"আকাশে যখন বিমানের পিছনে আগুন লাগে, তখন আমি দেখতে পাই। বিমানটি তিন টুকরা হয়ে পড়ে যায়,” বলেন এক আনসার সদস্য।
Published : 09 May 2024, 04:28 PM
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজে আগুন ধরার পরপরই দুই বৈমানিককে প্যারাশুট নিয়ে নদীতে নেমে আসতে দেখেন আশপাশের মানুষ।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার পর কর্ণফুলী নদীর পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) সংলগ্ন অংশে উড়োজাহাজটি বিধস্ত হয়।
স্থানীয়দের ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, শুরুতে উড়োজাহাজের পেছনের অংশে আগুন লাগে। এর পরপরই দুই বৈমানিক প্যারাশুট নিয়ে ঝাঁপ দেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে উড়োজাহাজটিতে। এরপর সেটি পানিতে নেমে আসে।
ঘটনাস্থলের পাশে থাকা জরিপকারী জাহাজ এমটি জুবিলি দোয়া জাহাজের ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "হঠাৎ একটা বিকট শব্দ হয়। দেখি, একটা বিমানের পিছনে আগুন লেগেছে। এসময় বিমানের দুপাশ থেকে দুজন প্যারাশুট নিয়ে ঝাঁপ দেয়।"
দুপুরে জুবিলি দোয়ায় দাঁড়িয়ে মিজানুর রহমান দূরে হাত দিয়ে দেখান, নদীতে থাকা একটি সবুজ রঙের বয়ার পাশেই উড়োজাহাজটি বিধস্ত হয়।
ওই জাহাজের কর্মচারী সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বিমান থেকে যে দুজন পানিতে পড়েন, তারা ৫-৭ মিনিট পানিতে ছিলেন। তারপর নদীর দুই পার থেকে দুইটা ইঞ্জিন বোট দ্রুত এগিয়ে যায়।
"বোটে যাত্রী ছিল। তবু তারা বিমান থেকে দুজনকে পড়তে দেখে ছুটে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। উদ্ধার করা দুজনের মধ্যে একজনের মুখ থেকে পানি বের হতে দেখেছি। উনার অবস্থা খারাপ ছিল।"
প্রথমে ঘটনাস্থলের ডান পাশে অদূরে ১২ নম্বর ঘাটের কাছে থাকা একটি বোট বৈমানিকদের উদ্ধারে এগিয়ে যায়। এসময় নদীর দক্ষিণ পাড় থেকে ১২ নম্বর ঘাট অভিমুখে আসতে থাকা অন্য বোটটিও ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে যায়।
১২ নম্বর ঘাটে থাকা এক আনসার সদস্য বলেন, "আকাশে যখন বিমানের পিছনে আগুন লাগে, তখন আমি দেখতে পাই। বিমানটা তিন টুকরা হয়ে পড়ে গেল। তার আগে প্যারাশুট নিয়ে দুজন বের হল। বিমান তিন টুকরা হয়ে ভেঙে পড়ল।
"তখন বোটের মাঝিদের বলি, তাড়াতাড়ি গিয়ে বিমান থেকে পড়া দুজনকে উদ্ধার করতে। তারা গিয়ে উনাদের তুলে আনে।"
এর কিছুক্ষণ পর নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ফায়ার সার্ভিসের দলও উদ্ধার কাজে যোগ দেয়।
ওই এলাকার স্থানীয় কয়েকজন কিশোর জানায়, সকালে বিমান বাহিনীর ওই উড়োজাহাজটি নদীর লাগোয়া বিমানবন্দর সড়কের অপর পাশ থেকে উড়ে আসছিল। তখন সেটি নিচু হয়ে উড়ছিল। এরপর উপরের দিকে ওঠার সময়ই বিকট শব্দ হয় এবং তারপর উড়োজাহাজটির পেছনের অংশে আগুন দেখা যায়।
বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আহত দুই বৈমানিকের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
নৌবাহিনীর ইসা খাঁ ঘাঁটির বিএনএস পতেঙ্গা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদের মৃত্যু হয় বলে পতেঙ্গা থানার ওসি কবীরুল ইসলাম জানান।
ওই ঘটনায় আহত উইং কমান্ডার সুহান বিমান বাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটির মেডিকেল স্কোয়ার্ডনে চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছেন ওসি।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ারপোর্ট ম্যানেজার গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ জানান, সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর ফেরার পথে বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়ে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বিমান বাহিনীর YAK 130 প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানটি ‘যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে’ দুর্ঘটনায় পড়ে।
কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে এ দুর্ঘটনার পর কিছুসময় জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়। পরে সতর্কতা তুলে নেওয়া হয় বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
পুরনো খবর