বন্দরের জেটিতে থাকা জাহাজগুলোকে বর্হিনোঙ্গরে চলে যেতে বলা হয়েছে।
Published : 24 Oct 2023, 01:38 PM
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ উপকূলের ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসায় চট্টগ্রাম বন্দর পণ্য ওঠানামা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার দুপুরে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলের সভাপতিত্বে এক জরুরি সভায় এই নির্দেশ দেওয়া হয় বলে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বন্দরের সব স্টেকহোল্ডারদের সাথে সভা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান মহোদয় লোডিং আনলোডিং (জাহাজ থেকে জেটিতে পণ্য ওঠানামা) বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্টদের এখন জানিয়ে দিচ্ছি।”
সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে, বন্দরের জেটিতে থাকা জাহাজগুলোকে বর্হিনোঙ্গরে চলে যেতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে সকালে জোয়ার চলার সময় চারটি জাহাজ বন্দরের জেটি ছেড়ে গেছে। এরপর ভাটা শুরু হওয়ায় বাকি জাহাজগুলো জেটিতেই অবস্থান করছে।
বন্দর সচিব বলেন, “জেটিতে মোট ২২টি জাহাজ ছিল। তারমধ্যে চারটি চলে গেছে। বাকি জাহাজগুলো পরের জোয়ারের সময় চলে যাবে। পরবর্তী জোয়ার শুরু হবে বিকাল ৪টায়।”
অন্যদিকে নদীর বন্দর সংলগ্ন এলাকা থাকা ছোট ও মাঝারি জাহাজগুলোকে উজানের দিকে সরে যেতে বলা হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তীরে চট্টগ্রাম বন্দরের উজানে সদরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু ও এর পরবর্তী এলাকায় সেসব জাহাজ অবস্থান নিতে শুরু করেছে।
বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, “যেসব ভারী যন্ত্র সরাতে হবে, সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে। আর যেগুলো বেঁধে রাখতে হবে সেগুলো বেঁধে রাখা হবে।
“দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে এবং চলবে। সংকেত ৫ এর উপরে উঠলে বন্দরের ‘এলার্ট-৩’ জারি করা হয়। আমরা সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
এলার্ট-৩ বন্দরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্ক সংকেত। আবহাওয়া অফিস ৮, ৯ বা ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত দেখাতে বললে তখন বন্দরের সর্বোচ্চ সতর্ক সংকেত এলার্ট -৪ জারি করা হয়।
এলার্ট-৩ জারি হলে বন্দরের জেটি থেকে সব জাহাজ সাগরে সরিয়ে নিতে হয়। পাশাপাশি বন্দরের যন্ত্রপাতি ও স্থাপনার সুরক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে 8৪৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
বুধবার দুপুরের দিকে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের আকারে হামুন ভোলার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
ঘূর্ণিবাড়ের প্রভাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সাগর। উপকূলীয় অঞ্চলে হালকা বৃষ্টি রয়েছে সোমবার থেকেই।
পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার বদলে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার বদলে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার বদলে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় সংকেত ব্যবস্থায় ৫, ৬ ও ৭ নম্বর বিপদ সংকেত মাত্রার দিক থেকে সমান, সংখ্যায় পার্থক্য হয় ঝড় বন্দরের কোন দিক দিয়ে যাবে তা বোঝানোর জন্য।