মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরির জবাবে শতক ছোঁয়া ইনিংস খেললেন মুশফিকুর রহিমও, তবে জিততে পারেনি তার দল।
Published : 15 Apr 2024, 07:05 PM
আঙুলের চোট সেরে প্রায় এক মাস পর ফিরেই তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া পেলেন মুশফিকুর রহিম। এতে অবশ্য ব্যক্তিগত অর্জনের পাল্লাই ভারী হলো তার। মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরিতে যে রান পাহাড় গড়ল আবাহনী লিমিটেড, তা টপকাতে পারেনি প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ৯ রাউন্ডে সব মিলিয়ে সেঞ্চুরি হয় স্রেফ ১১টি। ঈদ-উল-ফিতরের বিরতির পর দশম রাউন্ডের প্রথম দিনই তিন অঙ্ক ছুঁলেন চার ব্যাটসম্যান। এর মধ্যে তিনটিই আবাহনী ও প্রাইম ব্যাংকের ম্যাচে।
নাঈম ও শান্তর সেঞ্চুরির সৌজন্যে প্রাইম ব্যাংককে ৫৮ রানে হারায় আবাহনী। মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার ৩৪২ রানের লক্ষ্যে মুশফিক শতরান করলেও বাকিদের ব্যর্থতায় ২৮৩ রানে গুটিয়ে যায় প্রাইম ব্যাংক।
চলতি লিগে টানা দশ ম্যাচ জিতল আবাহনী। সুপার লিগ শুরুর আগেই শিরোপা ধরে রাখার কাজ অনেকটা এগিয়ে রাখল টেবিলের শীর্ষে থাকা ক্লাবটি। সমান ম্যাচে ছয় জয়ে পাঁচ নম্বরে প্রাইম ব্যাংক। সবশেষ পরাজয়ে অনেকটাই ফিকে হয়ে গেল তাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা।
নবম রাউন্ডে এবারের লিগে প্রথম খেলতে নামেন শান্ত। ছোট লক্ষ্যে সেদিন ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি জাতীয় দলের অধিনায়ককে। এবার প্রথম ব্যাটিংয়ে নেমেই তিনি খেলেন ৮৫ বলে ১১৮ রানের ঝড়ো ইনিংস। সঙ্গে বল হাতেও ১ উইকেট নিয়ে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
গত বছরের লিগে সর্বোচ্চ রান করা নাঈম এবার দশম ম্যাচে করেন নিজের প্রথম সেঞ্চুরি। প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে ৬৯ রানে আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে রক্ষা পাওয়ার পর তিনি থামেন ১০৪ বলে ১০৫ রান করে। আগের ৯ ম্যাচে খেলেন তিনটি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে আঙুলের চোট পাওয়া মুশফিক এই ম্যাচ দিয়ে ফেরেন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে। পাঁচ নম্বরে নেমে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ১০৫ বলে ১১১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। কিন্তু বিফলে যায় তার সেঞ্চুরি।
রান তাড়ায় পঞ্চাশের আগেই ড্রেসিং রুমে ফেরেন তামিম ইকবাল, জাকির হাসান ও শাহাদাত হোসেন। দ্বিতীয় ওভারে তামিমের পর ষষ্ঠ ওভারে জাকিরকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। দারুণ ডেলিভারিতে শাহাদাতকে বোল্ড করেন তানজিম।
চতুর্থ উইকেটে পারভেজ হোসেনের সঙ্গে ৭৩ রানের জুটি গড়ে তোলেন মুশফিক। দারুণ ছন্দে থাকা পারভেজ করেন চলতি লিগে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি। এর সঙ্গে তিনটি সেঞ্চুরি আছে তার।
মোসাদ্দেক হোসেনের বলে সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৭০ বলে ৫৬ রান করা পারভেজ। এরপর আর কোনো ব্যাটসম্যান তেমন সঙ্গ দিতে পারেননি মুশফিককে।
অলক কাপালি, শেখ মেহেদি হাসানরা ছোট ছোট ইনিংস খেললেও তা দলের জন্য যথেষ্ট ছিল না।
অনেক দিন পর মাঠে ফেরা মুশফিক ৪৭ বলে করেন ফিফটি। পরে লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের পঞ্চদশ সেঞ্চুরিতে পৌঁছতে তিনি খেলেন আরও ৪৯ বল। অপরাজিত ইনিংসে ১৪টি চার মারেন ৩৬ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান।
শেষ দিকে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ২৪ বলে ৩৪ রান করেন হাসান মাহমুদ। নবম উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে তার জুটিতে আসে ৩৩ বলে ৪০ রান। যা স্রেফ পরাজয়ের ব্যবধানই কমায়।
আবাহনীর হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন তাসকিন ও তানজিম।
দিনের শুরুতে টস জিতে ফিল্ডিং নেয় প্রাইম ব্যাংক। উদ্বোধনী জুটিতে আবাহনীকে দারুণ শুরু এনে দেন নাঈম ও এনামুল হক। দুজন মিলে যোগ করেন ১১০ রান। ২১তম ওভারে রান আউটে ভাঙে এই জুটি। ৭৩ বলে ৪৫ রান করেন এনামুল।
শুরুর ছন্দ ধরে রেখে দলকে আরও এগিয়ে নেন নাঈম ও শান্ত। দ্বিতীয় উইকেটে দুজন গড়ে তোলেন ৮৯ রানের জুটি। দলীয় দুইশ পূর্ণ হওয়ার আগে লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অষ্টম সেঞ্চুরি করা নাঈম।
তার বিরুদ্ধে একটি এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত নিয়ে অবশ্য বিতর্ক হয় আরও আগেই। ২৮তম ওভারে মোহাম্মদ মিঠুনের প্রথম বল ব্যাটে লাগাতে পারেননি নাঈম। বল পেছনের পায়ে আঘাত করতেই হয় জোরাল আবেদন। তাতে সাড়া দেননি আম্পায়ার।
এই সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি প্রাইম ব্যাংকের ক্রিকেটাররা। আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে আসেন তামিম ইকবাল। বোলিং প্রান্তের ক্রিজের কাছে জড়ো হন দলের বাকি ক্রিকেটাররা। দুই দলের ডাগ আউটের কাছে দেখা যায় কোচ-কর্মকর্তাদের।
এই ঘটনায় প্রায় সাড়ে ৪ মিনিট বন্ধ থাকে খেলা। আম্পায়ারদের সঙ্গে তামিমের আলোচনা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে তার পিঠ চাপড়ে কিছু বলতে দেখা যায় আম্পায়ারদের। একটু পর শুরু হয় খেলা।
এরপর আরও এগিয়ে গিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন নাঈম। ১০ চারের সঙ্গে ২ ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান তিনি।
নাঈমের বিদায়ের পর ভিন্ন রূপে আবির্ভূত হন শান্ত। ৫৬ বলে ফিফটি করা আবাহনী অধিনায়ক পরের পঞ্চাশ করেন স্রেফ ২১ বলে। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন চার নম্বরে নামা হৃদয়। তৃতীয় উইকেটে স্রেফ ৬২ বলে ১২৩ রান যোগ করেন তারা।
৪৯তম ওভারে হাসানের ইয়র্কারে থামে শান্তর ১৩ চার ও ৪ ছক্কার ইনিংস। হৃদয়কে থামাতে পারেননি প্রাইম ব্যাংকের বোলাররা। ৩৫ বলে ৬৫ রানের অপরাজিত ইনিংসে ২ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা মারেন তরুণ ব্যাটসম্যান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আবাহনী লিমিটেড: ৫০ ওভারে ৩৪১/৪ (এনামুল ৪৫, নাঈম ১০৫, শান্ত ১১৮, হৃদয় ৬৫*, আফিফ ০, জাকের ১*; হাসান ১০-১-৭৬-২, রাজা ৭-১-৭৬-১, মেহেদি ১০-০-৪৯-০, নাজমুল ৮-০-৪৯-০, অলক ১০-০-৬১-০, মিঠুন ৫-০-২৬-০)
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৪৯.৪ ওভারে ২৮৩ (তামিম ১, পারভেজ ৫৬, জাকির ৮, শাহাদাত ১২, মুশফিক ১১১*, অলক ২৫, নাজমুল ১, হাসান ৩৪, রাজা ০; শরিফুল ৭-০-৫১-০, তাসকিন ১০-১-৪৬-৩, তানজিম ১০-১-৪৪-৪, সাইফ উদ্দিন ৬-০-৪৯-০, মোসাদ্দেক ১০-০-৫০-২, আফিফ ৩.৪-০-২৯-১, শান্ত ৩-০-১৩-১)
ফল: আবাহনী লিমিটেড ৫৮ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাজমুল হোসেন শান্ত