মামলা আর নিরাপত্তা: বাবুল আক্তারের দুই আবেদনই খারিজ

হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ পিবিআই প্রধানসহ ৬ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছিলেন বাবুল।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2022, 07:51 AM
Updated : 25 Sept 2022, 07:51 AM

স্ত্রী হত্যার আসামি সাবেক এসপি বাবুল আক্তার পিবিআই হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে যে মামলার আবেদন করেছিলেন, তা খারিজ করে দিয়েছে আদালত।

সেই সঙ্গে কারাগারে নিরাপত্তা চেয়ে যে আবেদন এই সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা করেছিলেন, তাও নাকচ করে দিয়েছেন চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ জেবুননেছা বেগম।

বাবুল আক্তারের দুই আবেদনের ওপর শুনানি করে বিচারক রোববার দুপুরে এই আদেশ দেন বলে পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

বাবুলের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বলেছেন, জজ আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন।

‘স্বীকারোক্তি আদায়ে’ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে গত ৮ সেপ্টেম্বর পিবিআই প্রধানসহ ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেন বাবুল আক্তার।

সেদিন বলা হয়েছিল ওই অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর সিদ্ধান্ত দেবে আদালত। পরে বিচারক না থাকায় ২৫ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন নির্ধারণ হয়।

বাবুল আক্তারের ও মামলায় বিবাদী করেছিলেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) বর্তমান প্রধান বনজ কুমার মজুমদার, পিবিআইর চট্টগ্রাম জেলার এসপি নাজমুল হাসান, চট্টগ্রাম মহানগরের এসপি নাঈমা সুলতানা, পিবিআইর তৎকালীন পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা, পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার সাবেক পরিদর্শক এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম ও পিবিআই পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবিরকে।

অভিযোগে বলা হয়েছিল, মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার ঘটনায় গত বছরের ১২ মে তার স্বামী বাবুল আক্তারের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। একই দিনে আরেকটি হত্যা মামলা করেন তার শ্বশুর। সে মামলায় বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

২০২১ সালের ১০ থেকে ১৭ মে পর্যন্ত ওই মামলায় তাকে ‘আটকে রেখে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য হ্যান্ডকাফ পরিয়ে, ঘুমাতে না দিয়ে, গোসল করতে না দিয়ে অজু করার পানি না দিয়ে নির্যাতন করার’ অভিযোগ আনা হয় আর্জিতে।

সেখানে বলা হয়, এক নম্বর আসামির (বনজ কুমার) ‘নির্দেশে’ বাবুলকে ‘অন্যায়ভাবে আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখিয়ে লাঞ্ছনাকর আচরণ ও নির্যাতন’ করা হয়েছে। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ১৫(১) ও ৫ (২) ধারায় এ অভিযোগ করা হয় আর্জিতে।

বাবুলের মামলার আবেদনের পর ‘মামলার আসামিদের নির্দেশে ও প্ররোচনায়’ গত ১০ সেপ্টেম্বর দুপুরে ফেনী মডেল থানার ওসি নিজাম উদ্দিন ফেনী কারাগারে প্রবেশ করে বাবুল আক্তারের কক্ষে দীর্ঘ সময় ধরে তল্লাশি চালায় বলে অভিযোগ আনেন বাবুল। কারাগারে ‘জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে’ ১২ সেপ্টেম্বর আদালতের কাছে আরেকটি আবেদন করেন তিনি। তার দুই আবেদনই খারিজ হয়ে গেল।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন সে সময় পুলিশ সুপার পদে থাকা বাবুল আক্তার।

সেই মামলায় তাকেই প্রধান আসামি করে গত ১৩ সেপ্টেম্বর আাদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পিবিআই। এ বিষয়ে ১০ আক্টোবর শুনানির দিন রয়েছে।

অভিযোগপত্রে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই বলেছে, ‘পরকীয়ার ঘটনা জেনে যাওয়ায়’ সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার তার `সোর্সদের দিয়ে’ স্ত্রী মিতুকে ‘খুন করান’ বলে উঠে এসেছে তাদের অনুসন্ধানে।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা ও খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু। এদের মধ্যে মুছা ও কালু পলাতক।

Also Read: মিতু হত্যা: বাবুল আক্তারের মামলায় তার বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র