“আমাদেরতো কিছুই করার নাই, যতটুকু বরাদ্দ আছে ততটুকু বিক্রি করতে পারব,” বলেন এক টিসিবি ডিলার।
Published : 12 Feb 2025, 10:38 PM
চট্টগ্রামে নায্য মূল্যে টিসিবির পণ্য সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সীমিত বরাদ্দের কারণে অনেককেই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, প্রতিদিন তারা বরাদ্দ পান ২০০ জনের জন্য, কিন্তু কয়েকগুন বেশি মানুষ জড়ো হওয়ায় তারা সবাইকে পণ্য দিতে পারছেন না।
এক মাস বন্ধ থাকার পর সোমবার থেকে টিসিবির ‘ট্রাক সেল’ শুরু হয়েছে।
প্রথমদিন নগরীর ১-২০ নম্বর ওয়ার্ড ও পরদিন ২১ থেকে ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ২০টি করে স্থানে ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করেছে ডিলাররা। বুধবার মিশ্রভাবে বিভিন্ন ওয়ার্ডের ২০টি স্থানে পণ্য বিক্রি হয়েছে।
টিসিবির ট্রাক থেকে প্রতি কেজি চিনি ৭০ টাকা, মসুর ডাল ৬০ টাকা, ছোলা ৬০ টাকা, খেজুর ১৫৫ টাকা ও প্রতি লিটার সোয়াবিন তেল ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতারা ট্রাক থেকে ৫৮০ টাকায় এক কেজি চিনি, দুই কেজি করে মসুর ও ছোলা, দুই লিটার সোয়াবিন তেল এবং ৫০০ গ্রাম করে খেজুর কিনতে পারছেন।
বিভিন্ন স্থানে ট্রাক আসার আগে থেকেই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। তাদের অনেকেই সকাল থেকে ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছেন বলেও দাবি করেছেন।
বুধবার নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে দেখা যায়, ট্রাকের পেছনে মালামাল কেনার জন্য কয়েক’শ নারী-পুরুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আবার অনেকেই দাঁড়িয়ে আছেন ট্রাক ঘিরে।
আনোয়ারা বেগম নামের এক নারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বলুয়ার দিঘীরপাড় এলাকায় তার বাসা। পণ্য কিনতে বাসা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে এসেছেন।
তার দাবি, সকাল সাতটার তিনি চেরাগী পাহাড় মোড়ে এসে বসেছিলেন পণ্য কেনার জন্য। তার আগেও অনেকে ছিল। সাড়ে ১০টার দিকে ট্রাক আসে এবং বেলা একটায় তিনি পণ্য কিনতে পেরেছেন।
বেলা একটার সময় রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ট্রাক দেখে তিনি লাইনে দাঁড়িয়েছেন সকাল সাড়ে ১০টায়। বেলা একটা বাজলেও তিনি জানেন না পণ্য নিতে পারবেন কি না।
এসময় আরও বেশকিছু নারী-পুরুষ, লাইনের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, কোনোভাবে পণ্য কিনতে পারেন কিওনা সে চেষ্টায়। তাদের ভাষ্য, যে দীর্ঘ সারি দাঁড়িয়ে থেকে পণ্য কেনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
এদিকে আড়াইটার দিকে কয়েকজনকে দেখা গেছে পণ্য কিনতে না পেরে খালি হাতে ফিরে যেতে।
তাদের মধ্যে রশিদ নামের একজন বলেন, “ট্রাক দেখে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু এত মানুষ… কিনতে না পেরে ফিরে যাচ্ছি।”
নগরীর প্রতিটি স্থানেই টিসিবির ট্রাক ঘিরে এমন অবস্থা বলে জানা গেছে।
এমন অবস্থায় অনেকটা ‘অসহায় অবস্থায়’ পড়েছে ডিলাররা।
২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডের চেরাগী পাহাড় এলাকায় বুধবার মালামাল বিক্রি করে টিসিবির ডিলার সুপর্ণা স্টোর।
সেটির কর্ণধার প্রদীপ দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা শুধু ২০০ লোককে পণ্য দিতে পারব। কিন্তু এখানেতো দ্বিগুণ লোক দাঁড়িয়ে গেছে। আমাদেরতো কিছুই করার নাই… যতটুকু বরাদ্দ আছে ততটুকু বিক্রি করতে পারব।”
