এই দুই ব্যাটসম্যানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর স্পিনারদের দারুণ বোলিংয়ে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ২-০তে এগিয়ে গেল ক্যারিবিয়ানরা।
Published : 15 Dec 2023, 09:55 AM
উদ্বোধনী জুটি তো ভালোই হলো। এরপরই বিপদে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১১ রানের মধ্যেই নেই তাদের ৪ উইকেট! সেই নড়বড়ে অবস্থা থেকে তারা শক্ত অবস্থানের পৌঁছে গেল চেনা পথেই। ব্র্যান্ডন কিং ও রভম্যান পাওয়েল দেখালেন তাদের পেশির জোর। দুজনের ব্যাট থেকে এলো ১০টি ছক্কা আর দুর্দান্ত দুটি ইনিংস। তাতে যে উচ্চতায় উঠল ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর, সেখানে পৌঁছতে পারল না ইংল্যান্ড।
পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয়টিতে ইংল্যান্ডকে ১০ রানে হারিয়ে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
গ্রেনাডায় বৃহস্পতিবার ক্যারিবিয়ানরা ২০ ওভারে তোলে ১৭৬ রান। রান তাড়ায় ইংলিশরা যেতে পারে ১৬৬ পর্যন্ত।
জয়-পরাজয়ের ব্যবধান মাত্র ১০ রানের হলেও আদতে ম্যাচ এতটা উত্তেজনাময় ছিল না। ইংল্যান্ড লড়াই থেকে ছিটকে গিয়েছিল ম্যাচ শেষের কিছুটা আগেই। শেষ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল ২৮ রানের। আন্দ্রে রাসেলের শেষ ওভারে মইন আলির ছক্কা আর শেষ দুই বলে রেহান আহমেদের ছক্কা ও চারে কমে যায় ব্যবধান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের মেরুদন্ড ছিল কিংয়ের ৫২ বলে ৮২ রানের ইনিংস। ওপেন করতে নেমে পুরো ২০ ওভার খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি ৮ চার ও ৫ ছক্কার ইনিংসে। বিপর্যয়ের মধ্যে নেমে ৩ চার ও ৫ ছক্কায় ২৮ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলেন অধিনায়ক পাওয়েল।
বোলিংয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ক্যারিবিয়ানদের সফলতম বোলার আলজারি জোসেফ। তবে ৮ ওভারে স্রেফ ৩৩ রান দিয়ে বড় পার্থক্য গড়ে দেন দুই বাঁহাতি স্পিনার। নতুন বল হাতে নেওয়া আকিল হোসেন ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অভিষেকের দুই বছর পর দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলতে নামা গুডাকেশ মোটি ১ উইকেট নিলেও ৪ ওভারে রান দেন কেবল ৯!
গ্রেনাডার ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে টস জিতে ক্যারিবিয়ানদের ব্যাটিংয়ে পাঠান ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার। নিস্তরঙ্গ প্রথম দুই ওভারের পর খেলার চিত্র পাল্টে দেন কিং। ম্যাচের তৃতীয় ওভারে দুটি ছক্কা মারেন তিনি মইন আলিকে। পরের ওভারে ক্রিস ওকসকে টানা দুটি বাউন্ডারি মারেন কাইল মেয়ার্স।
মেয়ার্স পরে ওকসকে ছক্কাও মারেন ফুল টস পেয়ে। তবে আউটও হন তিনি সেই ওভারেই। অফ কাটারে বিদায় নেন তিনি ১৭ রান করে। উদ্বোধনী জুটি থামে ৪৩ রানে।
নিকোলাস পুরান তিনে নেমে শুরু করেন প্রথম বলে চার মেরে। এরপরই ইংল্যান্ডের তুই লেগ স্পিনারের যৌথ আক্রমণে একের পর এক উইকেটের পতন। আগের ম্যাচের মতোই প্রথম ওভারেই উইকেটের দেখা পান আদিল রাশিদ। অভিজ্ঞ স্পিনার নিজের পরপর দুই ওভারে ফিরিয়ে দেন বিপজ্জনক দুই নিকোলাস পুরান ও শিমরন হেটমায়ারকে। এই দুই উইকেটের মধ্যে তরুণ রেহানের শিকার হন শেই হোপ।
৯ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৪ উকেটে ৫৫।
