রিয়াদ ও সাব্বির এক বছর আগে বাসাটিতে কাজ করতেন এবং তাদের চাকুরিচ্যুত করা হয়েছিল।
Published : 04 Feb 2025, 08:05 PM
চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের যে বাসায় ‘ডাকাতি চেষ্টার’ খবরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পুরো বাড়ি ঘিরে রেখেছিল, অভিযান শেষে জানা গেল, ওই বাসারই নতুন-পুরনো চার চার গৃহকর্মী মিলেই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।
এ ঘটনায় পুলিশ ওই বাসার দুই গৃহকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলেন- বায়েজিদ শেখ (১৯) ও আকাশ (২৫)।
আর পালিয়ে গেছেন সাব্বির (১৯) ও রিয়াদ (২০) নামের দুইজন, যারা আগে ওই বাসায় কাজ করতেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার প্রবর্তক সংঘের বিপরীতে ছয় তলা একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘ডাকাতের হানার’ খবর পেয়ে ঘেরাও করে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পরে সেখান থেকে গৃহকর্তা মো. লোকমানকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ হাসপাতালে পাঠায় এবং আকাশকে গ্রেপ্তার করে।
এর আগে পালোনোর সময় ভবনের প্রহরী এবং স্থানীয়রা মিলে বায়েজিদকে আটক করে পুলিশে দেয়।
চার ঘণ্টা ধরে কৌতুহল
স্থানীয়দের ভাষ্য, ও আর নিজাম রোডের ওই বাড়ির মালিক মো. লোকমান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং শিল্পগ্রুপ আবু খায়েরের জামাতা।
প্রবর্তক সংঘের বিপরীতে মূল সড়কের ওপর ছয় তলা ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার ডুপ্লেক্স বাসায় লোকমান তার স্ত্রী এবং আরও কয়েকজন কাজের লোকজন থাকেন।
বাসাটি থেকে আনুমানিক বেলা ১১টার দিকে শোরগোল শুরু হয়। তখন আশপাশের লোকজন জড়ো হয় এবং পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
ওই আনুমানিক ২২/২৩ বছর বয়েসী বাসার একজন কাজের লোক পালানোর সময় ভবনের প্রহরী ও জড়ো হওয়া লোকজন তাকে ধরে ফেলে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যৌথবাহিনীর সদস্যরা ভবনটি ঘিরে রেখেছেন। প্রবর্তক থেকে পাঁচলাইশ থানা মোড় সড়কটিতে ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, সেনাবাহিনীর ও সিএমপির সোয়াট টিমের সদস্যরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। একটি অ্যাম্বুলেন্সও এনে রাখা বাড়িটির কাছে।
বেলা সোয়া দুইটার দিকে বাসাটি থেকে বিষ্ফোরণের শব্দ আসে এবং একটু পরই আহত অবস্থায় বাড়ির মালিক লোকমানকে বের করে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে এবং এক যুবককে পুলিশের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়।
বেলা আড়াইটার দিকে বাড়িটি থেকে বের হয়ে নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, “বাড়িটিতে ডাকাত প্রবেশ করে ঘরের লোকজনকে জিম্মি করে রেখেছিল। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে।”
তিনি বলেন, “বাড়ির মালিককে একজন ডাকাত সদস্য জিম্মি করে বাথরুমে আটকে রেখেছিল। আমরা সাউন্ড গ্রেনেড ফাটিয়ে তাকে উদ্ধার করেছি।”
লুটের চেষ্টায় চার গৃহকর্মী
অভিযান শেষে পাঁচলাইশ থানার ওসি মো. সোলায়মান বলেন, ওই বাসায় গৃহকর্মী আকাশ, বায়েজিদ, রিয়াদ ও সাব্বির এই চার জন মিলে লুট করার চেষ্টা করেছিল। তাদের মধ্যে রিয়াদ ও সাব্বির এক বছর আগে বাসাটিতে কাজ করতেন এবং তাদের চাকুরিচ্যুত করা হয়।
গ্রেপ্তার আকাশ মালিকের ‘খুব কাছের’ বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ওসি বলেন, “ঘরের দরজা ভেঙ্গে আমাদের একটি কক্ষে প্রবেশের সময় লোকমানকে নিয়ে একজন বাথরুমে ঢুকে যায়। সেখানে রক্তপাত দেখে উর্ধ্বতন মাধ্যমে সোয়াট টিমকে আসতে বলা হয়। তারা বাথরুমের দরজা ভেঙ্গে লোকমানকে উদ্ধার ও একজনকে আটক করে।
“সকালে তারা বাসায় ঢুকে লোকমানকে একটি বেড রুমে এবং তার স্ত্রীকে আরেকটি বেড রুমে আটকে রাখে। তাদের হাতে ধারালো একটি বড় ছুরি ছিল। সেটি দিয়ে লোকমানকে জখম করা হয়।”
পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনজন পালানোর চেষ্টা করলে জড়ো হওয়া লোকজন বায়েজিদকে ধরে পুলিশে সোপার্দ করে।
শ্বাসরুদ্ধকর ২০ মিনিট
বাসার মালিক লোকমানকে আহত অবস্থায় উদ্ধারে কাজ করে সিএমপির সোয়াট দলের সদস্যরা। বিশেষাইয়ত এই দলটির আট সদস্য অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানে থাকা এক সোয়াট সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা অভিযান শুরুর আগে ভিকটিম এবং জিম্মি করা যুবকের বয়স সম্পর্কে একটা ধরাণা নিয়েছিলাম। সে হিসেবে অভিযান শুরুর আগে কথা বলে আপসে বের করে আনার চেষ্টা করছিলাম। জিম্মি করা যুবকটির হাতে বড় ছুরি ছিল।
“আমরা বাইরে থেকে লোকমানের সঙ্গে প্রায় ১৫ মিনিট কথা বলেছি। এসময় জিম্মি করা যুবক কিছুই বলছিল না। লোকমান জানিয়েছেন, তাকে বাথরুমের হাতলের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। এক পর্যায়ে বাথরুমের দরজা অর্ধেক ভাঙ্গার পর দেখেছি ভেতরে থাকা যুবকটি হাতের ছুরি ফেলে বাথরুমের এক কোণে চলে যায়।”
তিনি বলেন, “সেটি দেখে আমরা পুরো দরজা ভেঙ্গে ফেলি। সে সময় লোকমান দ্রুত বাথরুম থেকে বের হয়ে যান। তখন আমরা জিম্মিকারীকে ভয় দেখানোর জন্য সাউন্ড গ্রেনেডের বিষ্ফোরণ ঘটাই।”