এসময় আগ্রহী ক্রেতাদের ভিড় সামাল দিতে অনেকটা অসহায় দেখা গেছে ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের সচিবের প্রতিনিধিকেও। তিনি বারবার করে লাইনে দাঁড়ানোর অনুরোধ করলেও অনেকেই ধাক্কাধাক্কি করছিলেন আগে পণ্য নেওয়ার জন্য। ভিড় সামাল দিতে তাকে কয়েকবার হাত জোড় করে অনুরোধ করতেও দেখা গেছে তাকে।
অবার অনেকেই অভিযোগ করছেন, মঙ্গলবার প্রেস ক্লাবের সামনে পণ্য বিক্রি করা হয়েছিল। যার কারণে তারা অনেকেই সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু ঘোষণা ছাড়া চেরাগী পাহাড় মোড়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
ডিলার প্রদীপ দাশের ভাষ্য, ওয়ার্ড সচিবের কথা মতোই সেখানে তিনি পণ্য বিক্রি করছেন।
সচিবের প্রতিনিধি পরিচয় দেওয়া হিল্লোল দাশের দাবি, মঙ্গলবার প্রেস ক্লাবের সামনে ব্যাপক ভিড় হয়েছিল। সেখানে একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাই বুধবার চেরাগী পাহাড় মোড়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
বর্তমান সরকার আগের সরকারের আমলে দেওয়া ‘ফ্যামিলি কার্ড’ বাতিল করার পর গত বছরের ২৪ অক্টোবর থেকে ট্রাক সেল শুরু করে টিসিবি। সেসময় প্রতিটি স্থানে ৪০০ জনের কাছে পণ্য বিক্রি করা হতো।
মাঝখানে জানুয়ারি মাস বন্ধ থাকার পর সোমবার থেকে আবার বিক্রি শুরু হলেও প্রতিটি স্থানে ২০০ জনের কাছে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
টিসিবি চট্টগ্রামের অফিস প্রধান ও যুগ্ম পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার ১-২০ ও মঙ্গলবার ২১-৪১ নম্বর নম্বর ওয়ার্ডের ২০টি স্থানে ট্রাক সেল হয়েছে।
“আজ মিশ্র ওয়ার্ডে (পুরো নগর জুড়ে ২০টি পয়েন্ট) বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পয়েন্টে প্রতিদিন ২০০ করে মোট চার হাজার পরিবার নায্যমূল্যে পণ্য সংগ্রহ করতে পারছেন।”
প্রতি পয়েন্টে ২০০টি পরিবারের জন্য বরাদ্দ অপ্রতুল বলে ক্রেতাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “এটা সরকারি সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা বরাদ্দ দিচ্ছি।”
টিসিবির তালিকা অনুযায়ী বুধবার নগরীর চেরাগী পাহাড় ছাড়াও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয় নগর, মাইজ পাড়া, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের স্টিলমিল বাজার, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইপিজেড মোড়, ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সী পাড়া, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইয়াকুব নগর, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের লালদিঘীর পাড়, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে পুরাতন মাঝিরঘাট, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম মাদারবাড়ি, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ছোটপুল, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের গোডাউন বাজার, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়তলী রেলওয়ে স্কুল, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সরাইপাড়া, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে কাজীর দিঘী, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে মাদ্রাসা মোড়, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মুরাদপুর, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে হামজারবাগ, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে খাজা রোড মোড়, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বাহির সিগন্যাল মোড়ে ট্রাক সেল হয়েছে।