কিং ও পাওয়েলের জুটির শুরু সেখান থেকেই। তিন ওভার একটু দেখে খেলে এরপর বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন দুজনই। রেহানের এক ওভারে দুই ছক্কা ও এক চারে ৩৪ বলে ফিফটিতে পৌঁছে যান কিং। টাইমাল মিলসকে টানা দুই বলে চার-ছক্কা মারেন পাওয়েল।
এরপর পাওয়েল পেয়ে বসেন স্যাম কারানকে। বাঁহাহি পেসারের ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারির পর ছক্কা মারেন টানা চার বলে! ২৭ বলেই পা রাখেন ফিফটিতে।
ওই ওভারের শেষ বলে আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় আউট হয়ে যান পাওয়েল।
তবে দুটি ওয়াইডসহ ওভার থেকে আসে ৩০ রান। স্টুয়ার্ট ব্রডের সেই ৬ ছক্কার ওভারের পর এই সংস্করণে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে খরুচে ওভার এটিই।
পরের ওভারেই রেহানকে তিন চার এক ছক্কায় ১৮ রান নেন কিং। শেষ দিকে আন্দ্রে রাসেলের ব্যাট থেকে আসে দুটি ছক্কা। অপরাজিত থেকে যান কিং। শেষ ৫ ওভারে ক্যারিবিয়ানরা তোলে ৭২ রান।
রান তাড়ায় প্রথম ওভারে বাউন্ডারি দিয়ে শুরু করা বাটলার বিদায় নেন ৫ রান করেই। ফিল সল্ট ও উইল জ্যাকস পাল্টা আক্রমণে চেষ্টা করেন ঘুরে দাঁড়াতে। জেসন হোল্ডারকে টানা দুই বলে ছক্কা ও চার মারেন সল্ট। রাসেলকে ওভারে তিন চার মারেন জ্যাকস। পাওয়ার প্লেতে ইংল্যান্ড তোলে ৫১ রান।
দুজনকেই ইনিংস বড় করতে দেননি আলজারি জোসেফ। ২৫ রানে সল্ট বিদায় নেন পাওয়েলের দারুণ ক্যাচে। জ্যাকস করতে পারেন ২৪ রান।
দুই বাঁহাতি স্পিনার আকিল ও মোটিকে সামলাতে ব্যাটিং অর্ডারে বাঁহাতি কারানকে ওপরে তুলে আনে ইংল্যান্ড। কিন্তু দুই স্পিনারই দারুণ বোলিং করেন। কারান অবশ্য দলকে লড়াইয়ে রাখেন কিছুটা। রাসেলের ওভারে তার এক ছক্কার সঙ্গে লিয়াম লিভিংস্টোনের এক চার দুই ছক্কায় রান আসে ২২।
কিন্তু লিভিংস্টোন চালিয়ে যেতে পারেননি। ৯ বলে ১৭ রান করা ব্যাটসম্যানকে বিদায় করেন মোটি। টানা তিন ওভারে বাউন্ডারি না পেয়ে পিছিয়ে পড়ে ইংল্যান্ড।
কারান এরপরও চেষ্টা করে যান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি আগে কখনও ২৫ করতে না পারলেও এ দিন ফিফটি করেন তিনি ৩১ বলে। কিন্তু আউট হয়ে যান এরপরই। শেষ দিকে মইন আলির ১৩ বলে ২২ রান যথেষ্ট হয়নি। শেষ দুই বলে রেহানের দুটি শটে ব্যবধান কমে কিছুটা।
আন্দ্রে রাসেল ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের সব বোলারই ছিলেন কার্যকর। আগের ম্যাচে ১৯ রানে ৩ উইকেট নেওয়া অলরাউন্ডার এবার দেখেন উল্টো রূপ। ৪ ওভারে ৬৬ রান দিয়ে স্পর্শ করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের রেকর্ড। গত বছর ভারতের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৬৬ দিয়েছিলেন ওবেড ম্যাককয়। তবে সেই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হেরে গেলেও এবার ভুগতে হয়নি।
সিরিজের পরের ম্যাচও গ্রেনাডায়, শনিবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৭৬/৭ (কিং ৮২*, মেয়ার্স ১৭, পুরান ৫, হোপ ১, হেটমায়ার ২, পাওয়েল ৫০, রাসেল ১৪, হোল্ডার ০, মইন ২-০-১৫-০, ওকস ৪-০-৩৪-১, কারান ২-০-৩৮-১, রাশিদ ৪-০-১১-২, রেহান ৪-০-৪৭-১, মিলস ৪-০-৩০-২)।
ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৬৬/৭ (সল্ট ২৫, বাটলার ৫, জ্যাকস ২৪, কারান ৫০, লিভিংস্টোন ১৭, ব্রুক ৫, মইন ২২*, ওকস ২, রেহান ১০*; আকিল ৪-০-২৪-২, হোল্ডার ৪-০-২৭-১, রাসেল ৪-০-৬৬-০, মোটি ৪-০-৯-১, জোসেফ ৪-০-৩৯-৩)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: ব্র্যান্ডন কিং।