সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর মাধ্যমে বদলে যাবে চট্টগ্রাম নগরী; যান চলাচলের চাপ কমে বাড়বে গতি।
Published : 13 Nov 2023, 10:13 PM
সপ্তাহ দুই আগেই খুলেছে কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল; ওই পথ ধরে ছুটে চলা যানবাহন ও যাত্রীদের এবার আরও গতি এনে দিচ্ছে বন্দরনগরীর প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ভার্চুয়ালি এই এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) আরও দুটি সড়ক প্রকল্পও উদ্বোধন হবে।
এই তিন সড়কে এবার বদলে যাবে ব্যস্ত নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। চাপ কমবে শহরে।
এক্সপ্রেসওয়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এটি প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ।
বিমান বন্দর, পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম বন্দর, ইপিজেড ও আগ্রাবাদ এলাকা থেকে সহজে নগরীর কেন্দ্র পর্যন্ত আসা যাবে এই পথে।
তবে আপাতত এই পথ ধরে বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করে টাইগারপাস পর্যন্ত যাওয়া যাবে। পুরো কাজ শেষ না হওয়ায় টাইগারপাস থেকে গাড়ি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে পারবে না। অপরদিকে কোনো র্যাম্প না থাকায় মাঝ পথেও নামার সুযোগ থাকছে না।
সিডিএ’র আরও যে দুটি সড়ক উদ্বোধন হবে তার একটি হল- নগরীর সিরাজউদ্দৌলা রোড থেকে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক পর্যন্ত বাকলিয়া সংযোগ সড়ক, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘জানে আলম দোভাষ সড়ক’।
অন্যটি হল বায়েজিদ থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সংযোগকারী বায়েজিদ লিংক রোড, যেটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সড়ক’। এ দুটি সড়কে ইতিমধ্যে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।
নতুন চালু হওয়া কর্ণফুলীর তলদেশের টানেল ব্যবহার করে আনোয়ারা, বাঁশখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও কক্সবাজার থেকে আসা পণ্যবাহী যানবাহন ও যাত্রীরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ধরে দ্রুততম সময়ে নগরীর কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারবে। তবে এর জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ১৪টি র্যাম্প চালু হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সেই কাজ আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সিডিএ।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মঙ্গলবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাকলিয়া এক্সেস সড়ক ও বায়েজিদ লিংক রোডের উদ্বোধন করবেন। এসব সড়কের কারণে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছা যাবে।
“কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে একে অন্যের পরিপূরক। দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে যেসব যানবাহন টানেল ব্যবহার করে নগরীতে আসবে, তারা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে শহরে প্রবেশ করতে পারবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পুরোদমে চালু হলে নগরীর ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে।”
তার কথায়, “এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ধরে পতেঙ্গা থেকে গাড়ি এসে টাইগারপাসে নামতে পারবে। তবে টাইগারপাস থেকে উঠতে পারবে না। লালখান বাজার পর্যন্ত অংশের কাজ আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে কাজ করছি। সেটা শেষ হলে লালখান বাজার থেকে গাড়ি ওঠানামা করতে পারবে।”
এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ১৪টির র্যাম্পের মধ্য জিইসি মোড়ে একটি, টাইগারপাসে দুটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেডে দুটি এবং কেইপিজেড এলাকায় দুটি র্যাম্প থাকবে।
আগ্রাবাদ এলাকার চারটি র্যাম্পের মধ্যে জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর সড়কে একটি, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার সড়কে একটি এবং আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কে হবে দুটি র্যাম্প।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী শামস বলেন, “দুটি র্যাম্পের কাজ শুরু করেছি। আর বাকি ১২টি র্যাম্পের জন্য টেন্ডার হয়েছে। গত সপ্তাহে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির সভায় অনুমোদন হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। আশা করছি আগামী জুনের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে।”
এক্সপ্রেসওয়ে বাদে আরও যে দুটি সড়ক উদ্বোধন হবে সেটি খুলে গেছে আগেই, সুফলও পাচ্ছে মানুষ।
এর মধ্যে ২১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেনের দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ বাকলিয়া সংযোগ সড়কটি নগরীর মধ্য ভাগের সঙ্গে দক্ষিণ অংশকে যুক্ত করেছে।
নগরীর সিরাজউদ্দৌলা সড়ক থেকে শাহ আমানত সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত এই সড়ক নির্মাণে সাত বছর সময় লেগেছে। তিন বছরে শেষ করার কথা থাকলেও একটি বহুতল ভবন নিয়ে মামলা আদালতে গড়ালে এই সড়কের কাজ শেষ করতে এত বেশি সময় লাগে।
সড়কটি নগরীর চন্দনপুরা ফায়ার স্টেশনের কাছ থেকে বাকলিয়ার ডিসি রোড, বগার বিল, মৌসুমি আবাসিক ও সৈয়দ শাহ রোড এলাকার উপর দিয়ে কালামিয়া বাজারে গিয়ে শেষ হয়েছে।
এই সড়ক ব্যবহার করে শহরের কেন্দ্র থেকে অল্প সময়ে শাহ আমানত সেতুতে পৌঁছানো যাবে। নগরীর চকবাজার ও বহদ্দারহাট এলাকার যানজট এড়ানো তাতে সম্ভব হবে। একইভাবে শাহ আমানত সেতু ধরে কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে আসা যানবহান দ্রুত নগরীতে প্রবেশ করতে পারবে।
আর বায়েজিদ বোস্তামি এলাকা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট পুলিশ বক্স পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩৫৩ কোটি টাকা।
২০১৬ সালের জুনে ১৭২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার এই লিংক রোড প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতে দুই লেইনের সড়ক করার কথা থাকলেও ২০১৬ সালের অক্টোবরে সড়কটি চার লেইনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়। এতে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৩২০ কোটি টাকা। পরে খরচ আরও বাড়ে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ওই সড়কটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি।
এই সড়ক ধরে কাপ্তাই, রাঙামাটি, হাটহাজারী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া থেকে আসা যানবাহন নগরীতে প্রবেশ না করে সরাসরি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠতে পারছে। একইভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে আসা যানবহান নগরীতে প্রবেশ না করে বায়েজিদ পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে।
এই তিন সড়ক প্রকল্পে মোট ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা।