পূর্বাঞ্চল ৩৫০ পর্যন্ত যেতে পারে অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানের দারুণ সেঞ্চুরিতেই।
Published : 27 Dec 2022, 04:59 PM
লেগ স্টাম্পের প্রায় এক হাত বাইরের বল। চাইলেও সেই বলে আউট হওয়া কঠিন। কিন্তু ৪৩৪ মিনিট ক্রিজে থেকে জহুরুল ইসলাম সেই বলকেই বেছে নিলেন বিদায়ের জন্য। তার সুইপ করার চেষ্টায় বল ছুঁয়ে গেল গ্লাভস। উইকেটের পেছনে ইরফান শুক্কুরের পায়ে লেগে বল জমে গেল গ্লাভসে। এমন ডেলিভারিতে আউট হয়ে জহুরুল যেন নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
শেষটা আলগা শটে হলেও ইনিংসজুড়ে অমন শট খুব একটা খেলেননি জহুরুল। ফেরার সময় তাই তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছিল ২৯৪ বলে ১৪৫ রান। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের দারুণ ব্যাটিংয়ে বিসিএলের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে কক্সবাজারে ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল তোলে ৩৫০ রান।
বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল মঙ্গলবার দিন শেষ করে ২ উইকেটে ১৩৭ রান নিয়ে। জহুরুলের মতোই ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে ১৯৬ মিনিটে ৪৭ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেন ওপেনার পিনাক ঘোষ।
শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জহুরুল দিন শুরু করে শতরান থেকে ৯ রান দূরে। আগের দিনের আরেক অপরাজিত ব্যাটসম্যান নাঈম হাসান বিদায় নেন দিনের পঞ্চম ওভারেই।
একটু পরই জহুরুল পেয়ে যান কাঙ্ক্ষিত শতরানের দেখা। সুমন খানের বলে ফ্লিক করে মারা বাউন্ডারিতে পা রাখেন তিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সপ্তদশ সেঞ্চুরিতে।
আরেক প্রান্তে পেসার এনামুল হক ব্যাট হাতে দারুণ সঙ্গ দিতে থাকেন জহুরুলকে। গড়ে ওঠে অর্ধশত রানের জুটি। ২৮ রানে এনামুলকে ফিরিয়ে ৫৭ রানের এই জুটি ভাঙেন ফজলে মাহমুদ।
এরপর নাবিল সামাদকে নিয়ে আরেকটি জুটি গড়ার আভাস দেন জহুরুল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনোযোগে একটু ফাটল ধরে তার। আউট হয়ে যান নাজমুল ইসলাম অপুর ওই লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে। শেষ হয় তার ১৫ চার ও ২ ছক্কার ইনিংস।
ওই ওভারেই আরেকটি উইকেট নিয়ে ইনিংস শেষ করে দেন নাজমুল।
দক্ষিণাঞ্চলের ইনিংসের শুরুতে দুই ওপেনার আবির্ভুত হন দুই রূপে। পিনাক শুরু করেন সাবধানী ব্যাটিংয়ে, এনামুল হক বিজয় ছোটেন বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।
দ্বিতীয় ওভারে হোসেন আলির বলে বাউন্ডারির পর এনামুল দুটি ছক্কা মারেন পেসার এনামুলকে। প্রথমটি দুর্দান্ত এক ফ্লিকে, পরেরটি পুল শটে।
বাধ্য হয়ে ষষ্ঠ ওভারেই নাবিল সামাদের স্পিন আক্রমণে আনেন অধিনায়ক। এবারও দ্বিতীয় বলে কাট করে চার মারেন এনামুল। তবে অতিরিক্ত শট খেলতে চাওয়াই কাল হয় তার জন্য। ওই ওভারেই ইনসাইড আউট খেলার চেষ্টায় ক্যাচ দেন তিনি লং অফে। শেষ হয় ২১ বলে ২৬ রানের ইনিংস।
এনামুলের মতো তাড়াহুড়ো না করলেও দারুণ কয়েকটি শট খেলেন তিনে নামা অমিত হাসানও। কিন্তু তার শেষটাও এনামুলের মতো। ৬ চারে ৩৫ রান করার পর নাঈম হাসানের অফ স্পিনে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে চেষ্টা করেন লং অন দিয়ে মারতে। কিন্তু ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ যায় কাভারে।
পিনাক ঘোষ তখনও এক প্রান্ত আগলে আছেন নিজের মতো করেই। চারে নেমে অধিনায়ক ফজলে মাহমুদও সতর্কতায় আগলে রাখেন উইকেট। তাতে রানের গতি কমে এলেও গড়ে ওঠে জুটি। দিনশেষে দুই বাঁহাতির অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ২২.২ ওভারে ৫২।
১৩৭ বলে ৪৭ রানে অপরাজিত পিনাক, ৬৫ বলে ২৮ রানে ফজলে মাহমুদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল ১ম ইনিংস: ১১৭.৫ ওভারে ৩৫০ (আগের দিন ২৮২/৬) (নাঈম শেখ ২০, রনি ৯, পারভেজ ৯, শাহাদাত ৬০, জহুরুল ১৪৫, আশরাফুল ৪৯, রুবেল ১৫, নাঈম ৬, এনামুল ২৮, নাবিল ০*, হোসেন আলি ০; সুমন ২৫-৫-৭৭-৪, কাজী অনিক ১৫-০-৫৭-০, নাহিদুল ২৪-৩-৬৪-২, নাজমুল অপু ৩৬.৫-৫-৯৬-২, মইন ১২-০-৩৮-০, এনামুল ৪-০-১৩-০, ফজলে মাহমুদ ১-০-১-১)।
বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল ১ম ইনিংস: ৪৭ ওভারে ১৩৭/২ (পিনাক ৪৭*, এনামুল ২৬, অমিত ৩৫, ফজলে মাহমুদ ২৮*; এনামুল ১০-৩-২৮-০, হোসেন আলি ৫-১-৩০-০, নাবিল ১০-১-২৬-১, নাঈম ১৩-২-৩৩-১, আশরাফুল ৯-১-২০-০)।