বিদায়ী ইনিংসেও ম্যাচ জেতানো ব্যাটিং করলেন ডেভিড ওয়ার্নার, অস্ট্রেলিয়াতে টানা ১৭ টেস্টে হেরে অব্যাহত থাকল পাকিস্তানের হতাশার ধারা।
Published : 06 Jan 2024, 09:54 AM
রূপকথার মতোই বিদায়ের মঞ্চ ছিল প্রস্তুত। ডেভিড ওয়ার্নার তা প্রায় করেও ফেলেছিলেন। কিন্তু অল্পর জন্য হলো না। দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফিরতে পারলেন না বিদায়ী নায়ক। তবে ক্যারিয়ারজুড়ে যা ছিল তার ব্যাটিংয়ের প্রতিশব্দ, তা করতে পারলেন পুরোপুরি। বিনোদন খোরাক জোগালেন, দাপুটে ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষের আশা মাড়িয়ে দলকে নিয়ে গেলেন জয়ের কাছে। টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসেও দেখা গেল সেই চেনা ওয়ার্নারকে।
তার দলও আবির্ভুত হলো চেনা রূপেই। সিডনি টেস্টে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে গুঁড়িয়ে হোয়াইটওয়াশ অভিযান সম্পন্ন করল অস্ট্রেলিয়া। নিজের স্ট্রোকসমৃদ্ধ ফিফটির সঙ্গে দলের জয়ে শেষটা রঙিন হলো ওয়ার্নারের।
আগের দিনই জয়ের পথ অনেকটা তৈরি করে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। চতুর্থ দিনে শনিবার পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংস থামায় তারা ১১৫ রানে।
এরপর ১৩০ রানের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে যায় ওভারপ্রতি পাঁচের বেশি রান তুলে। ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে ৭৫ বলে ৫৭ রান করেন ওয়ার্নার। সাজিদ খানের বলে আউট হয়ে যখন তিনি ফেরেন, জয় থেকে স্রেফ তখন ১১ রান দূরে অস্ট্রেলিয়া। অপরাজিত ৬২ রানের ইনিংস খেলে জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন মার্নাস লাবুশেন।
চতুর্থ দিন লাঞ্চের পরপর ম্যাচ শেষ হলেও অস্ট্রেলিয়া কার্যত জিতে গেছে তিন দিনেই। দ্বিতীয় দিনে তো বৃষ্টির কারণে অর্ধেক খেলা হতেই পারেনি!
অস্ট্রেলিয়াতে পাকিস্তানের পরাজয়ের ধারাও অব্যাহত থাকল এই হারে। সেই ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে মুশতাক আহমেদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে তারা সবশেষ জয়টি পেয়েছিল এই সিডনিতেই। এরপর গত ২৮ বছরের বেশি সময় ধরে তারা হারল টানা ১৭ টেস্টে। টেস্ট ইতিহাসেই আর কোনো দল কোনো দেশে টানা এত ম্যাচ হারেনি।
প্রথম ইনিংসে লিড পেলেও তৃতীয় দিন বিকেলেই ব্যাটিং ব্যর্থতায় আরেকটি পরাজয়ের প্রেক্ষাপট তৈরি করে পাকিস্তান। চতুর্থ দিন তারা শুরু করে ৭ উইকেটে ৬৮ রান নিয়ে। দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ান ও আমের জামাল সকালে অনেকটা সময় লড়াই চালিয়ে যান। দলের রান পেরিয়ে যায় একশ।
তবে অস্ট্রেলিয়া ধৈর্য হারায়নি। পরিকল্পনা সাজিয়ে ন্যাথান লায়নকে এক প্রান্ত থেকে টানা বোলিং করানো হয়। ফল মেলে তাতে। রাউন্ড দা উইকেটে করা ডেলিভারিতে লেগ স্লিপের ফাঁদে ধরা পড়েন ২৮ রান করা রিজওয়ান।
পরের ওভারেই প্যাট কামিন্সকে পুল করে জামাল বিদায় নেন ১৮ রানে। শেষ উইকেট নিতেও সময় লাগেনি লায়নের। ঝুলিয়ে দেওয়া টার্নিং বলে তিনি বোল্ড করে দেন হাসান আলিকে।
রান তাড়ায় প্রথম ওভারেই অফ স্পিনার সাজিদ খান বিদায় করে দেন উসমান খাওয়াজাকে। তবে নাটকীয় কিছু হতে দেননি ওয়ার্নার ও লাবুশেন। দুই পাশ থেকেই স্ট্রোকের মহড়া চলতে থাকে। অস্ট্রেলিয়ার রানও ছুটতে থাকে।
দৃষ্টি সবার ছিল মূলত ওয়ার্নারের দিকেই। তার প্রতিটি শটেই ছিল বাড়তি করতালি ও হর্ষধ্বনি। স্বভাবজাত ব্যাটিংয়েই তিনি ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন ৫৬ বলে।
লাঞ্চের পরপর সাজিদের বলেই পরাস্ত হন ওয়ার্নার। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে সফল হয় পাকিস্তান।
লাবুশেন শেষবারের মতো মাঠে জড়িয়ে ধরেন ওয়ার্নারকে। প্রতিপক্ষের ক্রিকেটাররাও সবাই এসে হাত মেলান, পিঠ চাপড়ে দেন তাকে। প্রায় ২৫ হাজার দর্শকের তুমুল করতালির মধ্যে সাদা পোশাকে শেষবারের মতো মাঠ ছাড়েন ওয়ার্নার।
স্টিভেন স্মিথ গিয়ে প্রথম বলেই মারেন বাউন্ডারি। পরের ওভারেই জয় নিশ্চিত করে ফেলেন লাবুশেন। ৯ চারে ৭৩ বলে ৬২ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি।
অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচের সেরা আমের জামাল, সিরিজে ১৯ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দা সিরিজ প্যাট কামিন্স।
তবে শেষের নায়ক তিনিই, ক্যারিয়ারজুড়ে যিনি অস্ট্রেলিয়ার অনেক জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন- ডেভিড অ্যান্ড্রু ওয়ার্নার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৩১৩
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ২৯৯
পাকিস্তান ২য় ইনিংস: (আগের দিন ৬৮/৭) ৪৩.১ ওভারে ১১৫ (রিজওয়ান ২৮, জামাল ১৮, হাসান ৫, হামজা ১*; স্টার্ক ৪-১-১৫-১, হেইজেলউড ৯-২-১৬-৪, কামিন্স ৭-০-২৪-১, লায়ন ১৭.১-২-৩৬-৩, হেড ৬-১-১৯-১)।
অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ১৩০) ২৫.৫ ওভারে ১৩০/২ (খাওয়াজা ০, ওয়ার্নার ৫৭, লাবুশেন ৬২*, স্মিথ ৪*; সাজিদ ১১-১-৪৯-২, হামজা ২-০-৯-০, হাসান ৪-০-১৫-০, সালমান ৫-০-২৮-০, জামাল ৩.৫-০-২২-০)।
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: আমের জামাল
ম্যান অব দা সিরিজ: প্যাট কামিন্স।