য অনেক আওয়ামী লীগ নেতার মত সাবেক মেয়র রেজাউলও আত্মগোপনে রয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে তার ভাষ্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পরেনি।