গোলাপি, হলুদ, বেগুনি ফুলকপিতে রঙিন কৃষকের আশা

বিদেশি জাতের এসব ফুলকপি দেশের অন্যান্য স্থানে আগে চাষ হলেও চট্টগ্রামে এবারই প্রথম।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরীচট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2023, 02:08 PM
Updated : 27 Jan 2023, 02:08 PM

সচরাচর যে সাদা ফুলকপির দেখা মেলে দেখতে তেমনই শুধু রঙ ভিন্ন; হলুদ, বেগুনি ও গোলাপি এসব ফুলকপি দৃষ্টি কাড়ছে ক্রেতার।

এতে আশাবাদী চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় প্রথমবারের মত রঙিন ফুলকপি চাষ করা কৃষক।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণ ফুলকপির সমান খরচে কম জমিতে বেশি সংখ্যক রঙিন ফুলকপি চাষ করা সম্ভব।

এসব ফুলকপিতে আছে ক্যারোটিন, ভিটামিন এ ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা শরীরের জন্য উপকারী। আকর্ষণীয় রঙের কারণে দামও মিলছে বেশি।

চলতি বছর সীতাকুণ্ড উপজেলা সদরের নুনাছড়া, সোনাইছড়ি, হাফিজ জুটমিল এলাকা, বারৈয়ারঢালা ও ফৌজদারহাট এলাকার ১৫ জন কৃষক রঙিন ফুলকপির চাষ করেছেন। এরমধ্যে হলুদ ফুলকপির ফলন উঠেছে। ফুল আসতে শুরু করেছে বেগুনি ও গোলাপি ফুলকপির।

শুক্রবার সকালে উপজেলার ফৌজদারহাট উত্তর ছলিমপুর সাঙ্গু রোড সংলগ্ন জমিতে কথা হয় কৃষক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। অন্যের কাছ থেকে ২০ শতক জমি বর্গা নিয়ে চাষবাস করেন তিনি।

তার জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শাকসহ বিভিন্ন রকমের সবজি আছে। এরমধ্যে সামনের দুই শতক জমিতে হলুদ ফুলকপি লাগিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এবারই প্রথম এই ফুলকপির চাষ করেছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জামালপুর থেকে আমাদের এর চারা এনে দিয়েছেন।

“আড়াইশ’র মত হলুদ ফুলকপি করেছি। এছাড়া আরেকটি জমিতে গোলাপি ও বেগুনি ফুলকপির চাষ করেছি। সেগুলোতে এখনও ফুল আসেনি।”

হলুদ ফুলকপিতে ভালো সাড়া পাচ্ছেন জানিয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, “অনেকে এই ফুলকপি দেখতে এসেছেন। কেউ কেউ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি পিস ১০০ টাকায় বিক্রি করছি। চারা পেলে আগামীবার আরও বেশি পরিমাণে করার ইচ্ছা আছে।”

চলতি সপ্তাহে রাতে ক্ষেত থেকে কয়েকটি হলুদ ফুলকপি চুরিও হয়েছে বলে জানালেন তিনি।

সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেসব ফল ফসল প্রাকৃতিকভাবে রঙিন হয় সেগুলোতে ভিটামিন এ বেশি থাকে।

“এগুলোকে কালারড কলিফ্লাওয়ার বলে। দেশের অন্যান্য স্থানে আগে চাষ হলেও চট্টগ্রামে হয়নি। আমরা এবার পরীক্ষামূলকভাবে ১৫ জন কৃষককে চারা দিয়েছি। সবারই ভালো ফলন হয়েছে।”

জামালপুরের একটি নার্সারি থেকে বিদেশি জাতের এসব ফুলকপির চারা সংগ্রহ করেছেন জানিয়ে মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, “আমাদের দেশে যে সাদা ফুলকপির চাষ হয় সেসব বীজ সাধারণত জাপান, যুক্তরাজ্য ও ভারত থেকে বিভিন্ন কোম্পানি আমদানি করে। তারাই বীজ ও চারা বিক্রি করে।

“কালারড ফুলকপিও বিদেশি জাতের। এগুলোর দুই হাজার চারা সংগ্রহ করেছি। পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে দেখলাম সীতাকুণ্ডের মাটিতে ভালো ফলন হচ্ছে। আকারে দেড় থেকে দুই কেজি পর্যন্ত হয়েছে হলুদ ফুলকপি।”

অতিরিক্ত কোনো সার বা ওষুধ দিতে হয় না জানিয়ে হাবিবুল্লাহ বলেন, “যে জমিতে সাদা ফুলকপি ১২০টি লাগানো যায় একই জমিতে হলুদ ফুলকপি লাগানো যায় ১৫০টি। ফলন পেতে একই সময় লাগে। কম জমিতে একই খরচে বেশি পুষ্টির রঙিন ফুলকপি চাষ সম্ভব।

“পাশাপাশি আকর্ষণীয় হওয়ার কারণে ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদা আছে। কেজিতে ১৫ টাকা বেশি দরে এগুলো বিক্রি করা সম্ভব। আগামীবার বীজ ও চারা পেলে আরো বেশি পরিমাণে কৃষকরা চাষ করতে পারবেন।”

সীতাকুণ্ডে প্রতি বছর ১৬০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির চাষ হয়। পুরো জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ হলে কৃষক অনেক লাভবান হবে বলে মনে করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।